পরকীয়া আর দেশাত্মবোধ এই দুটো সাবজেক্ট মেশালেই হিট সিনেমা, এটাই কি নতুন বলিউড ট্রেন্ড?
স্বরূপ দত্ত
দেশের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট। আর ১২ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে পরিচালক নীরজ পাণ্ডে এবং অক্ষয় কুমারের রুস্তম। মাত্র ৫০ কোটি টাকা বাজেটের সিনেমা ইতিমধ্যে প্রায় দেড়শো কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। সুতরাং, পরিষ্কার যে, রুস্তম হিট। এবং, সেটাও আশুতোষ গোয়ারেকরের অনেক বেশি বাজেটের ফিল্ম মহেঞ্জোদারোকে টেক্কা দিয়ে! তাই নীরজ পাণ্ডে এবং অক্ষয় কুমারদের খানিকটা অভিনন্দন তো প্রাপ্যই। আপনিও নিশ্চয়ই রুস্তম দেখে ফেলেছেন? সেক্ষেত্রে আমার রুস্তম দেখার পর কী কী মনে হল, আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নিই। আমি এবং আপনি অনেকেক্ষত্রেই একমত হতে পারি। আবার একমত নাও হতে পারি। কী এসে গেল? তবে, যদি আপনি না দেখে থাকেন এখনও, সেক্ষেত্রে আমার আরও একটা কথা আছে। আপনি রুস্তম দেখবেন না দেখবেন না, এটা একেবারে আপনি নিজে সিদ্ধান্ত নিন। এই লেখা বা আমার মতের উপর ভর করে আপনি কেন আপনার দেখতে চাওয়া সিনেমাটা দেখবেন না! এবার আসি পরপর পয়েন্টে।
১) নীরজ পাণ্ডেকে ব্যক্তিগতভাবে বেশ পছন্দ করি। প্রথমত তিনি আমাদের শহরের মানুষ। কলকাতার সঙ্গে নাড়ীর টান। তার উপর বানিয়েছেন, আ ওয়েডনেস ডে এবং স্পেশাল ছাব্বিশের মতো ফিল্ম। তাই মনে একটা জায়গা করেছিলেন নিজেই। কিন্তু তাঁর রুস্তম দেখে ধাক্কা খেলাম। সাধারণত, নীরজের ফিল্মের বৈশিষ্ঠ হল গতি। তিনি একটা দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় নিজের গল্পটা বলেন। হলই বা এই ছবির ঘটনা প্রায় ৫৬-৫৭ বছর আগের, তা বলে এত স্লো হবে কেন? তাঁর স্পেশাল ছাব্বিশও তো পুরনো দিনের ঘটনা অবলম্বনে। স্পেশাল ছাব্বিশে আর যাই হোক গতির কোনও অভাবে নেই। সেখানে রুস্তমে গতির বালাই নেই। থিম মিউজিক বা ব্যাকগ্রাইউন্ড মিউজিকের ধারও কমেছে এই সিনেমায়।
২) অক্ষয় কুমার আপনি তো নিজেকে কোনও কিছুতে বেঁধে রাখেননি কোনওদিন। বারেবারে নিজেকে বদলেছেন। প্রথমে অ্যাকশন হিরো। পরে রোম্যান্টিক হিরো। তারপর কমেডি করেছেন। একদম শেষে এসে দেশাত্মবোধক ফিল্মে অভিনয় করছেন। যখন যেটা করেছেন, তখন তাতেই আপনি বাকিদের পিছনে ফেলেছেন। বিশেষ করে কমেডি! ইদানিং, ধারাবাহিকভাবে দেশাত্মবোধক ফিল্মে অভিনয় করছেন। তার আগেরগুলো কিন্তু বেশ ভালো মানের। কিন্তু রুস্তম, বা এই মানের ফিল্মগুলোতে আরও অভিনয় করা শুরু করলে আপনিও কিন্তু সানি দেওল হয়ে উঠবেন! আশায় থাকব, নিজেকে আবার অন্য কোনও পথে সরিয়ে নেবেন। না হলে, লোকে বলবে দেশাত্মবোধ মানে কি যে, নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করেছে, তাঁকে মেরে ফেলা নাকি নৌবাহিনীর বড় বড় অফিসার যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের ছেড়ে দেওয়া? রুস্তমে কিন্তু নৌবাহিনীর বড় অফিসারদের কোনও দোষের সাজা দেওয়ার চেষ্টাও করেননি পর্দার অক্ষয় কুমার!
