বন্ধুত্বের দাম দশটা টাকা
স্বরূপ দত্ত
একটা বাচ্চাকে জন্ম দিতে লেগে যায় ন'মাস।
কেউ জানে না পাগলের জন্ম দিতে
ঠিক কতদিন, কত ঘণ্টা, কত মাস!
উপেন একটা বদ্ধ পাগল, এই শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে।
লোকের কাছে পয়সা চায়
এই যে দাদা, দশটা টাকা হবে।
এই নাও দশটা টাকা, কী খাবে বলো?
খাবে না ও, ঠাণ্ডা লাগছে খুব
তাই নাকি সেঁকবে টাকার গরম।
ঘোর শ্রাবণে ঠাণ্ডা কোথায়! বলে কী পাগলটা?
কপালে হাত দিলাম, ছ্যাত্ করল
জ্বরে পুড়ছে ওর শরীর, মনটা।
উপেন কাঁপছে, উপেন ধুঁকছে, উপেন আর কদিনই বা বাঁচবে।
উপেন আজ সাহসী হয়ে উঠেছে,
যা আছে হবার, হোক বলে চেঁচাবে!
আগে তো দেখিনি, এখানে কেন? এলেই বা কোথা থেকে?
প্রথম প্রথম কিছুই বলেনি সে,
বরং প্রশ্ন করায় খুব গিয়েছিল ক্ষেপে।
ক'দিন যেতেই ও অন্যরকম, অথবা আমিই বদলে গেলাম!
ফুটপাথের আধশোয়া দুর্বল উপেনও ঠিক উঠে বসতো
যখনই সেখান থেকে আমি হেঁটে যেতাম।
তবে কি ওর টাকার লোভ? প্রশ্ন এসেছিল মনে।
দিই তো মোটে দশটা টাকা
চমকে দিয়ে উপেনই আমায় সেদিন 'বন্ধু' বলে ডাকে।
সভ্য মানুষ হিসেব করেও বন্ধুত্বের দাম মাপতে পারেনি।
তাহলে উপেন কেন পাগল হবে?
সে তো ১০ টাকা দিয়েও আদর করে বলে উঠেছে, 'আমার বন্ধুখানি'!
উপেন এখন আর খায় না, তাতে নাকি ওর কষ্ট হয়।
স্মৃতি ভেসে আসে ওর লকআউট ব্রেনে!
সবাই খেয়েছে তো? নাহলে আর ও কীভাবে খায়!
ওর জীবনে এই সবাই কে, মনে করতে পারে না সে।
তিনটে ছেলে-মেয়ে আর ঘর জামাই
তাহলে ওর বউও নিশ্চয়ই আছে।
উপেন নাকি গাড়ি চালাতো, একদিন রাস্তা গিয়েছে বেঁকে।
উপেন আজ রাস্তায় পড়ে আছে
ওর জীবনের সবাই চলে গিয়েছে ওকে একা ফেলে রেখে।
উপেন আসলে ঠগবাজ, সেয়ানা পাগল, বলেও একথা অনেকে।
হতেও পারে এ কথা ঠিক, যুক্তিও যে আছে
কিন্তু আমি ও কথা মানি না, আমায় যে বন্ধু বলে ডাকে!
আমি অনেক মানুষ দেখেছি, দেখেছি অনেক পাগল।
দেখেছি সাগর, দেখেছি নদীও
কিন্তু মানুষ আর পাগলের মোহনা দেখলাম এবারই জীবনে প্রথম!
ন'মাস হয়েছে নতুন শিশু এসেছে আমাদের পুরনো পৃথিবীতে।
ফুটপাথ আজও সেই ব্যস্তই আছে
শুধু উপেন নেই, সে যে পাগলের মোহনায় মিশে গেছে।
আমার আমি সেই একই আছি অথবা বদলে গিয়েছে মনটা।
পকেটে রয়েছে মানিব্যাগ, আছে দশটা টাকাও
জীবনে অনেক বন্ধুও আছে, কিন্তু পাগল নেই একটা।।
আরও পড়ুন পদক তো আর চকোলেট নয় তাহলে পদকজয়ীরা সেটাকে কামড়ান কেন?