'ভূত' বিক্রেতাদের দিনলিপি
ভূত দেখতে যাওয়ার আগে দুই বন্ধুর কথোপকথন-
প্রথম বন্ধু: কিরে আজ ভূত দেখতে যাবি?
দ্বিতীয় বন্ধু: ভূত দেখতে যাব! (অবাক)
প্রথম বন্ধু:হ্যাঁ। ভূত। ৪ দিন থাকবে। আজ না গেলে পরে আর দেখতে পারব না। বড্ড ভিড় হয়ে যায়। ঠেলা ধাক্কা-ধাক্কিতে ঠিক জুত করে ভূতের সঙ্গে দেখা করা যায় না।
দ্বিতীয় বন্ধু:যাহ! বাজে বকছিস। ভূত দেখতে ধাক্কা-ধাক্কি হয়? এতো গুল দিস কেন?
প্রথম বন্ধু:আরে, তোর দিব্বি। সত্যি বলছি। যাবি কিনা বল? ভয় পাচ্ছিস?
দ্বিতীয় বন্ধু:ওসব ভয় টয় আমি পাই না। ('বার খেয়ে') কি করতে হবে ভূত দেখতে হলে?
প্রথম বন্ধু:কি আর করতে হবে? বিকেল ৫টায় আমি সাইকেলটা নিয়ে আমি তোর বাড়ি। তুই রেডি হয়ে থাকিস। আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই, মিস কলটা দিতে পারব না। ডট ৫টা।
দ্বিতীয় বন্ধু:ওকে বস।
সেজে গুঁজে দুই বন্ধু ভূত দেখতে বেড়িয়ে পরল। ১৫ মিনিট সাইকেল চালিয়ে মাইকেল নগর শ্মশানের কাছে (নাম পরিবর্তিত)। সেজে গুঁজে শশ্মানে? উত্তরটা হল না। পাসেই দুর্দান্ত প্যান্ডেল। কালী পুজোতে ভূত সংঘের থিম 'লাইভ ভূত'। মধ্যমগ্রাম, বারাসাত, ব্যারাকপুর এই সমস্ত জায়গা গুলিতে কালীপুজোতে প্রায়ই ভূতের লাইভ শো হয়। মানুষরূপী ভূতে মনও মজে আম জনতার।
কিন্তু আসল কাণ্ডটা যেখানে, ভূত হতে হতে ক্লান্ত ভূত আর্টিস্টরা। সবাই যে ভূত দেখে ভয় পায় তেমনটা তো নয়। কেও ভূতের হাত ধরে টানছে, কেও আবার মাথায় মারছে চাঁটি। কিরে ভূত বলে কেও আবার খিল্লিও করে। একে তো টানা ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ভূত ভূত খেলা, তার ওপর তাচ্ছিল্য। উপায় নেই। পুজোতে আলোর রোশনাইয়ে একটু আলো দেখারও উপায় নেই। কফিনে কাটছে গোটা সন্ধ্যা। কারো বাড়িতে বাবা শয্যাশায়ী, কেও কেও এই ৪-৫টা দিন ভূত সেজেই গোটা মাস সংসার চালাবেন। পেটে ভাত জোগাতে যা জুটছে তাই 'লক্ষ্মী' বলে মাথায় তুলে নিচ্ছেন এই কলাকুশলীরা। পেট বাঁচাতে চুরি নয়, বেছে নিতে হচ্ছে 'ভূতের ভেক'। পুজো শেষেই শেষ হয়ে যায় ভুতের ব্যবসা।