মনোনয়ন পর্বে রাজ্য জুড়ে চলছে হামলা
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে হামলার ঘটনা অব্যাহত। সোমবারও বিভিন্ন জেলায় সিপিআইএম এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে হামলার ঘটনা অব্যাহত। সোমবারও বিভিন্ন জেলায় সিপিআইএম এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
সোমবার সিপিআইএম প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমাশাসকের দফতরে ঢুকে প্রার্থীদের মারধর করে মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। বর্ধমান ২ ব্লকের শক্তিগড়ে একটি গাড়ি ও দুটি বাস আটকানো হয়। সেখান থেকে লাঠি, টাঙি, রড-সহ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়। বাসে থাকা লোকেরা বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। পুলিস পনেরো জনকে গ্রেফতার করেছে। সিপিআইএম জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, বড়শুলে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের প্রার্থীরা। পুলিসও নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। তাই এলাকার আদিবাসী পুরুষরা মহিলা প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে তির-ধনুক নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় পুলিস তাঁদের গ্রেফতার করে।
মেমারি ১ নম্বর ব্লকেও হামলায় ১৬ জন সিপিআইএম কর্মী জখম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিআইএম। বীরভূমের আহমেদপুর, সাঁইথিয়া, ইলামবাজারে আক্রান্ত হন সিপিআইএম প্রার্থীরা। সাঁইথিয়ার ফুলুরে কংগ্রেসের পঞ্চায়েত প্রধানকে মারধর করা হয়। কসবা পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুপক্ষের মধ্যে বোমাবাজিও হয়। ভাঙচুর করা হয় একটি মোটর সাইকেল।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন সিপিআইএম প্রার্থী লুলু সরেন। অপহরণ করা হয় তাঁর প্রস্তাবক লক্ষ্মীরাম টুডু ও হলফনামায় স্বাক্ষরকারী বিল্বেশ্বর মাহাত এবং শ্যাম মাহাতকে। মারধর করা হয় সিপিআইএম লোকাল কমিটির সম্পাদক অশোক মণ্ডলকেও। মেদিনীপুর সদর ব্লকে কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ ভট্টাচার্যকে মারধর করা হয়।
আমতা দুই বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে জয়পুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঘোড়াবেড়িয়া, চিতনান, কাশমুলি ও ভাটোলা এলাকার সিপিআইএম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের আটকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি গাড়ি। এঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হুগলির গোঘাট এক নম্বর ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র তুলতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন তৃণমূল নেতা নেতা শান্তিনাথ রায় ও তাঁর সমর্থকরা। হামলায় জখম তৃণমূলের পাঁচ জন কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তৃণমূলেরই মনোরঞ্জন পাল গোষ্ঠীর লোকেরাই হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরই মনোনয়নপত্র তোলার কাজ বন্ধ করে দেয় পুলিস।
হুগলির সাংসদ শক্তিমোহন মালিক ও প্রাক্তন মন্ত্রী নিমাই মালের নেতৃত্বে বাম প্রার্থীরা আরামবাগ মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। পুলিস ব্যারিকেড করে সিপিআইএম প্রার্থীদের দলের জোনাল দফতরে পৌঁছে দেয়। সেখানেও হামলা হলে পুলিস টহল দিতে শুরু করে। গোপীনাথপুর ১ পঞ্চায়েত থেকে কংগ্রেস প্রার্থীরা চুঁচুঁড়ায় মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন। বামনতলায় তাঁদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। গুড়বাড়ি-২ পঞ্চায়েতের সিপিআইএম প্রার্থী লক্ষ্ণণ মালিকও মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন।
পূর্ব মেদিনীপুরের দেশপ্রাণ ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন সিপিআইএম প্রার্থী দিলীপ জানা। মারধর করে তাঁর মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাসন্তীর নির্দেশখালি বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ফেরার পথে আক্রান্ত হন সিপিআইএম এবং আরএসপি প্রার্থীরা। জখম ছজনকে ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নদিয়ার তেহট্ট ১ ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে হুমকি দেওয়ায় বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ফেরার পথে হাঁসখালি থানার ভায়নার কাছে দুই সিপিআইএম প্রার্থীকে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। তাঁদের বগুলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মনোনয়নপত্র পেশকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি যেরকম উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া পঞ্চায়েত ভোট যে শান্তিপূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়, ক্রমেই তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।