RAW-ইলো বাকি এক
ফি-হপ্তা এত এত ফিল্ম রিলিজ! কোনটা দেখবেন, কেন দেখবেন, কী দেখবেন? বক্স অফিসে টিকিট কাটার আগে এক্সক্লুসিভ অ্যান্ড সুপারফাস্ট রিভিউ পড়ে নিজেই জেনেবুঝে নিন। হলি-বলি-টলি ছবির চুলচেরা বিচার করছেন ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি শর্মিলা মাইতি
ফি-হপ্তা এত এত ফিল্ম রিলিজ! কোনটা দেখবেন, কেন দেখবেন, কী দেখবেন? বক্স
অফিসে টিকিট কাটার আগে এক্সক্লুসিভ অ্যান্ড সুপারফাস্ট রিভিউ পড়ে নিজেই
জেনেবুঝে নিন। হলি-বলি-টলি ছবির চুলচেরা বিচার করছেন ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: এক থা টাইগার
পরিচালক/লেখক: কবীর খান
অভিনয়ে: সলমন খান, ক্যাটরিনা কাইফ, রণবীর শোরে, গিরীশ কর্ণাড
রেটিং: 7.5/10
এমন ছবির রিভিউ লিখতে বসে পর পর অগুনতি বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসানোর পর শব্দগুলো ভাবতে শুরু করা যায়। আসলে সব ক্রিটিকের, আই মিন শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এক থা টাইগার একশো কোটির ছবি। ঠিক মাথায় মাথায় চার দিনে হসিত বয়ানে কালেকশন একশো কোটি। যতদিনে এ ছবি হল থেকে উধাও হবে, যশরাজ ফিল্মসের ভান্ডারে যা মজুত হবে তাতে আরও তিনটে এক থা টাইগার বানানো যাবে। বহু দিন বাদে, বহু আনসাকসেসফুল গবেষণার পর দুরুদুরুবক্ষে এই ভেঞ্চার নিয়েছিল যশ রাজ ফিল্মস। গত পাঁচ-ছ বছরে একটিও বিগ বাজেট ছবিতে হাত দেননি এই প্রোডাকশন হাউজ। তা, এই ছবি রিলিজের পর স্লিপিং পিল ছাড়াই নিশ্চিন্তের ঘুম ঘুমিয়েছেন যশরাজ!
এ ছবির নায়ক, আদি-অন্ত বিক্রমাদিত্য সলমন খান। টাইগার। পাকিস্তানের ত্রাস। র এর এজেন্ট। তাঁর পাশে অমন চিকনি-চামেলি-পতলি-কোমর ক্যাটরিনাকেও পানসে লেগেছে।
যাই হোক। ভারতের র। পাকিস্তানের আইএসআই। আমরা দুটি স্পাই-স্পাই। র মানে কোনও ধাঁধা নয়। RAW। এর ভাল নাম হল, Research and Analysis wing। এর বেশি ইন্ট্রো জানতে চাইবেন না। কেন একে আইএসআই এর ভাই-ভাই মনে করা হল জেনেই বা করবেনটা কী? একটা রাজনৈতিক বিতর্ক হতেই পারত এই গোদা সমীকরণে। হল না কেন কে জানে! তার চেয়ে সলমন খানকে দেখুন আর ঈর্ষায় সবুজ হতে থাকুন। একটা গোটা ছবির গল্পও তাঁরই শরণাপন্ন। তাঁকেই বিশ্বস্ত সারমেয়র মতো ফলো করেছে। তাঁর স্পিডের সঙ্গে টিউনিং করে গল্পের গতি বাড়ে কমে। আমার অনুমান, এ ছবি লেখার সময়ে যশরাজের সঙ্গে সলমনের অলিখিত চুক্তি হয়েই গিয়েছিল। বাপু, স্টান্ট যা করার আমি একাই সামলে দেব। শুধু আমি শূন্যে লাফ দিলেই পায়ের কাছে ল্যান্ড রোভার, অডি, কপ্টার আর বাইক সাপ্লাই দিও, সেইমতো স্ক্রিপ্ট তৈরি রেখো। আমিও না-মরে বেঁচে যাব, তোমাদেরও ব্র্যান্ডিং হয়ে যাবে। পারপাজ সলভড।
