জঙ্গলমহলে সরকারের সাফল্য দেখাতেই ব্যস্ত থাকলেন মমতা
জঙ্গলমহলের প্রতিটি সফরেই সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে তত্পর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কখনও আমলাদের ডেকে, আবার কখনও নিজের মুখেই একের পর এক দাবি করেছেন। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। দাবি করলেন, জঙ্গলমহলে পনেরো হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতীকে পুলিসের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। একশ দিনের কাজে একশ দিনই কাজ পেয়েছে পঁচিশ হাজার পরিবার। আরটিআই-এ পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে জঙ্গলমহল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেওয়া অধিকাংশ তথ্য মিলছে না।
জঙ্গলমহলের প্রতিটি সফরেই সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে তত্পর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কখনও আমলাদের ডেকে, আবার কখনও নিজের মুখেই একের পর এক দাবি করেছেন। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। দাবি করলেন, জঙ্গলমহলে পনেরো হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতীকে পুলিসের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। একশ দিনের কাজে একশ দিনই কাজ পেয়েছে পঁচিশ হাজার পরিবার। আরটিআই-এ পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে জঙ্গলমহল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেওয়া অধিকাংশ তথ্য মিলছে না।
২০১২-র গোড়ায় প্রথমবার দাবিটা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নিজের মুখে নয়, রাজনীতিকরা মিথ্যা বলতে পারেন এই যুক্তিতে ঝাড়গ্রামের জনসভায় সেদিন রাজ্য পুলিসের ডিজির হাতে মাইক ধরিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার লালগড়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ফের সেই দাবি করলেন তিনি। তবে এবার সংখ্যাটা বললেন হাজার পাঁচেক বাড়িয়ে।
অথচ আরটিআই-এ পাওয়া তথ্যের সঙ্গে সরকারের কোনও দাবিই মিলছে না। দেখা যাচ্ছে ২০১২-র শেষে, ডিআইজি অর্গানাইজেশন আরটিআই-এ যে তথ্য দিয়েছেন, তা সরকারের দাবি করা সংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিস রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-জঙ্গলমহলের এই তিন জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে চার হাজার ছশ ঊনিশ জন যোগ্য প্রার্থীকে জুনিয়র কনস্টেবল পদের জন্য অস্থায়ীভাবে বেছে নিয়েছে। চার হাজার ছশ ঊনিশ জনের মধ্যে চার হাজার চারশ তেত্রিশ জন যোগ্য প্রার্থীকে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের জুনিয়র কনস্টেবল পদে নিয়োগ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের ২৩.০৯.২০১১ তারিখে জারি করা সরকারি অর্ডার নম্বর ফোর জিরো নাইন ফাইভ-পিএলে উল্লেখ করা নিয়ম অনুযায়ী এই জুনিয়র কনস্টেবলদের নিয়োগ করা হয়েছে।
আরটিআই-এ পাওয়া তথ্যেই দেখা যাচ্ছে সিভিক পুলিস ভলেন্টিয়ার নিয়োগের জন্য দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল সরকার। ভলেন্টিয়াররা পাবেন দৈনিক একশ একচল্লিশ টাকা আট এক পয়সা। সেই হিসেবেও নশ সতেরো জনের বেশি ভলেন্টিয়ারকে নিয়োগ করা সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে পাঁচ হাজার পাঁচশ ছত্রিশে। বিতর্ক তৈরি হয়েছে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ঘিরেও। সোমবার অবশ্য বিনপুরের জনসভায় করা নিজের সেই মন্তব্য থেকে সরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত কয়েকবছরের পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেই অবশ্য ছবিটা পরিস্কার হয়ে যাবে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই,
২০০৯-১০-এ গড়ে কাজ হয়েছে ৫২ দিন।
১০৩১৫টি পরিবার ১০০ দিন কাজ পেয়েছে।
২০১০-১১-এ গড়ে কাজ হয়েছে ৩৫ দিন, ১০০ দিন কাজ পেয়েছে ৮৪৫৫টি পরিবার।
২০১১-১২-তে ২৮ দিন গড়ে কাজ হয়েছে, ১০০ দিন কাজ পেয়েছে ২৯৬৩টি পরিবার
২০১২-১৩-তে গড়ে কাজ ২৮ দিন, ১০০ দিন কাজ পেয়েছে ৫২০২টি পরিবার
দেখা যাচ্ছে কিছু পরিবার একশ দিন কাজ পেলেও, অধিকাংশ পরিবারই পায়নি। প্রতিবারই কিছু পরিবার একশ দিনের কাজে একশ দিনই কাজ পায়। বরং কয়েক বছরের খতিয়ান দেখে বোঝা যাচ্ছে, সেই সংখ্যাটাও ক্রমশ কমেছে।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে বা পরে যতবারই জঙ্গলমহলে গিয়েছেন ততবারই প্রতিশ্রুতি আর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান শোনা গেছে মুখ্যমন্ত্রীর গলাতে। অথচ আরটিআই-এর তথ্য বলছে অন্য কথা। তবে কি পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর এমন ফলাও করা দাবি?