জাতীয় পুরস্কার পেলে তাঁর আর কাজ জোটে না, বিশ্বাস ববের
রণিতা গোস্বামী
রণিতা গোস্বামী : অপুদা নামেই টেলিভিশন ও বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তিনি বেশি পরিচিত। শুধু তাই নয়, 'টুটি-ফুটি' , 'বব বিশ্বাস', 'হাত কাটা কার্তিক','তপেশ' এই নামগুলিতেও তাঁকে চেনেন সিনেমাপ্রেমীরা। সৌজন্য অবশ্যই 'জগ্গা জাসুস', 'কাহানি' 'ভূতের ভবিষ্যৎ', 'ফেলুদা সিরিজ'- এর মত জনপ্রিয় সিনেমাগুলি। নামের ভিড়ে যদিও এখনো উজ্জ্বল পিতৃদত্ত শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। অপুদার ঝুলিতে চরিত্রের সংখ্যা অগুনতি। তবে আপাতত নতুন পরিচালক সপ্তাশ্ব বসুর 'নেটওয়ার্ক' ছবি নিয়ে ব্যস্ত তিনি। সেই ছবিরই ভাষ্য আরোপনের ফাঁকে কথা বললেন জি ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে।
নেটওয়ার্ক'-এ অভিজিৎ গাঙ্গুলি লোকটা কেমন বলুন তো?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- অভিজিৎ গাঙ্গুলি, একজন চিত্র পরিচালক, টেলি শো নির্মাতা। তিনি এক সময় বহু হিট সিনেমা দিয়েছেন। তবে একটা সময়ের পর তিনি তাঁর গৌরব হারিয়ে ফেলেছেন। তবে হারানো গৌরব তিনি ফিরে পেতে চান। এরই মধ্যে জানতে পারেন তিনি এক ভীষণই কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত, বেশিদিন বাঁচবেন না। তাই একটা ভালো সিনেমা বানিয়ে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চান। মাঝে আসে অনেক বাধা। একটা সময় কাজটা দুম করে বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে অভিজিৎ গাঙ্গুলি জানতে পারেন, তিনি যে গল্পটি নিয়ে সিনেমা বানাচ্ছিলেন সেই গল্পের উপরই আরেকটা ছবি তৈরি হয়ে গেছে, শুধু নামটা আলাদা। বুঝতে পারেন তাঁর গল্পটা চুরি হয়েছে। এর জন্য দায়ী তাঁর টিমেরই লোকজন। জানতে পারেন ওনার সঙ্গে এক প্রযোজকের শত্রুতা ছিল তিনিই এই কাজটা করিয়েছেন। এরপর অভিজিৎ গাঙ্গুলি তো আর সিনেমা বানানোর মানসিকতায় বা শারীরিক সক্ষমতায় নেই। তাই তিনি এক টেলিভিশনের রিয়েলিটি শোর মাধ্যমে বদলা নেবেন। আর সেটাই এই 'নেটওয়ার্ক' ফিল্মটির গল্প।
এই ছবিটা সপ্তাশ্ব (পরিচালক)র প্রথম ছবি। আর ও একজন নতুন পরিচালক। তো ওর সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগছে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- না, না, ও (সপ্তাশ্ব বসু) খুবই ভালো কাজ করছে। ওর কাছে খুব পরিষ্কার যে ও কী করতে চাইছ। সপ্তাশ্বর সঙ্গে এর আগেও আমি কতগুলি শর্টফিল্মে কাজ করেছি। ও খুব মর্ডান ছেলে। জানে কীভাবে কাজটা করতে হয়, টেকনিক্যালি অনেকের থেকেই অনেক বেশি সাউন্ড। কাজেই সুবিধাই হচ্ছে কাজ করতে।
