Sonali Chakraborty-Shankar Chakraborty: যদি তনুবাবুর কথায় রাজি হত, রুনুর জীবনটাই বদলে যেত | Exclusive

'বাড়িটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম নেই। বারবার ওর মুখটা মনে পড়ছে। এই ঘর। জানলা। টেবিল। দেওয়ালের ছবি। সবেতেই ও...সবেতে। আমি যে কী করে কীভাবে...। আমি বুঝতে পারছি, কনসেন্ট্রেশেনের একটা সমস্যা হচ্ছে।'

Updated By: Nov 1, 2022, 09:52 PM IST
Sonali Chakraborty-Shankar Chakraborty: যদি তনুবাবুর কথায় রাজি হত, রুনুর জীবনটাই বদলে যেত | Exclusive

শঙ্কর চক্রবর্তী

কীভাবে যে শুরু করব... এখনও কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। পুরনো কিছু ছবি ঘাঁটতে-ঘাঁটতে সব মনে পড়ে যাচ্ছিল...কিছুক্ষণ আগে পিউ ফোন করেছিল। কত পুরনো কথা...কত পুরনো স্মৃতি...। আমরা রাশিয়া গেছিলাম। ‘পিএলটি’-র হয়ে। এইট্টি এইট। তখনও রাশিয়া হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরপর শো ছিল। মস্কো, আলমাডা, ইউক্রেন, আরও কত কত শহরে। *পিউ ফোন করার পর আমার মেয়ে সেই ছবিগুলো বের করল। সবাই আমাকে বলত, আমার নাকি রাজার মতো হাসি। তখন তোলা সেই ছবিগুলো দেখে মনে হল, এতগুলো বছর আমি বোধহয় ঠিকঠাক খেয়ালই করিনি *রুনুর হাসিটাকে। এমন হাসি যা সব ভুলিয়ে দিতে পারে। আজ দেখেছি সেই হাসিটাকে। অনেকক্ষণ।

রবীন্দ্রভারতীতে রুনুর সঙ্গে প্রথম আলাপ। ১২৫ তম রবীন্দ্রজয়ন্তী। ‘তাসের দেশ’ মঞ্চস্থ হবে। আমি সওদাগর পুত্রের স্ক্রিপ্ট পড়েছিলাম, আর গোলামের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তখন থেকে একটা ভাললাগা ছিল। একদিন এক সিনিয়র ডেকে বলল, ‘সোনালী, তোর প্রেমে পড়েছে’। আমি বললাম, যাত্তসব ফালতু কথা! পরে দেখলাম, না, কথাটা সত্যি। কিন্তু রুনু নিজের মুখে কখনও এই কথা আমাকে বলেনি। *অসিতদা ‘বীরপুরুষ’ নাটক করলেন। রুনু ওই নাটকে নেচেছিল। রবীন্দ্রসদনে রিহার্সাল চলাকালীন মাসিমাকে রুনু আমাকে দেখিয়ে বলেছিল ‘এই ছেলেটা না, আমাকে প্রোপোজ করেছে’। মাসিমা তো আমাকে দেখে বলল, ‘এই ছেলেটা! বাঁদরের মতো দেখতে...সে তোকে প্রোপোজ করেছে?’ অসিতদা বলেছিলেন, ‘কী বলছেন বম্মা, ওকে তো কেষ্ট ঠাকুরের মতো দেখতে!’

