Boycott Trend: ‘বহিরাগত’ বয়কট কালচারে কলুষিত টলিউড, ‘বিসমিল্লাহ’-‘ধর্মযুদ্ধ’র পর টার্গেট ‘লক্ষ্মী ছেলে’!
Boycott Trend: পরিচালক রাজ চক্রবর্তী জি ২৪ ঘণ্টাকে জানান, ‘বয়কট বলে কোনও ট্রেন্ড নেই। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের আইটি সেল এই ট্রেন্ড তৈরি করার চেষ্টা করছে। সব সেক্টরই ওরা নিজেদের কন্ট্রোলে রাখতে চায়। ওরা ধর্মযুদ্ধ বয়কট করার জন্য অনেক কিছু করেছে কিন্তু পারেনি। পরিচালক হিসাবে আমি বলতে পারি, সিনেমা যদি ভালো হয়, যদি সিনেমা দেখার ইচ্ছে থাকে মানুষের তাহলে তাঁরা সিনেমা দেখবে'।
Boycott Trend, সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: বলিউডের বয়কট ট্রেন্ড এখন টলিউডেও। একের পর এক বাংলা ছবি বয়কটের ডাক দিচ্ছে নেটপাড়া। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত রাজ চক্রবর্তীর ধর্মযুদ্ধ বয়কটের ডাক দিয়ে তৈরি হয়েছিল হ্যাশট্যাগ। এরপর সেই বয়কটের ডাক পড়ে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত পরিচালিত ও ঋদ্ধি সেন-শুভশ্রী অভিনীত ‘বিসমিল্লাহ’ ছবির। এবার সেই তালিকায় নতুন নাম কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘লক্ষ্মী ছেলে’। আগামী শুক্রবার মুক্তি পেতে চলেছে এই ছবি। তার আগে মুক্তিপ্রাপ্ত মিনিট তিনেকের ট্রেলারেই দেখা যায় অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, নিচু জাত-উঁচু জাতের সংঘর্ষ, গ্রামের মানুষের ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিন ডাক্তারি পড়ুয়া আমির, শিবনাথ, গায়েত্রীর লড়াইয়ের গল্প শোনাবে এই ছবি। সূত্রের খবর, সেন্সর বোর্ডে এই ছবিকে ছাড়পত্র দিতে চাননি বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন বাবুল সুপ্রিয়, যিনি সেই সময় ছিলেন বিজেপি নেতা। তার তত্ত্বাবধানেই সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ‘লক্ষ্মী ছেলে’। কিন্তু এর মাঝেই বদলেছে বাবুলের রাজনৈতিক সমীকরণ তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে এবার বয়কটের সম্মুখীন হতে পারে এই ছবি। টলিউডে এই বয়কট কালচারে বিরক্ত পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, ঋদ্ধি সেন।
পরিচালক রাজ চক্রবর্তী জি ২৪ ঘণ্টাকে জানান, ‘বয়কট বলে কোনও ট্রেন্ড নেই। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের আইটি সেল এই ট্রেন্ড তৈরি করার চেষ্টা করছে। সব সেক্টরই ওরা নিজেদের কন্ট্রোলে রাখতে চায়। ওরা ধর্মযুদ্ধ বয়কট করার জন্য অনেক কিছু করেছে কিন্তু পারেনি। পরিচালক হিসাবে আমি বলতে পারি, সিনেমা যদি ভালো হয়, যদি সিনেমা দেখার ইচ্ছে থাকে মানুষের তাহলে তাঁরা সিনেমা দেখবে। অনেকসময় সিনেমা ভালো হলেও যদি দেখার ইচ্ছে না হয়, তাহলে অনেক সময় বিষয়ের কারণে, নামের কারণে তারা সিনেমা দেখে না, সেক্ষেত্রে সিনেমা চলে না। আমারও অনেক সিনেমার ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে। এটা যেন ওদের মাথায় না ঢুকে যায় যে ওরা বয়কট করল বলে সিনেমাটা চলল না। ধর্মযুদ্ধের সঙ্গে ওরা এটা করেছে, বিসমিল্লাহর সঙ্গে এটা করছে, লক্ষ্মীছেলের সঙ্গে এটা করছে। আগামী দিনে সব সিনেমার সঙ্গে করবে। এটা কুরুচিকর মানসিকতার পরিচয়’।
আরও পড়ুন: Sonam Kapoor: ছেলেকে দেখে কেঁদে ফেললেন সোনম, ভাইরাল তারকাপুত্রের প্রথম ছবি
