বর্ধমানে সিপিআইএমের মিছিলে তৃণমূলের হামলা, প্রাক্তন বিধায়ক-সহ নিহত ২

নানুরের আনন্দ দাসের পর বর্ধমানের প্রদীপ তা! ফের উন্মত্ত তৃণমূল সমর্থকদের জিঘাংসার বলি হলেন রাজ্যের এক প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক।

Updated By: Feb 22, 2012, 12:55 PM IST

নানুরের আনন্দ দাসের পর বর্ধমানের প্রদীপ তা! ফের উন্মত্ত তৃণমূল সমর্থকদের জিঘাংসার বলি হলেন রাজ্যের এক প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক।
বুধবার সকালে বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ২৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে আয়োজিত একটি মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন বর্ধমান (উত্তর) কেন্দ্রের প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক প্রদীপবাবু। আচমকাই সেই মিছিলে হামলা চালায় সশস্ত্র তৃণমূল বাহিনী। শুরু হয়, সিপিআইএম সমর্থকদের ঘিরে ধরে নির্মম আঘাত হানার পালা। উপর্যুপরি লাঠি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে লুটিয়ে পড়েন প্রদীপ তা-সহ কয়েকজন সিপিআইএম কর্মী। এর পর ইট দিয়ে নৃশংসভাবে তাঁর মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় প্রদীপবাবুর। আহতদের বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কমল গায়েন নামে সিপিআইএম-এর আরও এক নেতা মারা যান। তিনি সিপিআইএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য।
সিপিআইএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, ১৯ ফেবরুয়ারি ব্রিগেডে বামপন্থীদের সভায় জনজোয়ার দেখে ভীত তৃণমূল নেতৃত্ব প্রতিহিংসা চরিচার্থ করার জন্য পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফেই হিংসার প্ররোচণা দেওয়া হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও দুই সিপিআইএম নেতার হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। সেই সঙ্গে তার মন্তব্য, "অবিলম্বে নরহত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এই সরকারকে"। অন্যদিকে, বর্ধমানে দুই সিপিআইএম নেতার হত্যা এবং রাজ্যজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আগামীকাল সভাপতি রাহুল সিনহার নেতৃত্বে রাজ্য বিজেপি'র এর প্রতিনিধি দল রাজভবনে যাচ্ছে।

বস্তুত, যে ভাবে গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী এবং রাজ্যস্তরের নেতারা বামপন্থীদের বন্‌ধ ব্যর্থ করার আস্ফালন চালিয়েছেন, এদিনের হিংসাকে তারই অনিবার্য পরিণতি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই ঘটনার বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার বর্ধমান জেলা বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট। এদিনই বাম পরিষদীয় দলের প্রতিনিধিরা বর্ধমানের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ত‍াত্‍পর্যপূর্ণভাবে বর্ধমানের তৃণমূল নেতা সুশান্ত ঘোষের বিবৃতিতে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনওরকম নিন্দাসূচক মন্তব্য শোনা যায়নি। প্রদীপ তা এবং কমল গায়েন হত্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা জড়িত নয় দাবি করে পুরো ঘটনাকে 'জনরোষ' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। পাশাপাশি তৃণমূল নেতার মন্তব্য, "যারা খুনের রাজনীতি করে, তাদের পরিণতি এভাবেই হয়"।
তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বামেদের মিছিলের উপর সংগঠিত হামলার নেতৃত্বে ছিলেন শান্তনু গড়াই, বাপ্পা তা, পতিত পাবন তা, বাবু হালদারের মতো স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই। এদিনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া চার অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন, পতিতপাবন তা। তা ছাড়া অন্য তিন ধৃত- ছোটন চক্রবর্তী, সুরজিত তা এবং ভূপাল গোস্বামীও এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে ২৯ জুন বীরভূমের নানুরে সশস্ত্র তৃণমূল সমর্থকদের আক্রমণে নিহত হয়েছিলেন এলাকার প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক আনন্দ দাস। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এখনও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

.