Lata Mangeshkar Passes Away: বাংলা গানের চৌধুরী-বাড়িতেই কি মঙ্গেশকর-ম্যাজিকের চূড়ান্ত?
সলিল চৌধুরী যখন লতাকে ভেবে গান বাঁধতেন তখন তাঁর সামনে থাকত সম্ভাবনার অপার দিগন্ত!
সৌমিত্র সেন
'প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে'। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর। ঐতিহাসিক ভাবে লতা মঙ্গেশকরের প্রথম বাংলা ডিস্ক। তার পর নানা সময়ে নানা জনের সুর ও বাণী-সংযোগে বাংলাগানের জগতে লতার যে-কেরিয়ারের শুরু পরে তার নানা ভাবে পল্লবিনী ও সঞ্চারিণী হয়ে ওঠার আশ্চর্য ইতিহাস রয়েছে।
আর সেই ইতিহাসেরই এক অতি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সলিল চৌধুরীর কথায়-সুরে লতার গান। বাংলা গানের সংক্ষিপ্ত কেরিয়ারে লতার এই সলিল-সংযোগ বাংলা গানের দিগন্তে যে কত রৌদ্র-বর্ষা-বসন্ত নামিয়ে আনল তার আর ইয়ত্তা রইল না! 'যা রে উড়ে যা রে পাখি', 'না যেও না', 'ওগো, আর কিছু তো নয়'; একের পর এক সব অনন্য হীরকদ্যুতি।
আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar Passes Away: বাংলা গানে লতা পল্লবিত হলেন হেমন্ত-ঋতুতেই!
গুগল বলছে-- ১৮৫টি বাংলা গান গেয়েছিলেন লতা। ছোট্ট কেরিয়ার। সংখ্যায় কী আসে যায়। ওই সামান্য কয়েকটি গানের অভিঘাতও যে অসামান্য। একটা সময় রেডিয়োতে কলকাতা
-ক সেন্টারের কোনও এক অনুষ্ঠানে (সম্ভবত শুক্রবার করে) একই শিল্পীর অনেকগুলি গান বাজানো হত। সেখানে মাঝে-মাঝেই বাজানো হত সলিল চৌধুরীর কথায়-সুরে লতা। আর তখনই সেই অভিঘাত যেন শরীর ধারণ করত!
রেডিয়োর যুগ ছিল শ্রুতির যুগ। গান তখনও 'দেখার জিনিস' হয়ে ওঠেনি। সেই দৃশ্যহীন বেতারের অপার অজর তরঙ্গ বেয়ে যখন শীতের কোনও নির্জন আলস্য়বিধুর রৌদ্রমধুর দিনে কানে আসত 'অন্তবিহীন কাটে না আর', 'ঝিলিক ঝিলিক ঝিনুক'-এর রণন তখন মনে যে কী আশ্চর্য রোমাঞ্চ জাগত তা কে বলবে! মনের ছায়া-আবছায়া পথ ধরে তখন কত যে ঝিলিক ঝিলিক রোদালো প্রক্ষেপ! সলিলের সুর-ইন্দ্রজালে অবশ মনে লতার অলৌকিক কণ্ঠস্বরের অনন্য আবেশজাগানো স্পর্শ!
শোনা যায়, নিজের পরিসরে এবং কোনও কোনও সাক্ষাৎকারেও সলিল চৌধুরী নাকি একাধিকবার বলেছেন, তিনি যখন লতার জন্য কোনও গান তৈরি করেন তখন 'স্কাই ইজ হিজ লিমিট'! সাধারণ শ্রোতার পক্ষে এত বড় একজন সঙ্গীতস্রষ্টার আকাশের খোঁজ করার স্পর্ধা একটু বাড়াবাড়িই। প্রয়োজনও নেই। অর্থাৎ, আমরা হয়তো ঠিক বুঝব না, লতার জন্য সুর করতে গিয়ে সলিল চৌধুরী তাঁর বাংলা গানে ঠিক কোথায় কতটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন, কোথায় কতটা আশ্চর্য নামিয়ে আনেন, কোথায় কতটা জিনিয়াসের ছায়া ফেলে যান! কিন্তু শ্রোতার তো কান আছে। কানই তার প্রাণ। এই কান দিয়েই সুর মরমে প্রবেশ করে তার। আর তখনই সে অন্তত এটুকু বোঝে যে, সে যা শুনছে তা আর পাঁচটা জিনিসের থেকে আলাদ, অন্যরকম, অনন্য। তার ভালো লাগে। হঠাৎ ভীষণ লাগে। আর তখনই সে চৌধুরী-বাড়ির লতা-মেহফিলে সম্পূর্ণত নিমজ্জিত হয়ে যায়। শিল্পেরর পক্ষে এই সংযোগটাই তো বড় কথা। চিরকালের শ্রোতার জন্য সেই অপূর্ব অনুভূতি তৈরি করে দেয় এই সলিল-লতা জুটি।
'পা মা গা রে সা'-র উদ্দাম সুরলহরী কিংবা 'ও প্রজাপতি প্রজাপতি'র সেই রঙ-ঝরানো ছন্দজটিল অনায়াস উড়ে বেড়ানো কিংবা 'ও ঝর ঝর ঝরনা'র নির্ভার তরলিত চন্দ্রিকা চন্দন-বর্ণা বয়ে যাওয়া-- এর বুঝি কোনও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হয় না। শিল্প যখন মূর্ত ও বিমূর্তের মাঝামাঝি অবস্থান করে তখনই তো সেই খানিক বোঝা খানিক-না-বোঝার এক রহস্য তৈরি হয়। আর শ্রোতা মজে যায় সেই বিদ্যুৎপর্ণা কণ্ঠের বেলোয়ারি আওয়াজে!
আরও কত কত অনাগত সময় আসবে যখন আগামী প্রজন্ম একই রকম উদগ্রীব হয়ে শুনতে থাকবে 'ও মোর ময়না গো', 'জাগো মোহন প্রীতম', 'কিছু তো চাইনি আমি', 'কেন যে কাঁদো বারে', 'হায় হায় প্রাণ যায়', 'না মন লাগে না', 'সাত ভাই চম্পা', 'কেন কিছু কথা বলো না'র মতো আশ্চর্য সব গান, আশ্চর্য সব সুর আশ্চর্য সব মীড়।
আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar Passes Away LIVE: নিভল সুরপ্রদীপের শিখা, লতা প্রয়াণে শোকস্তব্ধ দেশ