'প্রাক্তন'এর প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা ম্যাজিক কি 'দৃষ্টিকোণ'এও বাজিমাত করল?

রণিতা গোস্বামী

Updated By: Apr 28, 2018, 05:42 PM IST
'প্রাক্তন'এর প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা ম্যাজিক কি 'দৃষ্টিকোণ'এও বাজিমাত করল?

রণিতা গোস্বামী :  প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত জুটির সিনেমা নিয়ে বাংলা ছবির দর্শকদের মধ্যে বরাবরই একটা অন্যরকম আবেগ রয়েছে। আর সেই জুটি যখন ১৪ বছর পর 'প্রাক্তন'-এর মাধ্যমে বড় পর্দায় ফিরল তখন সিনেমাপ্রেমীদের সেই আবেগের বাঁধ ভাঙে। তবে 'প্রাক্তন'-আপাতত এখন অতীত, বর্তমান শুধুই দৃষ্টিকোণ। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ জুটির ছবি 'দৃষ্টিকোণ' নিয়ে তাই সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহ একটু বেশিই ছিল বৈকি। অবশেষে মুক্তি পেয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবি। তবে প্রাক্তনের মতই দর্শকদের মন জয় করার রসদ কি 'দৃষ্টিকোণ'এও রয়েছে? চলুন দেখে নেওয়া যাক...

সিনেমার গল্প ও বিশ্লেষণ        

গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় শ্রীমতী সেনের (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) স্বামী পলাশ সেনের (কৌশিক সেন)। পঙ্গু হয়ে যান শ্রীমতী সেনের ভাসুর (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়)। তবে আদপে এই দুর্ঘটনা স্বাভাবিক নয়, এটা খুন। এই ধারণা থেকেই আইনজীবী জিয়ন মিত্রের (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) দ্বারস্থ হন শ্রীমতী সেন (ঋতুপর্ণা)।  জিয়ন মিত্র (প্রসেনজিৎ) এক চোখে দেখতে পান না। আর শ্রীমতী সেন মানে ঋতুপর্ণার স্বামীও 'দৃষ্টি' নামে এক সংস্থা চালাতেন। চোখ আর দৃষ্টি এই সূত্র ধরেই যিওনের কাছাকাছি আসেন শ্রীমতী। যদিও যিওন বিবাহিত তাঁর স্ত্রীর নাম রুমকি (চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়)। জিওন ও শ্রীমতীর পরকীয়, অন্যদিকে রুমকির প্রতিও জিয়নের ভালোবাসা ঘিরে তৈরি হয় এক অদ্ভুত টানাপোড়েন। অন্যদিকে, শ্রীমতীর স্বামী পলাশ সেন মানে কৌশিক সেনের মৃত্যুর তদন্ত ঘিরে তৈরি হয় এক অন্য রকম রহস্য উঠে আসে, যা গল্পকে অন্য মোড় দিয়েছে। আগ্রহ জাগিয়েছে শ্রীমতীর ভাসুরের চরিত্রটিও। যে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গেছে খোদ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে। গল্পের শ্রীমতীর ভাসুরের আয়ার চরিত্রে দেখা গেছে দোলন রায়কে। যে চরিত্রটি ছোট হলেও এক অন্যরকম ভূমিকা রয়েছে।

সব মিলিয়ে প্রেম, পরকীয়া, ও থ্রিলারের মিশেলে বেশ ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠেছে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দৃষ্টিকোণ'।

অভিনয়

এই ছবিতে প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা দুজনের অভিনয়ই অনবদ্য।  সিনেমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে জিওন মিত্রের চরিত্রটির সঙ্গে সুন্দর খাপ খাইয়ে তুলেছেন বুম্বা দা।  একই ভাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তেরও প্রশংসা না করলেই নয়। জিয়ন মিত্র ও শ্রীমতী সেন এই দুই চরিত্রের জন্য পরিচালকের প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে বাছাই এক্কেবারই যে সঠিক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁরা দুজনেই অনবদ্য। পাশাপাশি গল্পকে অন্যমাত্রা দিয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, দোলন রায়ের অভিনয়। 

গান

'দৃষ্টিকোণ' ছবিতে সবথেকে বেশি নাড়া দিয়েছে গান। অনুপম রায়ের লেখা গানের কথা ও সুর গুলি সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আর অনুপমের সেই গানকে অন্যমাত্রা দিয়েছে রূপঙ্কর ও ইমনের গায়কি। তবে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে পালোমার গাওয়া 'আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করছি' গানটি।

 চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও সিনেমাটোগ্রাফি

যে কোনও ছবির ক্ষেত্রেই সিনেমাটোগ্রাফি এক বিশেষ ভূমিকা রাখা। এই ছবির ক্ষেত্রেও গোপী ভগতের সিনেমাটোগ্রাফির প্রশংসা না করলেই নয়। আর পরিচালক হিসাবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সিনেমা নিয়ে দর্শকদের একটু বেশিই আশা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তাঁর অন্যান্য ছবির মতই 'দৃষ্টিকোণ'এও এক অন্যধারার গল্প বলেছেন পরিচালক। প্রেম, বন্ধুত্ব, পরকীয়ার সঙ্গে থ্রিলারের মিশেলে ছবিটিকে অন্যমাত্রা দিয়েছেন। তবুও সিনেমা দেখে কোথাও যেন মনে হয়েছে গল্পের শেষটা যেন একটু অন্যরকম হলেও হতে পারত। ঠিক যেন জমেও জমল না। তবে পরিচলক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি বলেই হয়তবা এই আশা তৈরি হয়েছে। তবে আমি বলব প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার রসায়নের জন্যই 'দৃষ্টিকোণ' অবশ্যই দেখুন।

তবে সবমিলিয়ে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার দৃষ্টিকোণকে ৫এর মধ্যে সাড়ে ৩ দেওয়া যায়।

আরও পড়ুন-মুক্তি পেয়েছে রাজ ডি-র নতুন মিউজিক অ্যালবাম

.