ভূতের ভবিষ্যত অন্ধকার
ছবি দেখে বেরিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ভাল করে মুখটা দেখলাম। ওফ, যে তীরগতিতে কাঁচের টুকরো ইঁট, ভাঙা গ্লাস, ভূতের চাঁটি আর আরশোলা সাঁইসাঁই করে উড়ে আসছিল, তাতে অক্ষতশরীরে বাড়ি পৌঁছতে পারব বলে ভাবিনি! বিক্রম ভট্ট এই প্রথম পুরোদস্তুর থ্রি-ডি ছবি বানালেন। খেটেছেন এটা স্পষ্ট। কিন্তু একই গল্পের কাঠামোয় মাটি চাপিয়ে আর কাঁহাতক চালানো যায়!
ফের একবার রাজ নিয়ে হাজির ভট্ট ক্যাম্প। বারবার তিনবার সিনেমার পর্দায় রাজ। কেমন হল এই ছবি। তাই নিয়েই লিখেছেন ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি শর্মিলা মাইতি।
ছবির নাম: রাজ-থ্রি
পরিচালক: বিক্রম ভট্ট
অভিনয়ে: বিপাশা বসু, ইমরান হাশমি, এষা গুপ্তা
রেটিং: 4/10
ছবি দেখে বেরিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ভাল করে মুখটা দেখলাম। ওফ, যে তীরগতিতে কাঁচের টুকরো ইঁট, ভাঙা গ্লাস, ভূতের চাঁটি আর আরশোলা সাঁইসাঁই করে উড়ে আসছিল, তাতে অক্ষতশরীরে বাড়ি পৌঁছতে পারব বলে ভাবিনি! বিক্রম ভট্ট এই প্রথম পুরোদস্তুর থ্রি-ডি ছবি বানালেন। খেটেছেন এটা স্পষ্ট। কিন্তু একই গল্পের কাঠামোয় মাটি চাপিয়ে আর কাঁহাতক চালানো যায়! বিখ্যাত ছবির সিকোয়েল বানানোর একটাই সুবিধে, দর্শকের স্মৃতিটায় আর একবার মহড়া দেওয়া হয়ে যায়। কিন্তু তিন নম্বর ছবিতে বাস্তবিকই নতুনত্ব আনা বেশ শক্ত। মনে হয়, ওয়ান-টু-কা-ফোর-ফোর-টু-কা-ওয়ান-এর চক্করে না পড়ে, ভাট ক্যাম্পের অবিলম্বে একটা ফ্রেশ স্টার্ট নেওয়া দরকার।
যাই হোক। রাজ থ্রি-তে আমরা ভূত দেখলাম ইংরিজি হরর ছবির মতো। টেকনিক আর গ্রাফিক্স প্রশংসার্হ। বেশ ভবিষ্যতের ভূত। থ্রি-ডায়মেনশন্যাল। কিন্তু এই ভূতের কোনও ভবিষ্যত্ আছে বলে মনে হয় না। চালু সংলাপ, মন্ত্রতন্ত্র ভার্সাস মেডিক্যাল সায়েন্স, এক্সরসিস্ট মমি সিরিজের ছবির নকলে বানানো সেট, সব মিলিয়ে মৌলিকতার ছাপ বেশ কম। ভয়ের বদলে হাসিই পায় বেশি।
বিপাশা বসু পোস্টার থেকেই প্রত্যাশায় ফুঁ দিয়েছেন। ঈর্ষা, রহস্য আর শরীরের গন্ধ মেশানো হাতছানি। নারী মাত্রেই প্রকৃতি, প্রকৃতি অর্থে সবুজ, এবং সেই কারণেই ঈর্ষায় সবুজ হওয়া সহজাত নারীপ্রবৃত্তি। একজনের সাকসেস দেখলে ঈর্ষায় মরো-মরো হয় অন্যজনা। বাস্তব, উপন্যাস ও পরদায় এর উদাহরণের কমতি নেই! সেই রেসিপিই এ-ছবির গল্পের মশলা। কিন্তু এত বেশিমাত্রায় ফোড়ন দেওয়া হয়েছে যে বেশ তিতকুটিয়ে গিয়েছে।
থ্রি-ডি সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে তাঁরা জানেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ছোঁয়া যায় যেন নাগালের মধ্যে, রক্তমাংসের অনুভূতিতে। স্বল্পবসনা বিপাশা বসুর পোশাক অপসারণের দৃশ্য কিংবা কোটি কোটি আরশোলা-ভূতের অত্যাচারে এষা গুপ্তার সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যাওয়ার প্রায় সাত মিনিটের দৃশ্যটি প্রায় ‘বাস্তব’ মনে হয়। এতটাই যে, ভাববার কথা, ভবিষ্যতে যদি সব ছবিই থ্রি-ডি হয়, তবে কেমন দাঁড়াবে দর্শকের অনুভূতির কাঠামোটা? আশঙ্কা, টু-ডির ঘনিষ্ঠদৃশ্য কিংবা সেমি-ক্ল্যাড নায়িকারও যে অধরা মাধুরী থাকত, সেটার লেশমাত্র থাকবে তো? অপস্রিয়মান পোশাকের মতো বিপসের স্টার ভ্যালু-ও এই অবস্থায় বেশ অস্বস্তির সম্মুখীন। বিপসের কেরিয়ারে এখন ইমেজ মেক-ওভার চাই। ঢাকাঢুকির পোশাক পরার টাইম এসে গিয়েছে। এষা গুপ্তা এক কথায় রক্তশূন্য। কখনও ভূত দেখে ভয়ে, কখনও অভিব্যক্তির দাবি নেই এমন সংলাপ আউড়ে।
বাকি রইল হারাধন, সরি, ইমরান। তিনি এ ছবিতেও নিজের ফর্ম ধরে রেখেছেন। দুই নায়িকাকেই আশ মিটিয়ে ফরাসি কিস করেছেন। তবে দুই ললনার চাপে স্যান্ডউইচ হয়ে, অভিনয় করার মতো সংলাপও পাননি বেচারা! এ ছবিটা ভূতুড়ে স্বপ্ন বলেই কেরিয়ার-কার্ড থেকে ওয়াইপ-আউট করে দেওয়াই সমীচীন।
আশাহত হয়ে অনেক কথাই তো লিখলাম। অবিশ্বাস্যভাবে এই ছবির সাউন্ড ডিজাইনিং বিশ্বমানের ছবিকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সংলাপ, অভিনয়, সেট, গ্রাফিক্স যেটা পারেনি, শব্দের ব্ল্যাক ম্যাজিক সেটা পারে কিনা দেখা যাক।