এই ছবিতে আপনার বিপক্ষে দেখা যাবে বেণুদাকে (সব্যসাচী চক্রবর্তী)। যিনি প্রযোজক অরিন্দম চক্রবর্তীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। অথচ এই সব্যসাচীর সঙ্গে আপনি জনপ্রিয় তপসে-ফেলুদার সিরিজে এবং আরও অনেক অভিনয় করেছেন, তো ব্যক্তিগত জীবনে ওনার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-আমার সঙ্গে বেণুদার সম্পর্ক অনেকদিনের। ১৯৯০ আমি যখন 'চার্বাক'-এ যোগ দিই তখন থেকেই আমরা একসঙ্গে থিয়েটার করতাম। তো 'ফেলুদা' করার বহু আগে থেকেই বেণুদার সঙ্গে কাজ করেছি। বহুদিনের আলাপ। বেণুদা আামার দাদার মতো, ঘরের লোকই বলতে পারো। আসলে অভিনয়টা একটা দেওয়া নেওয়ার খেলা, আমি যদি কাজের সময় ঝোলাই, তখন বেণুদার কিছু করার থাকে না। আবার বেণুদা যদি ঝোলায় তখন আমারও কিছু করার থাকে না। তাতে কাজটা খারাপ হয়। তবে বেণুদার সঙ্গে আমার রসায়ন তো খুব ভালো, তাই আমার কাজ করতে সুবিধাই হয়েছে। আমার তো মনে হয়ে 'নেটওয়ার্ক' ছবিতে আমার ও বেণুদার যেকটা সিন আছে দর্শকদের ভালো লাগবে।
এই ছবিতে অনেকেই নতুন। তো তাঁদেরকে নিয়ে আপনার কী বক্তব্য?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-অন্যান্য যাঁরা রয়েছে তাঁরাও খুবই সাবলীল। কারও মধ্যে কোনও আড়ষ্ঠতা রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। এবং বহুদিন ধরে অভিনয়ের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত বলে মনে হয়েছে। এবং তাঁরা অনেকেই আমার থেকে সিনিয়ার, যেমন ভাস্করদা (ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়), সপ্তর্ষি রায় আমার বহুদিনের বন্ধু। ওর বাবা বিখ্যাত নাট্য বক্তিত্ব ছিলেন সরোজ রায়, 'গরুর গাড়ির হেডলাইট' (নাটক) বলতে সবাই চেনেন। এরকম সবাই মোটামুটি চেনাশোনা। কাজ করতে করতে সবাই বেশ পরিচিত একই পরিবারের মতোই কাজটা করেছি।
অনেক ছবিতেই নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অনেক স্টারেরই অনেক 'ট্যানট্রাম' থাকে। সেক্ষেত্রে সপ্তাশ্ব বলছিল (পরিচালক) তুমি ওকে শ্যুটিংয়ের সময় অনেক সাহায্য করেছ।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-(একটু মজা করে) মানে বলতে চাইছ আমি বড় স্টার নই (হাসি)। ট্যানট্রাম থাকলেই বড় স্টার হয়, আর আমি বড় স্টার নই বলে আমার ট্যানট্রাম নেই।
(পাশ থেকে সপ্তাশ্ব)-না, না অপুদা তো ন্যাশনাল স্টার (হাসতে হাসতে)আর অপুদার ট্যানট্রাম কোনও দিন ছিল না।
শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়-(সিরিয়াস) দেখো ছোট থেকে একটা জিনিস দেখে এসেছি। ট্যানট্রাম দিয়ে অনেককে প্রমাণ করতে হয় যে তাঁরা বড় স্টার, আর সত্যিই যাঁরা বড় স্টার তাঁদের ট্যানট্রাম থাকে না। অমিতাভ বচ্চনকে আজও ৬টা কল টাইম দিলে ৬টার আগে আসেন। অনেক স্টার যারা ৩ ঘণ্টা পরে আসে, ৪ ঘণ্টা আগে চলে যায় তাঁরা আর যাই হোক না কেন অমিতাভ বচ্চন তো হতে পারবেন না। কাজেই এগুলো দেখে শিখেছি 'অনেস্টি', 'ডিসিপ্লিন' না থাকলে তুমি বেশিদিন টিকবে না। অনেকেই আসে হাওয়াইয়ের মতো হুশ করে উপরে ওঠে যায়, আবার দুম করে ফেটে পড়ে যায়, সেই যে পড়ে যায় আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তো ওরাম হওয়ার আমার কোনও ইচ্ছে নেই (হাসতে হাসতে)।