সব কেমন জানি মনে পড়ে যাচ্ছে...চোখ বন্ধ করছি আর হুট করে সব একের পর এক... আমার বাড়ির অবস্থা ভাল ছিল না। মা আর আমি। খড়দার বস্তিতে একচালা ঘর। চায়ের দোকানে কাজ করতাম। তারপর কারখানায় কাজ করি। তখন রুনু দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত পাড়ায় থাকে। ৩৪ নং মহানির্বাণ রোড। গড়িয়াহাট থেকে বাস ধরে আমার বাড়ি আসত। সব জানত, আমার ও কাজবাজের পরিস্থিতি, ঘরদোরের অবস্থা। সব দেখেটেখেও, কোনওদিন কোনও অভিযোগ করেনি। শুধু ভালবেসেছিল। রুনু নাচের টিউশানি করত। যা মাইনে পেত সব আমাকে দিয়ে দিত। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর...। ভীষণ ভাল নাচত রুনু। নৃত্যশিল্পী হয়েই যদি থাকত, বহুদূর যেত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ও নাচটাই ছেড়ে দিল। অভিনয় শুরু করল। অভিনয়টা ভালই করত, থিয়েটার হোক বা সিনেমা। যে কটা কাজ করেছে, তা দেখার মতো। কিন্তু কোনও ঠিকঠাক সুযোগ আসেনি ওর জীবনে। একবার এসেছিল। তরুণ মজুমদার ‘দাদার কীর্তি’ করার পর, ‘মেঘ মুক্তি’ বলে একটা ছবি করেছিলেন। তণুবাবু ওকেই নেবে ঠিক করেছিলেন। মাসিমার কাছে এসেছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। যদি হতেন হয়তো ওর জীবনটা বদলে যেত।

নব্বইয়ে বিয়ে হয় আমাদের। আর তারপর একে একে সুখবর আসতে থাকে আমাদের জীবনে। হঠাত্‍ করেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অশিক্ষক কর্মচারী হলাম। অক্টোবরে সিরিয়ালের শুটিং শুরু হল। ‘বিবাহ অভিযান’। আমার অভিনীত প্রথম বড় সিরিয়াল। সবই কিন্তু হল ওর সঙ্গে বিয়ের পর। লাকি চার্ম বলে কিছু যদি থেকে থাকে আমার জীবনে, সেটা ও...আর কেউ নয়। আমি ওকে সত্যিই ভালবাসতাম। ভীষণ ভাল। আমি এতটা ভাল কাউকে বাসিনি। মাঝেমাঝে বলত, ‘তুমি আমাকে ভালবাসো না? আগে তো বলতে ভালবাসো, আমাকে পাগলের মতো ভালবাসো?’ আমি ওকে বোঝাতে পারিনি। বলতে পারিনি। কেন বলতে পারিনি, জানি না। আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে। যতবার ও জিজ্ঞেস করবে। ততবারই বলতে ইচ্ছে করছে...তোমাকেই ভালবেসেছি।

বাড়িটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম নেই। বারবার ওর মুখটা মনে পড়ছে। এই ঘর। জানলা। টেবিল। দেওয়ালের ছবি। সবেতেই ও...সবেতে। আমি যে কী করে কীভাবে...। আমি বুঝতে পারছি, কনসেন্ট্রেশেনের একটা সমস্যা হচ্ছে। মেয়ে বলছে, ‘বাবা, আমরা তিনজন ছিলাম। এখন দু’জন। তোমার, আমাকে ছাড়া কেউ নেই। আমারও তাই।’ যতদিন ও কলকাতায় আছে, ততদিন মনে হয় একটু ঠিক থাকব। কিন্তু তারপর? জানুয়ারি মাসেই ওর মুম্বইতে ফিরে যাওয়া। মনে হচ্ছে, এই বাড়িতে আর থাকতে পারব না...কোনওভাবেই পারব না। একবার আমাকে রুনু বলেছিল, ‘দেখো, আমি চলে গেলেও আবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে, ঠিক দেখা হবে, আমরা আবার ভাল সময় কাটাব, নতুন করে।’ ফেসবুক খুললেই ওর মুখ যতবার দেখছি, মনে মনে বলছি, ওর কথা যেন সত্যি হয়...ঠাকুর ওর কথা যেন সত্যি হয়!

 

*পিউ, (বিষ্ণুপ্রিয়া দত্ত, উত্পল দত্তের মেয়ে)

**রুনু (সোনালী চক্রবর্তীকে এই নামেই ডাকতেন শঙ্কর চক্রবর্তী)

*অসিত চট্টোপাধ্যায়, (পন্ডিত উদয় শঙ্করের ছাত্র)

অনুলিখন: শুভঙ্কর চক্রবর্তী।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 

.