৩) রুস্তম এত টাকার ব্যবসা করছে, দেশাত্মবোধক ধোঁয়া তুলে নাকি পরকীয়া সম্পর্কের জেরে? এটা মনে এলো সিনেমাটা শেষ হতেই। বলে বোঝানো হল এটা দেশাত্মবোধক সিনেমা। কিন্তু গোটা সিনেমাটা দাঁড়িয়ে থাকলো, আর্জন বাজওয়া এবং ইলিনায়া ডিক্রুজের পরকীয়া সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। এই গল্পের সিনেমা তৈরি করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীকে অকারণ টেনে আনার দরকার কী! পরকীয়া আর দেশাত্মবোধ এমন দুটো সাবজেক্ট মেশালে তবেই করা যাবে ভালো ব্যবসা!- এটাই কি হয়ে উঠবে নতুন বলিউড ট্রেন্ড?
৪) গোটা সিনেমার প্রায় প্রথম দৃশ্য থেকেই পরকীয়া দেখানো হল। অক্ষয় কুমারের দেশভক্তি দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হল। যে পুরুষ নৌবাহিনীর অফিসারের অবর্তমানে, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করলেন, তাঁকে গুলি করে মেরেই দেওয়া হল। সিনেমায় এটাও বলা হল যে - ওই পুরুষের বেঁচে থাকার অধিকারই নেই। অথচ, নৌবাহিনীর অফিসারের স্ত্রী পরকীয়াতে একই দোষ করে গোটা সিনেমায় দেবীর মতো বাহবা পেয়ে গেলেন! আমাদের দেশের এই সমাজে এমনটা হয় না আদৌ। আমার বলার মানে এমন নয় যে, ওই নারীকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আমার বলার শুধু এটাই, যে পুরুষটি তিনটে গুলিতে মারা যাবে। অথচ, একই দোষে নারীটী কীভাবে দেবী হয়ে উঠবেন! সিনেমায় যেটা বলা হল, তা যদি সমাজেও হতে থাকে, পরকীয়া আর কমার কোনও কারণ, থাকবে কি?
৫) গোটা সিনেমার প্রায় ১ ঘণ্টার শুটিং হয়েছে আদালতে। এবং আদালত হলই বা ৫৫ বছর আগের। সেখানকার কথপোকথন বড্ড সাজানো মনে হয়েছে। আরও বেশি করে, আদালতের বিচারকের বেশিরভাগ সংলাপ এবং শরীরীভাষা দেখে-শুনে মনে হয়েছে, তিনি অক্ষয় কুমারের চরিত্রের প্রতি একটু অনুগতই। খটকাটা এখানেই। আদালতকে সিনেমাতেও দেখে যেন না মনে হয়, সে কারও দিকে খানিকটা ঝুঁকে রয়েছে। তাতে সামাজিক প্রভাব পড়ে।
ব্যস এইটুকুই। এবার আপনি বলুন। আর অবশ্যই যেটা বলার, নীরজ পাণ্ডে আ ওয়েডনেস ডে, স্পেশাল ছাব্বিশ, বেবি দিব্যি চলছিল। আপনার রুস্তম শুধু ভালো ব্যবসাটাই করল। কিন্তু মনে দাগ কাটতে পারল না, আগের উল্লিখিত তিনটে সিনেমার মতো। দেখার অপেক্ষায় থাকলাম, সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির বায়োপিকটা কেমন বানালেন। গুড লাক।
আরও পড়ুন ভারত ব্যাডমিন্টনে সিন্ধুর হাত ধরে পদক পাচ্ছে 'সক্রেটিস'-এর জন্য!