'কাহানি' ছবিতে তোমার যে চরিত্র বব বিশ্বাস সেই চরিত্রটা যেভাবে ভয় ধরিয়েছে, তাতে অনেকেই শোলে'র 'গব্বর সিং'-এর সঙ্গে তুলনা টেনেছেন, সেবিষয়ে তুমি কী বলবে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-না, না, গব্বর সিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র, সারা ছবি জুড়ে গব্বর সিং রুল করেছে। সারা ছবিতে বব বিশ্বাসের চরিত্রটা মাত্র ৯ মিনিট কয়েক সেকেন্ড ছিল, ১০ মিনিটও নয়। ওভাবে তুলনা করা যায় না। তবুও তুলনা হচ্ছে কারণ 'বব বিশ্বাস' আসলে খুবই 'আন ইউজুয়াল' একটা চরিত্র বলে। তবুও দাগ কেটেছে, কারণ যেকোনও জিনিস নতুন হলে সেটা দাগ কাটে। এখন যদি 'বব বিশ্বাস'-এর মতো আরও ৫টা চরিত্র থাকত তাহলে এমনটা হত না। যেহেতু এধরনের খুনি আগে দেখা যায়নি, ওকে দেখলেও বিশ্বাস হবে না যে ও খুনি। আমরা সেটাই চেয়েছিলাম সেটাই হয়েছে, তো সাফল্য এসেছে।
রণবীর কাপুরের সঙ্গে 'জগ্গা জাসুস' ছবিতে টুটিফুটির মতো ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা যদি একটু শেয়ার করো।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-ওরা খুব প্রফেশনাল। আসলে প্রফেশনালিজম থাকলেই মানুষ বড় হয়। এটা রণবীর কাপুর, অনুরাগ বসু, ক্যাটরিনা কাইফ, সৌরভ শুক্লা সবার ক্ষেত্রেও সত্যি। সকলের সঙ্গে কাজ করে অনেক শিখেছি। মানুষ ঠিক বুঝতে পারলেন না ছবিটা, কিন্তু এধরনের ছবি বানানো খুব সোজা নয়। ওই ভাবে ভাবাটাই বেশ শক্ত, তবে অনুরাগ ভাবতে পেরেছে। একটা জিনিস যে ছবি দৈর্ঘ্য একটু বড় মনে হয়েছে অনেকেরই। সেটা হয়ত কমানো যেতে পারত। কিন্তু এভাবে গল্পটা ভাবাটাই বিশাল ব্যাপার, বানানো তো পরের কথা। পুরো বিষয়টাই খানিকটা রূপকথার মত তুলে ধরা হয়েছে।
আর রণবীরের কথা যদি বলি, ভীষণ প্রফেশনাল, কোনও দিন দেরি হয় না। ও অনেক কমফর্টে থাকতে অভ্যস্ত। এত গরমের মধ্যে শ্যুটিং করেছি। ও একবারের জন্যও বলেনি যে 'বহত গরমি হ্যায়, পঙ্খা লে আও, ছাতা ধরো', এসব কখনও শুনিনি। এটা ক্যাটরিনার ক্ষেত্রেও দেখিনি। সারাক্ষণ মজা করে শ্যুট হয়েছে। রণবীর ক্যাটরিনা একে অপরের পিছনে লেগেছে। ক্যাটরিনা হিন্দিতে একটু কাঁচা, সেটা তো সবাই ভালো হবে এমন কোনও কথা নেই। তবে ও নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সব মিলিয়ে সত্যি কথাই বেশ ভালো লাগল কাজ করে।
একটা ঘটনা বলি তাহলেই বুঝতে পারবে, সত্যি কথা বলতে কি, ওরা তো অনেক বড় স্টার, সারা বিশ্বের লোক চেনে ওদের। মরোক্কোর একটা জায়গায় শ্যুট করছিলাম, একটা দুর্গের ভিতরে। ওখানে চেয়ার কমছিল। আমি বসেছিলাম।রণবীর ও ক্যাটরিনা দূরে শট দিচ্ছিল। তারপর ক্যাটরিনা আসছে কাঁধে একটা ব্যাগ, যারা ছবিটা দেখেছেন তাঁরা জানবেন। শ্যুটিংয়ের সময়ও দেখতাম কাঁধের ব্যাগটা কিছুতেই ও খুলত না। কেন খুলত না আমি বুঝিনি। যাই হোক ও এল আমি ততক্ষণে চেয়ার থেকে উঠে গিয়েছিলাম, ও বসতে গিয়ে দেখল আমি দাঁড়িয়ে আছি, তখন ও আর বসল না। 'দাদা আইয়ে না ব্যঠিয়ে'। তো আমি বললাম, 'নো, আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু সিট ডাউন, তুম ব্যাঠো'। তখন ও বলল 'ইটস ওকে আই অ্যাম অলসো স্ট্যান্ডিং'। ও বসল না। তারপর অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আমি বুঝতে পারছি ও পারছে না আর দাঁড়াতে, তো অনেকক্ষণ পর ও বলল, 'দাদা ব্যাঠতি হুঁ থোড়া'। তো এটাই বলার যে, এধরনের এত ভালো ব্যাবহার। এটা কে করল ক্যাটরিনা কাইফ, কার সঙ্গে করল যাকে সে চিনত না। আর আমি বোম্বের কেউ নয়। আর এখানে অনেকেই আছে যাঁরা দুটো টেলিভিশন সিরিয়াল করে থাকলে অনেক সময় সিনিয়ার কেউ এলে পায়ের উপর থেকে পা-টাও নামায় না।