ডাইনী অপবাদে গ্রামছাড়া মহিলা
মোবাইল এবং ইন্টারনেটের যুগেও যে কুসংস্কার মানুষের পিছু ছাড়েনি, তার প্রমাণ হুগলির পোলবা। ডাইনী সন্দেহে এক আদিবাসী মহিলাকে মারধর করে গ্রাম ছাড়া করল পোলবার ঝোড়োপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
মোবাইল এবং ইন্টারনেটের যুগেও যে কুসংস্কার মানুষের পিছু ছাড়েনি, তার প্রমাণ হুগলির পোলবা। ডাইনী সন্দেহে এক আদিবাসী মহিলাকে মারধর করে গ্রাম ছাড়া করল পোলবার ঝোড়োপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। ডাইনী অপবাদে স্থানীয় আদিবাসী মহিলা লক্ষী হেমব্রমের উপর দীর্ঘ দিন ধরে চলত শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। ওই মহিলাকে গ্রাম ছাড়া করার নির্দেশ দেন স্থানীয় এক ওঝা।
সুবিচারের আশায় পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন লক্ষ্মী হেমব্রম। স্থানীয় পঞ্চায়েত গ্রামের মোড়লদের সঙ্গে বসে, বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করলেও, কোনও ফল হয়নি। ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে দুই মেয়েকে নিয়ে অন্যত্র যাওয়ার উপায় ছিল না হতদরিদ্র লক্ষ্মী হেমব্রমের। পারিপার্শিক চাপে দুই মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ পুরোপুরি হয়ে গিয়েছিল। ডাইনী অপবাদ মেলায় কেউ তাঁকে কাজও দিত না। ফলে লক্ষ্মীদেবীর সংসারে ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা।
তবু সব অপবাদ, যন্ত্রণা সহ্য করে, কোনও রকমে সন্তানদের নিয়ে দিন গুজরান করছিলেন তিনি। দিনের পর দিন তাঁকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে, বাঁশ দিয়ে মারধর করা হত বলেও অভিযোগ। মেয়েদের মুখ চেয়ে সব অত্যাচার সহ্য করতেন তিনি। তবু শেষ রক্ষা হল না। একদিন গলা ধাক্কা দিয়ে লক্ষ্মী হেমব্রমকে গ্রামছাড়া করল ওই গ্রামেরই একদল মানুষ।
অবশেষে মহকুমা শাসকের উদ্যোগে লক্ষ্মী হেমব্রমকে তাঁর বাপের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। পোলবা থানাকেও বিষয়টির উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমা শাসক। জেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোলবা গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানে এধরনের ঘটনায় রীতিমত উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। গ্রামছাড়া ওই মহিলা সুবিচার চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনও ফল পাননি বলে অভিযোগ। তবে মহকূমাশাসক জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে, ওই মহিলাকে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছেন তিনি।