কাজেই, আগুন হোক বা ছুরি, বন্দুক হোক বা লোহার রড সবই বিদ্যুত্স্পৃষ্টের মতো ছিটকে বেরিয়ে যায় টাইগারের লাইফলাইন থেকে! হামলাকারী শত্রুদের কলাগাছজ্ঞানে লটকে-পটকে দিলেও, চলন্ত ট্রেনে অভূতপূর্ব মারপিটের পরেও এমনকী, অট্টালিকা থেকে লাফ-ঝাঁপ দিয়ে বাই চান্স পড়ে গেলেও, টাইগারের কপালের রগ আর ঠোঁটের কোণ ছাড়া কোনও জায়গাই কেটে রক্ত পড়ে না। এ জিনিস অবশ্য আমাদের পরিচিত। ভারতীয় ছবির একশো বছরেও শাশ্বত এবং অননুকরণীয়ভাবে অপরিবর্তনীয়। তাই বার বার নামতার মতো পড়তে হলে মাথা ঘামাতে হয় না।
আমাকে নিন্দুক ভাবার কোনও কারণ নেই। নিখুঁত সুপার্ব অ্যাকশন সিকোয়েন্স, চমত্কার ক্যামেরাওয়র্ক আর মনোরঞ্জনের উপাদানে বেশ সম্পৃক্ত ছবি। ভীষণ খেটেছেন ক্যাট। সলমন-ক্যাটরিনার যৌথ স্টান্ট এতটাই উদ্দীপনাসঞ্চারক যে, ছবির রিপিট ভ্যালু সম্পর্কেও দ্বিমত থাকবে না। তবে স্টান্ট বাদে সলমন-ক্যাটরিনার কেমিস্ট্রিতে হরমোন কম। বেশ কাঠ-কাঠ। প্রেম দৃশ্যে সলমনের আলিঙ্গনে ক্যাটরিনা যেন বরফঠান্ডা। রিয়্যাল লাইফে তাঁদের জমজমাট কেমিস্ট্রিতে হঠাত্ ইতি টেনে ক্যাটরিনা কি হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? ক্যামেরার চোখ কিন্তু ধরে ফেলেছে ক্যাটরিনার অস্বস্তিটুকু। উল্টোদিকে সলমন অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। জলের মতো স্বচ্ছ্ব তাঁর অভিব্যক্তি।
এতদসত্ত্বেও, এক কুত্তে নে টাইগার কো বিল্লি বনা দিয়া! চুহে কাঁহিকা!!
আমার মন্তব্য নয়। ছবিতে বলেছেন রণবীর শোরে। পেশায় টাইগারের সহকর্মী। বলিউড এই প্রতিভাকেও ঠিকমতো স্পেস দেয়নি। এ ছবির পরে ভাগ্য ফেরার সম্ভাবনা প্রবল। আর একজন, রোশন শেঠ। যে-প্রতিভাকে বলিউড কোনওদিনই ব্যবহার করেনি। প্রফেসরের ছোট্ট চরিত্রের স্বল্প পরিসরেও কী অপূর্ব অভিনয়।
সলমন খানের অট্টহাসির দিন সমাগত। আর এক কোটি-মেকার অক্ষয়কুমার এখন সপাত্ ভূপতিত। বাইশ বছর ধরে তিনি বলিউডে আছেন। প্রচুর প্রচুর হিট দিয়ে প্রযোজকের পকেট ভরিয়েছেন, তবু তাঁর চারিত্রিক খুঁত ধরতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছে মিডিয়া। উন্নাসিক ক্রিটিকের কাছে তিনি দূরদর্শনই থেকে গেছেন। শার্টলেস খান এখানেও শার্ট খুলেছেন ক্ষণিকের ভুলে। (সিকোয়েন্স এমনই ছিল যে, না খুললেও বিশেষ ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না) তবু আমরা দেখতে পেলাম, থরে থরে সাজানো পেশির ভাস্কর্য। মন্দিরতুল্য শরীর। নাঃ, বয়সের ভার, সময়ের আঁচড়, পড়শির ঈর্ষা-- দাঁত বসাতে পারেনি!