এটা তাঁদের উদ্দেশ্যে বললাম। একটু শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আচ্ছা রণবীর-ক্যাটরিনার যে সম্পর্ক, ব্রেকআপ, শ্যুটিংয়ে কি তার কোনও প্রভাব দেখেছো?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- কী জানি বাবা, এসব তো আমি কিছুই বুঝতেও পারিনি (হাসি)। ওই যে বললাম প্রফেশনাল। আচ্ছা, তাহলে তার পরের ঘটনাই বলি, ওই যে ক্যাটরিনা এসে বসল, ওখানে রণবীরের শট শেষ হয়েছে, তো ওইখান থেকেই ও ক্যাটরিনাকে বলতে বলতে আসছে, 'আরে তু ইধার ব্যঠি হ্যায়, দাদা বুলায়া হ্যায় তুঝকো।' ক্যাটরিনা বলল, 'আই জাস্ট স্যাট ডাউন ওকে'। তখন রণবী বলল,' নো নো, ক্যায়সে ব্যাঠ সকতি হ্যায়, যা শট হ্যায় উধার।' এরপরেই ক্যাটরিনা তাড়াতাড়ি উঠে গেল। আর রণবীর আমায় চোখ মেরে বলল, 'কুছ শট ফট নেহি হ্যায়, মুঝে ব্যাঠনা থা দাদা। বহত দের তক খড়া হুঁ।' তারপর তো ক্যাটরিনা কী একটা হাতে তুলে মারতে এল। ক্যটরিনা আবার বলল, 'দেখনা তেরা পিকচার রিলিস হোনা হ্যায় না, প্রমোশান কে লিয়ে মুঝে বুলায়েগি তো দেখনা'।...এসব চলছে তো কী করে বুঝব? ওরা প্রফেশনাল।
আচ্ছা সিনেমা রিলিজের পর ঋষি কাপুর এটা নিয়ে অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, সেটা নিয়ে কী বলবে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- দেখো এটা তাঁর ব্যাপার। তিনি বলেছেন, এবিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
আর কোনও হিন্দি ছবিতে এই মুহূর্তে কাজ করছ?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- না, মাঝে একটা ডেনমার্কের ছবিতে কাজ করলাম, নাম, 'Iqbal & the Jewel of India'। দিল্লিতে শ্যুটিং হল। পুরো টিমটাই ডেনমার্কের ছিল, একমাত্রই ভারতীয় অভিনেতা।
হিন্দি ছবিতে পাকাপাকি ভাবে কাজ করার কোনও ইচ্ছে আছে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-না, না ওখানে গিয়ে থাকার কোনও ইচ্ছেই নেই। ভালোকিছু পেলে যাব, কাজ করব চলে আসব।
সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কার নিয়ে একটা বিতর্ক হয়েছে, রাষ্ট্রপতি হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র ১১ জন। এনিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, এটা নিয়ে তোমার কী মত?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- না, এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। রাষ্ট্রপতি ব্যস্ত মানুষ, হয়ত ওনার অন্য কাজ ছিল, আমি কী করে বলব। আবার যাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের নিজস্ব মতামত থেকে বলেছেন।
