... হ্যাঁ খাই। তবে যেটুকু খাই তাতে নেশা হয় না

 মিথ্যেবাদী হলে যেমন কবিতা লেখা যায় না, তেমন মিথ্যা দিয়ে গানও হয় না।

Updated By: Jun 1, 2018, 03:55 PM IST
... হ্যাঁ খাই। তবে যেটুকু খাই তাতে নেশা হয় না
ছবি- প্রশান্ত কুমার সুরের ফেসবুক পেজ থেকে

রকবাজির জন্য নেশাসক্ত হওয়ার প্রয়োজন হয়? হ্যাঁ, ভীষণ প্রয়োজন হয়। তবে তা কেবলমাত্র গানের নেশা। মদ-গাঁজা খেয়ে শরীর দোলানো আর স্টেজে মাইক্রোফোন হাতে রকবাজি করা-দুটো সমান নয়। বরং, মদ-গাঁজা না খেলেই ‘মিউজিক্যাল ইনটক্সিকেশন’ হয়, মত বাংলা রকবাজির অন্যতম ‘রকবাজ’ রূপম ইসলামের।

তবে, ২ দশক রকবাজির বাংলা ঠেক শাসন করা ‘ফসিলস’-এর ‘প্রোটাগনিস্ট’-এর গাঁজা খাওয়ার অভিজ্ঞতা ভীষণ খারাপ। গান আর গাঁজা- রুপমের জীবনে একসঙ্গে এসেছে একবারই। আর সেটাই শেষবার। অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করে আর কখনই ‘গাঁজা সং’লেখেননি তিনি। আর হুইস্কি? আরও সাংঘাতিক!

রকবাজির জন্য ‘বিশুদ্ধ নেশা’কেই সর্বাধিকার দেন রূপম। জীবনের নৌকা অভিজ্ঞতার নদীতে যেভাবে হেলতে দুলতে এগিয়েছে, সেই সব সত্ অভিব্যক্তি গুলোই মাতাল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন বাংলার এই রক তারকা। আর রূপমের এইসব ‘সত্ অভিব্যক্তি’ প্রকাশ্যে এল এক ফেসবুক লাইভে।

প্রসঙ্গ ছিল, আগামী ১৭ জুন নজরুল মঞ্চে রূপম ইসলামের অনুষ্ঠান। ফসিলস্ নয়, একা রুপম। এমনিতে ফেসবুক আড্ডা হলেও আসলে নজরুল মঞ্চের ‘একক রুপম’-ই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

পরনে চিরাচরিত কালো টি-শার্ট, সাদা ফরমাল, 'অস্ত্র' (অ্যাকোয়াস্টিক গিটার) হাতে বসে ‘রকবাজ রূপম’। শুরুটাও হল ‘বিপ্লব’ দিয়েই। "মানুষের স্বাধীনতা চাই..." গানের সঙ্গেই হাটি হাটি পা পা চলেছে গান আর কথার 'সংহতি'। একদিকে রূপম আর অন্যদিকে ফেসবুক জনতার জমায়েত। প্রত্যাশিতভাবেই 'কমেন্ট থ্রেড'-এ একে একে ভেসে উঠছে গানের আবদার, আর সেসব মিটিয়েও চলেছেন রুপম। এরপরই আসতে শুরু করল প্রশ্নও। কথার মায়াজালও ইতিমধ্যেই বুনে ফেলেছেন 'রক তারকা'।

এরই মধ্যে আলোচনায় অনুপ্রবেশ করল কলকাতার ঠাকুরপুকুর বিবেকানন্দ কলেজের রক-কনসার্ট ইস্যু। সেখানকার বিশৃঙ্খল পরিবেশে সুশৃঙ্খল পারফরম্যান্স করেছিলেন দাবি করলেন গায়ক। বললেন, নিজেদের খেলায়াড়দের মতো বেঁধে রেখেছেন বলেই ফাটিয়ে রকবাজি করতে পেরেছেন। নেশা করেন না বলেই স্বচ্ছ পারফরম্যান্স দিতে পেরেছেন এবং আগামী দিনেও এই পথেই থাকবেন।

 

‘স্বচ্ছ মনন, লড়ুক আজাদির লড়াই’-স্বামী বিবেকানন্দের এই আপ্তবাক্যকে আধার করেই নেশামুক্ত রকবাজির পক্ষে আওয়াজ তুলছেন রূপম। ফেসবুক লাইভে এই আওয়াজ যখন আরও জোড়াল হচ্ছে, ঠিক সেই সময় কমেন্ট বক্সে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে ‘রূপম পক্ষ’ এবং বিপক্ষরা। এরপরই শুরু হয় রুপমকে লক্ষ্য করে বোমা বাজি। প্রীতম ভট্টাচার্য নামের এক দর্শকের প্রশ্ন, ‘বুকে হাত দিয়ে বলো, ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের রক কনসার্টে মদ খাওনি’?

এই প্রশ্নে প্রত্যয়ী রক তারকার সাফ জবাব- “বুকে হাত দিয়ে বলছি। বলো, আর কোথায় হাত রেখে বলতে হবে যে আমি মদ খাইনি”। অন্যরা যদি নেশা করে রকবাজি করেও থাকেন, সেটা যে তিনি পারবেন না, তাও অবলীলায় স্বীকার করেছেন বাংলা রকের এই সংগ্রামী যোদ্ধা। 

রূপম আপনি সত্যিই মদ খান না? এই প্রশ্ন দ্বিতীয়বার ওঠার আগেই ‘রকবাজি’ করা তারকা জানালেন- হ্যাঁ তিনি অল্পস্বল্প সুরাসক্ত। “পার্টি হলে এতটুকু (আকারে যা দেখালেন তা চরণামৃতের সমান) খাই। ওতে নেশা হয় না”, স্বীকারোক্তি রূপম ইসলামের। এরপর স্মৃতির সারণি বেয়ে ‘রকস্টার’ জানালেন, গাঁজা খেয়েও গান লিখেছেন তিনি। তবে ওটাই প্রথমবার এবং শেষবার। যে পথে লালন সাঁই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, সেই ধোঁয়ার পথে ‘ধাঁধা’ দেখেছেন রুপম।

তবে যে নেশা রক তারকার কাছে চিরকালীন তা হল 'মিউজিকের নেশা'। কথার 'হ্যালুসিনেশনে', চেতনায় ‘হ্যাল’ খেতে খেতে রক গায়ক অনায়াসেই পারি দিতে পারেন সাত সাগর আর তেরো নদী...বা তার থেকেও অনেকটা দূরে।

সবশেষে রূপমের বাণী, নিঃশ্বাস ঝড় হতে পারে! হতে পারে কালবৈশাখীও! যদি তা সত্ হয়। মিথ্যেবাদী হলে যেমন কবিতা লেখা যায় না, তেমন মিথ্যা দিয়ে গানও হয় না। মোটের উপর এখানেই থামল ‘ঘণ্টা খানেকের রুপম আড্ডা’। কিন্তু, আপাতভাবে এই আসর থামলেও, বিতর্কে আর সমর্থনে কার্যত জারি রইল 'রকবাজি'র দাবানল। ফেসবুকের সাম্প্রতিক মতিগতি অনুযায়ী যাকে ২ লাইনে বলা যায়-  

-তুমি বললে ‘নেশা’

-আমি শুনলাম রূপম ইসলাম       

.