কলঙ্কিত প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতার রাজকাহিনি
এ এক আশ্চর্য সমাজ। মানব-মানবী নয়, ক্ষমতাই শীর্ষে। ক্ষমতাই ঈশ্বরসম। প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, বেডরুম পলিটিকসের এক সম্পৃক্ত চিত্রনাট্য, যা প্রথম থেকেই পলক ফেলতে দেবে না। অথবা, ক্ষমতাও বোধহয় সবকিছু নয়। ক্ষমতার কাছে মাথা নিচু করেছে প্রেম, প্রেমের কাছে নতজানু বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বাসঘাতকতার কাছে হেরেছে রাজনীতি, রাজনীতির অঙ্গুলিহেলনে নাচছে ক্ষমতা।
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: সাহের বিবি অউর গ্যাংস্টার রিটার্নস
রেটিং: ***1/2
এ এক আশ্চর্য সমাজ। মানব-মানবী নয়, ক্ষমতাই শীর্ষে। ক্ষমতাই ঈশ্বরসম। প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, বেডরুম পলিটিকসের এক সম্পৃক্ত চিত্রনাট্য, যা প্রথম থেকেই পলক ফেলতে দেবে না। অথবা, ক্ষমতাও বোধহয় সবকিছু নয়। ক্ষমতার কাছে মাথা নিচু করেছে প্রেম, প্রেমের কাছে নতজানু বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বাসঘাতকতার কাছে হেরেছে রাজনীতি, রাজনীতির অঙ্গুলিহেলনে নাচছে ক্ষমতা। সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টারের সিকোয়েল হওয়ার যা যা গুণাবলী থাকে দরকার, তার থেকে কিছু বেশিমাত্রায় পাওয়া যেতে পারে। পরিচালক তিঘমাংশু ধুলিয়া আগেই সাড়া ফেলেছিলেন সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার ছবিতে। প্রায় দমকা হাওয়ার মতো নতুনত্বের ছোঁয়া চমকে দিয়েছিল দর্শককে। এখনও দর্শক ভোলেনি সবুজ শাড়ি-আগুনে লাল ব্লাউজ-পরিহিতা মোহময়ী বিবি মাধবীকে। মাহি গিলের চাহনিকে। স্মৃতি টাটকা থাকতে থাকতেই আবির্ভাব রিটার্নস-এ। মনে হয়েছিল বড় বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলছেন তিনি। কিন্তু ছবি দেখে ধারণাটা বদলাতে বাধ্য।
একা চিত্রনাট্য নয়, এ ছবির উত্তরণে যোগ্য দাবিদার কুশীলবরাও। হাল আমলের ছবিতে এমন নিখুঁত চরিত্রায়ণ দেখা যায়নি। প্রকাশ ঝা-এর রাজনীতি ছবির কথা মনে পড়ে। মাল্টিস্টারার ছবি হওয়া সত্ত্বেও কোথায় যেন কিছুতেই ইমেজ ছেড়ে বেরোতে পারেননি রণবীর, ক্যাটরিনা কেউই। তিঘমাংশু এই ছবিতে কোথাও এক চুল জমি দেননি তারকাদের। যে চরিত্রগুলোকে পর্দায় দেখলাম যাঁরা প্রথম ছবিটি দেখেছেন, তাঁদের এই সিকোয়ালটা ধরতে অসুবিধে হবে না। রাজা আদিত্য সিংহ পায়ে চোট পাওয়ার দরুণ হুইলচেয়ারে উপবিষ্ট। মাধবী, অর্থাত্ বিবি এখন এমএলএ। তবু রাজনীতিসচেতনতার অভাব, ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়া মাধবী বেছে নিয়েছে সুরায় ডুবে থাকার ক্ষয়িষ্ণু জীবন। এই দুই চরিত্রে জিমি শেরগিল ও মাহি গিলের অভিনয় শুধু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যই নয়, চরিত্রের প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য এঁরা যে একনিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়েছেন তা স্মরণযোগ্য। দর্শকের আবেগের জায়গাটা খুঁড়ে নিতে বাধ্য। সুরারক্ত মাধবীর স্খলিত পদক্ষেপ, এতটুকু অত্যুক্তি করে না কোথাও। সুন্দর লম্বাটে মুখ, আচ্ছন্ন আয়তনেত্র। সৌন্দর্য ও অভিনয়কে এমন মিশ খাওয়াতে পারেন খুব কম অভিনেত্রীই।
সোহা আলি খান কেরিয়ারে অন্যতম সেরা অভিনয় করে দেখালেন। যোগ্য সঙ্গত করেছেন কস্টিউম ডিজাইনার ও মেক-আপম্যান। ফুলের মত নিষ্কলঙ্ক ইমেজটা প্রায় প্রতিটি ফ্রেমেই ফুটে উঠেছে, ছন্দ পতন হয়নি কোথাও। তেমনিই অত্যুচ্চারণ নেই ইরফান খানের অভিনয়েও। এঁদের অবদানেই মনে রাখার মতো ছবি সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার। যেটুকু অভাব চোখে পড়ে, তা অনেকের ধর্তব্যের বিষয় নয়। ছবির মিউজিক আরও বেশি মনোযোগ দাবি করে। লগ যা গলে গানটি আলোড়ন তোলে মনে, কিন্তু বড় কম জায়গা দখল করে আছে। আরও একটা ব্যাপারে প্রয়োজন ছিল সতর্কতার। মুগ্ধা গডসের আইটেম-নৃত্যের কোরিয়োগ্রাফি বড় দায়সারা। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও আরও আকর্ষণীয় হওয়া উচিত্ ছিল। এটুকু বাদ দিলে সত্যিই উপভোগ্য ছবি বানিয়েছেন তিঘমাংশু ধুলিয়া।