তুমিও অনেক ছবিতেই অনেক ভালো ভালো চরিত্র করেছো। ভালো অভিনয় করেছো। তো জাতীয় পুরস্কার পাওয়া হয়নি, তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ আছে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- না, না আক্ষেপ নেই। দেখো পুরস্কার পাওয়াটা একটা ভাগ্যের ব্যাপার। ৫টা লোক মিলে ঠিক করেন যে কে কে পুরস্কার পাবেন, আবার সেই ৫টা লোকই ঠিক করে দেন যে কারা পাবেন না। আর পুরস্কার এমনই একটা জিনিস পেলে সব সময় ভালো লাগে, না পেলে সব সময় রাগ হয় হিংসে হয়। তাই ওটা নিয়ে ভাবলে নিজের কাজ খারাপ হবে। বরং আমাদের এখানে একটা জিনিস দেখেছি, বিশেষ করে বাংলায় যেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, যে জাতীয় পুরস্কার পেলে বাংলায় তার কাজ কমে যায়।
কেন এমন হয়?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-জানি না কেন, কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটা আমাদের এখানে হয়েছে, একটু ফিরে তাকালেই দেখা যাবে।
এই যে ঋদ্ধি যে জাতীয় পুরস্কার পেল, ওকে কী বলবে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়- আমার একটাই কথা, মাথা ঠান্ডা রাখিস, পা দুটো মাটিতে রাখিস। নইলে দেখবি যে তোরও কাজ নেই।
আচ্ছা একটা কথা শুনেছি, তুমি নাকি ফোন ব্যবহার করো না, চলে কীভাবে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-চলে যাচ্ছে কিন্তু এখনও (হাসতে হাসতে)। ন্যাশনাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ছবিও হয়ে গেল একটা। আমার বাবার সঙ্গে সবাই যেভাবে যোগাযোগ করত সেভাবেই এখনও চলছে। ল্যান্ডলাইন। আমার টাওয়ার লোকেশন ফিক্সড আছে গলফগ্রিনে। বাকিদেরটা মুভিং, খুঁজতে হয় (মজা করে)।
সপ্তাশ্বর সঙ্গে শ্যুটিংয়ের যদিও কোনও অভিজ্ঞতা শেয়ার করো।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-অনেক অভিজ্ঞতা, কোনটা বলি?
(পাশ থেকে পরিচালক সপ্তাশ্বর বক্তব্য) আমি একটা ঘটনা তাহলে বলি। নতুন কাজ করতে গিয়ে তো অনেক সমস্যার সামনে পড়তে হয়। একদিন সেটে আগুন লেগে যাচ্ছিল। এত টাকা নষ্ট হলে অনেক ক্ষতি, বিশেষকরে আমরা যারা নতুন ফান্ড জোগাড় করে কাজ করছি। ওই সময় অপুদা তখন দাঁড়িয়ে, বাকি সবাইও ছিল। অপুদাই তখন অন্য একটা জায়গায় শ্যুটিংয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। আসলে ভালো সময়ের থেকেও খারাপ সময়ের স্মৃতি বেশি মনে থাকে।
'নেটওয়ার্ক' ছবি নিয়ে দর্শকদের কী বলবে?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-দেখো আমি তো আমার সব ছবিকেই ভালো বলব। তবে সত্যিই যদি ভালো হয় ছবিটা, ইন্টারেস্টিং কিছু থাকে দর্শক এমনিই দেখবে। তবে এই ছবির বিষয়টা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে ভীষণই ইন্টারেস্টিং এটাই বলতে পারি। এধরনের বিষয়ে বাংলা ছবিতে আগে হয়নি। বাংলা কেন আমার মনে হয় হিন্দিতেও এই বিষয় নিয়ে ছবি হয়নি।
কোন কোন পরিচালকের সঙ্গে আবারও কাজ করতে চাও?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-
সত্যি কথা বলব?(একটু মজা করে)আসলে যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করতে চায় তাঁদের সঙ্গেই কাজ করতে চাই। যাঁরা চান না তাঁদের সঙ্গে আমিও কাজ করতে চাই না। কারোর নাম বলে কাউকে চাপে ফেলতে চাই না।
আরও পড়ুন-'নেটওয়ার্ক'-এ প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠবেন শাশ্বত ও সব্যসাচী!