পুরনো কংগ্রেসীদের হাতে তৃণমূলের জেলা কমিটির দায়িত্ব দিলেন মমতা
সেদিনও যারা ছিলেন কংগ্রেসে, তৃণমূলে এসে তারাই কার্যত হাল ধরলেন দলের। লোকসভা ভোটের পর প্রথম সম্মেলনেই দলের জেলা কমিটি ভেঙে বেশ কয়েকজন নতুন মুখকে দায়িত্বে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন এভাবে সাংগঠনিক স্তরে রদবদল করতে হল তৃণমূল নেত্রীকে। রাজনৈতিক মহলে এখন এটাই মুখ্য আলোচ্য বিষয়।
অজয় দে। চার মাস হল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এখন তৃণমূলের বিধায়ক। নদিয়ার কার্যকরী সভাপতি।
বাইচুং ভুটিয়া। পাহাড়ি বিছে তৃণমূলে যোগ দিয়েই দার্জিলিঙ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। ভোটে জিততে না পারলেও দার্জিলিঙের কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে তাঁকে।
তালিকায় রয়েছেন আরও অনেকে।
ইন্দ্রনীল সেন। মুর্শিদাবাদের পর্যবেক্ষক। কার্যত জেলা সভাপতির চেয়ারেই।
মোয়াজ্জেম হোসেন। তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন, তবে জিততে পারেননি। কিন্তু তাঁকেই মালদা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদকের।
দলের সাংগঠনিক রদবদল করতে গিয়ে কার্যত পুরনোদের ওপর আস্থা না রেখে এভাবে নব্য তৃণমূলীদের ওপরেই আস্থা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরমহলে এখন জোর জল্পনা। কেন এপথে হাঁটলেন দলের সুপ্রিমো? বেশ কয়েকটি কারণ সামনে উঠে আসছে।
প্রথমত লোকসভা ভোটের ফল। বহু বুথে তৃণমূলকে যেভাবে টপকে গেছে বিরোধীরা তা চিন্তায় রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আবার কিছু বুথে এমন ভোট পেয়েছে দল যা কার্যত অসম্ভব। ফলে তড়িঘড়ি পরিবর্তন করে নতুনদের আনতে বাধ্য হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
দ্বিতীয়ত, দলে গোষ্ঠীকোন্দল। লোকসভা নির্বাচনে বেশ কিছু আসনে ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছিল দলের গোষ্ঠীকোন্দল। তৃণমূল নেত্রীর কাছে খবর, মূলত পুরনোরাই এই গোষ্ঠীকোন্দলে মদত দিয়েছেন।
তৃতীয়ত, দাদাগিরি। বহু এলাকায় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খবর আসছে তৃণমূলের অনেক নেতার আচার আচরণ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্নভাবে দাদাগিরির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন এই নেতারা। ফলে তাঁদের সরিয়ে বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
সব মিলিয়ে নেতাজি ইন্ডোরের সম্মেলন কিন্তু সাংগঠনিক দিক থেকে রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্লক স্তর পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠন করা হবে। সেখানেও নিয়ে আসা হবে বহু নতুন মুখকে। একুশে জুলাই থেকে শুরু হবে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। সদস্য চাঁদা এক থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত। দলের সুপ্রিমো না হয় পরিবর্তন করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের কর্মীরা সবটা কতটা মেনে নেবেন সেটাই এখন দেখার।