বর্ধমান কাণ্ড: রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও NIA তদন্ত?
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত লাগবে, এই যুক্তিতে বর্ধমান-কাণ্ডের এনআইএ তদন্তে নারাজ রাজ্য সরকার। এরপরও যদি এনআইএ বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্ত শুরু করে তা হলে সেটাই হবে প্রথম ঘটনা। যেখানে রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে তদন্ত করবে এনআইএ। বর্ধমান-কাণ্ডে বাংলাদেশি জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাই, খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণকে শুধুমাত্র রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপার বলে দেখা উচিত নয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এনআইএ তদন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সন্ত্রাসবাদ দমনে ২০০৮-এর ৩১ ডিসেম্বর তৈরি হয় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার গঠনের প্রাথমিক ধাপ হিসাবে তৈরি এনআইএ জাতীয় স্বার্থে দেশের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে তদন্ত করতে পারে। সাধারণভাবে, রাজ্য সরকার চাইলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্ত শুরু করে এনআইএ। তবে, কেন্দ্র যদি মনে করে কোনও ঘটনায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে রাজ্যকে অগ্রাহ্য করে এনআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারে।
রাজ্যের আপত্তি অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রের নির্দেশে এনআইএ কোনও ঘটনার তদন্ত করছে, এমন নজির এখনও পর্যন্ত নেই। গত বছর অক্টোবরে পাটনার গান্ধী ময়দানে নরেন্দ্র মোদীর সভায় বিস্ফোরণের তদন্ত প্রথমে এনআইএ-কে দিতে চায়নি বিহার সরকার। যদিও, পরে এনআইএ তদন্তে রাজি হন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। গত মে মাসে চেন্নাই সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের পর এনআইএ তদন্তে আপত্তি জানান তামিলনাড়ুর ততকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। পরে রাজ্যের সম্মতি নিয়েই ঘটনাস্থলে যান এনআইএ-র গোয়েন্দারা। এখনও পর্যন্ত সারা দেশে রাজ্যের সম্মতি নিয়ে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত চুরাশিটি মামলার তদন্ত করছে এনআইএ।
রাজ্য সরকারের সম্মতির ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে দুটি ঘটনার তদন্ত করছে এনআইএ। কলেজ স্ট্রিটে মাওবাদী নেতা সদানলা রামকৃষ্ণর গ্রেফতার এবং দক্ষিণ কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে তোলা চেয়ে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের হুমকি ফোনের তদন্ত করছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি।
যদিও, বর্ধমান-কাণ্ডে এনআইএ তদন্তে নারাজ রাজ্য সরকার। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত থাকায় বর্ধমান-কাণ্ডে এনআইএ তদন্ত হওয়া উচিত। জঙ্গিদের জাল বিদেশেও ছড়িয়ে থাকায় তদন্তের ক্ষেত্রে সিআইডির সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। রাজ্যের আপত্তি অগ্রাহ্য করে বর্ধমান কাণ্ডে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কি নেবে মোদী সরকার? এখন সেদিকেই নজর সব মহলের।