রাজ আরও বলেন যে, ‘ধর্মযুদ্ধ বয়কটের সময় আমার টিম পাঠালো বলে আমি দেখলাম, কিছু প্রোফাইল থেকে বয়কট হ্যাশট্যাগ দেওয়া হয়েছে, তাদের ডিপিতে ভারতমাতার ছবি। সে কতটা অশিক্ষিত ও কী দুঃসাহস যে সে বলছে, রাজ শুভশ্রীর বিছানায় যুদ্ধ হলে আমি দেখতে পারি। ডিপিতে ভারতের পতাকা, এদিকে হুমকি দিচ্ছে যদি কেউ আমার ছবি দেখতে যায়, তাকে শেষ করে দেওয়া হবে। আমার ছেলে, আমার পরিবারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। একজন মহিলা আমার ধর্মযুদ্ধ নিয়ে ভালো রিভিউ দিয়েছে, তার পেজে গিয়ে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। আমি সবাইকে এটাই বলব এরা রাস্তায় নেমে কিছু করবে না, এদের সবটাই সোশ্যাল মিডিয়ায়। এদের কথায় কান দেবেন না। যে ছবি ইচ্ছে, সেই ছবিই দেখুন। হ্যাশট্যাগ দিলেই বিশেষ কিছু হয়ে যাবে এমন নয়। এদের আমি এক কথায় বলতে পারি এরা ফ্যাতারু। এদের কোনও জাত নেই, শিক্ষা নেই, সম্মান নেই, কোনও রুচিবোধ নেই। এরা ধর্মেরও কিছু জানে না। এটা আসলে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা। এরা এমন একটা দল যারা মনে করে যে তারাই হিন্দু ধর্মের রক্ষক, সকলেই বুদ্ধিমান অতএব বোঝাই যাচ্ছে আমি কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলছি’।
আরও পড়ুন: Allu Arjun: বাংলার গ্রামে হতে চলেছে পুষ্পা টু-এর শ্যুটিং, কবে আসছেন অল্লু অর্জুন?
বয়কট প্রসঙ্গে ঋদ্ধি সেন বলেন, ‘এই পোস্টগুলো রাজনৈতিক পোস্ট, জাতীয়তাবাদের বোধের সঙ্গে হিন্দু ধর্ম মিশিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সম্প্রীতির পোস্টে এই ধরনের কমেন্ট দেখা যায়। ভারতবর্ষ বিভিন্ন মানুষের দেশ, একজন হিন্দু যতটা এই দেশকে ভালোবাসে, একজন মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টানও একইরকম ভালোবাসে। শুধুমাত্র যারা হিন্দু ধর্ম পালন করেন তারাই যে দেশকে ভালোবাসে এই কথাটার কোনও মানে নেই। যাঁরা এরকম করছেন তাঁদের বেশিরভাগ কেউই কিছু পড়েননি। শুধু বাংলার ইতিহাসই যদি কেউ পড়ে তাহলে জানবে, আমাদের সংস্কৃতি কতটা স্বাধীনচেতা! যাঁদের এখন হিন্দু বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় যেমন বিবেকানন্দ বা রামকৃষ্ণ, তাঁরা অন্য ধর্ম নিয়ে কী বলেছেন, সম্প্রীতির কথা বলেছেন, সেটা যদি কেউ পড়ে তাহলে বোঝা যায় যে এই ধরনের কমেন্ট যাঁরা করেন তাঁরা আসলে কিছুই পড়েননি। দুর্গাপুজোয় ঠাকুরের গয়না তৈরি করেন মুসলিম কারিগররা। এগুলো যারা জানে না, তারা পড়াশোনা তো করেইনি আর এগুলো উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট, ইচ্ছে করে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়, এদের উত্তর দিয়ে নিজের সময় নষ্ট করার মানে হয় না’।
আরও পড়ুন: Raju Srivastava: ভেন্টিলেশনে থাকা রাজুর সঙ্গে সেলফির শখ, ICU-এ আটক যুবক
এই বিষয়ে ‘লক্ষ্মী ছেলে’ ছবির পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। ছবির প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তিনি আপাতত ব্যস্ত ছবির রিলিজ নিয়ে, তিনিও ছবি মুক্তির আগে এই বিষয়ে কথা বলতে নারাজ। প্রসঙ্গত, ধর্মকে হাতিয়ার করেই বয়কটের মুখে পড়তে হয়েছে আমির খানের লাল সিং চাড্ডা ছবিকে। পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ করা হোক আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ ছবির প্রদর্শনী। সেই আবেদন জানিয়েই সোমবার দায়ের করা হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা। কলকাতা হাইকোর্টে মামলাটি দায়ের করেছেন আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খান। মামলায় দাবি করা হয়েছে যে, এই ছবিতে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, এমন কয়েকটি দৃশ্য ও সংলাপ রয়েছে যার জেরে বিঘ্নিত হতে পারে শান্তি শৃঙ্খলা। তাই অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত আমিরের এই ছবির প্রদর্শনী। চলতি সপ্তাহেই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা, তবে শোনা যাচ্ছে আগামীকালই এই মামলার শুনানি হতে পারে। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই বয়কটের মুখে পড়ে ‘লাল সিং চাড্ডা’। সোমবার দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় দাবি করা হয়েছে যে এই ছবিতে বেশ কিছু উস্কানিমূলক বিষয় রয়েছে যা প্রভাব ফেলতে পারে সমাজে।