বাংলার সফলতম সিনেমা `বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না-র ২৫। সমালোচনার মাঝেও নস্টালজিয়ার প্রতীক
২৫ বছর আগে আজই মুক্তি পেয়েছিল বাংলার সফলতম সিনেমা `বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না`
আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছিল ``বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না`। আনন্দমেলা চলচ্চিত্র লিমিটেডের ব্যানারে তোজাম্মেল হক বকুলের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সিনেমা হলের বাইরে ছিল লম্বা লাইন। টিকিট না পেয়ে আত্মহত্যা, সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছিল। প্রথম তিন মাসে ৪০ কোটিরও বেশি টাকা আয় করে সিনেমাটি। বাংলাদেশের বেশ কিছু সিনেমা হলে একটানা ৬ মাস হাউসফুল ছিল এই সিনেমাটি।
ছবিটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে ১৯৯১ সালে মতিউর রহমান পানুর পরিচালনায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় রিমেক হয় এটি। মুল গল্প, গান, নায়িকা সব একই রাখা হয়েছিল। শুধু বাংলাদেশের নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের পরিবর্তে এই ছবির রিমেকে অভিনয় করেছিলেন চিরঞ্জিত্ চক্রবর্তী (দীপক চক্রবর্তী)। কলকাতা সহ গোটা পশ্চিমবাংলায় বেদের মেয়ে জোত্স্নাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল তুমুল উত্সাহ।
হলের বাইরে ছিল লম্বা লাইন, জেলার তো বটেই কলকাতারও অনেক সিনেমা হল হাউসফুল ছিল বেশ কয়েক সপ্তাহ। মজার কথা হল,তথাকথিত শহুরে হলগুলিতেও দারুণ চলেছিল এই সিনেমাটি। আর গান... সেটা তো ইতিহাস। পরিচালক বকুল এ ছবিতে ফোকধারার ১১টি গান রাখেন যার ১০টি গানই নিজেই লিখেছিলেন।
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় এরপরেও অনেক বাণিজ্যিক ছবি তৈরি হয়, কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগই ফ্লপ হয়।
সীমান্তের এপার -ওপার মিলিয়ে ব্যবসা আর জনপ্রিয়তার নিরিখে সফলতম বাংলা সিনেমা এখনও পর্যন্ত `বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না` ই। তবে কোনও আড়ম্বর ছাড়াই হীরক জয়ন্তী বর্ষ কাটাল এই সিনেমা। অবশ্য বাংলাদেশের বেশ কিছু সংবাদপত্রে বেশ গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়েছে এই সিনেমার রজত জয়ন্তী বর্ষের খবর।
বাংলাদেশের এক ওয়েবসাইটে সিনেমার হিরো ইলিয়াস কাঞ্চনের লেখায় ধরা পড়ল আক্ষেপের সুর। ইলিয়াস লিখেছেন,`এটা যদি বাংলাদেশে না হয়ে হলিউডে নির্মিত হতো তাহলে এই ছবিটি জায়গা করে নিত পাঠ্যবইয়ে। কাজ হতো নানাভাবে। গবেষণা করা হতো। কিন্তু এদেশে তেমন কিছুই হয়নি। একটা ছবি কেন এত ব্যবসা করল তা নিয়ে কেউ তেমন গবেষণা এবং জানারও চেষ্টা করল না। এটা করলে আরও সফল ছবি এদেশে নির্মাণ হত`।
তবে খবর নেদারল্যান্ডের এক চলচ্চিত্রকার এই সিনেমাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করছেন। কী করে এই সিনেমা সফলতম ধাপে পৌঁছল সেটাই খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে সেই ডকুমেন্টারিতে।
আর আমাদের রাজ্যে...সিনেমার নায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী এখন চুটিয়ে রাজনীতি করছেন। আর বেদের মেয়ে জোত্স্নার আলোচনা হলেই কলকাতার অনেকেই মুখ টিপে হেসে তাচ্ছিল্য শুরু করেন...। চলচ্চিত্র সমালোচকরা কোনও অপছন্দের সিনেমাকে উত্তম মধ্যম সমালোচনা করতে হলেই এই সিনেমাকে মডেল হিসাবে টেনে আনেন।