এই চিঠিটা তোর জন্য

Updated By: Feb 25, 2016, 09:26 PM IST
এই চিঠিটা তোর জন্য

পার্থ প্রতিম চন্দ্র

প্রিয়...ওর নাম এখনো ঠিক হয়নি

অনেক দিন ধরে লিখব লিখব ভাবছি জানিস, কিন্তু লেখা হয়ে উঠছে না। আসলে আমি তো আর লেখক নই। আমি...আমি যে ঠিক কী তা আমি নিজেও জানি না রে। তুই বরং বড় হয়ে আমার মূল্যায়ন করে দিস। যাই হোক। জানিস যেদিন তোকে প্রথমবার দেখলাম আমার একটু ভয় হয়েছিল। সবাই বলেছিল, জীবনের সবচেয়ে ভাললাগার অনুভূতি হল বাবা হওয়াটা। আমি কিন্তু তখনও সেটা টের পাইনি। আমি তখন ভাবছিলাম ইস, তোর যুদ্ধটা এই শুরু হল। এ তো ছোট মানুষ তুই এত বড় দুনিয়াটার সঙ্গে লড়তে পারবি? বেশ তো ছিলিস মায়ের পেটে। তুই হয়তো ভাবছিস বাবাটা বড্ড নেগেটিভ। আমি মনে হয় নেগেটিভই হয়ে পড়ছি রে। তবে শোন পৃথিবীটা শুধু কঠিন নয়, খুব সুন্দরও। এখানে ফেলুদা আছে, শার্লক হোমস আছে, সুকুমার রায় আছেন, পূর্ণিমা আছে, সাগর আছে, আকাশ আছে, প্রেম আছে, আবার যুদ্ধও আছে। একটু বড় হও এদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো।

জানিস তোর নামটাও এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি। আসলে কাজের বড্ড চাপ রে। কী বললি কাজ আবার কী? হা, হা, কাজ না করলে খাওয়া জোটে না রে। তবে কী ভাল কাজ করলেই যে খাওয়া জুটবে তার গ্যারান্টি নেই। একটা জিনিসে গ্যারান্টি আছে খারাপ কাজটা একটু ভাল প্যাকেটে মুড়ে পরিবেশন করলে খাওয়া কেন, অনেক কিছু পায়ের সামনে হাজির হয়ে যাবে। ধুস, কাকে বলছি, তুই তো এসবের কিছুই বুঝিস না। আসলে, তুই এখন যা বুঝিস তেমন কথা আমি জানি না রে। তুই দেখি সারাদিন পা ছুঁড়িস। আমাদের দেশ এই পা দিয়ে খেলাটায় কত নম্বরে জানিস?১৫২। তা এ দেশে পা ছুঁড়ে লাভ নেই। তুই ভাল হাসতে পারিস। আমার হাসি দেখে তোর মা কী বলেছিলো জানিস?একদম বোকা বোকা। তবে কী কেউ বোকা বোকা মানেই হাল ছেড়ে দিস না। তাতে পুরো ঠকে যাবি।

তুই বুঝলে অনেকগুলো কথা বলতাম। এখন শুধু বলব তাড়াতাড়ি চোখ দিয়ে দুনিয়াটা দেখে নে। অনেক কিছু দেখার আছে। যদিও দুনিয়ার ভূগোলটা বড় গোলমেলে রে। কেউ বলে কলকাতাটা লন্ডন, কেউ আবার বলে মার্কিন মুলুকে একটা বিশেষ জাতির কোনও ঠাঁই নেই। আমার কাছে ভূগোল মানে অবশ্য উগান্ডা। হ্যাঁ, রে উগান্ডায় একটা পাহাড় আছে। চাঁদের পাহাড়। ওই যে তোর মা বলে না, আয় আয় চাঁদা মামা, টিপ দিয়ে যা। ওই রকমই একটা চাঁদের পাহাড় আছে রে। তোর বাবা রোজ স্বপ্নে দেখে ওখানে তোকে নিয়ে যাবে। দিয়েগো অ্যালভারেস হবে তোর বাবা, আর তুই হবি শঙ্কর। দুজনে মিলে চাঁদের পাহাড় খুঁজব। তবে কী জানিস, ওখানে যেতে তো অনেক টাকা লাগে। আমার অত টাকা নেই রে। তুই আবার তা বলে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করতে যাস না। একটা জিনিস বুঝেছি টাকা জোগাড় করতে গেলে টাকা তোর সঙ্গে লুকোচুরি খেলবে। আর খেললে লুকোচুরি কেন ক্রিকেট খেলবি, টেনিস খেলবি, হকি খেলবি। কবাডি, সফটবল খেলিস না। ওগুলো এত ভাল খেলা, যে মর্যাদা দেওয়ার লোক নেই।

যাই হোক আর একটা কথা পেট থেকে যখন শিখিসনি, তখন কথা বলতে শিখলেই তোকে শিখিয়ে দেবো দেশদ্রোহী কাকে বলে। তা না হলে আবার কোনদিন না তোকেও ধরে ঢুকিয়ে দেয়। কারণ তুই ও দেখি মাঝেমাঝে কী সব দূরবোধ্য শব্দ করিস। এখন যা যুগ পড়েছে ভিডিও কাটছাট করে দেশদ্রোহী তকমা সেটে দেওয়া হয়েছে।

ধুত্‍, কী সব বলে যাচ্ছি। দুনিয়াটা কেমন তোকে বোঝাতেই পারলাম না। আসলে দুনিয়াটা হল টম নামের একটা ছেলের চিঠিটার মত। টম হল লন্ডনের ৪ বছরের তোর মতই ফুটফুটে একটা ছেলে। MH370-নামের একটা প্লেনের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। সবাই বলে প্লেনটা ধ্বংস হয়ে ধুলো হয়ে গেছে। প্লেনের যাত্রীরা সবাই মারা গিয়েছেন। টমের বাবা ওই প্লেনেই ছিল। টম কিন্তু ওসব মানে না। টম রোজ প্রতি মাসে ওর বাবার জন্য একটা করে চিঠি লেখে। চিঠির ওপর লেখা থাকে, 'বাবা জানি তুমি ফিরবে'। আমি ঠিক তেমনই একটা চিঠি লিখলাম। ওপরে লিখে দিলাম, 'বাবা জানি একদিন তুই বুঝবি, কেন আজ লিখলাম।'

 

.