অসুস্থ মাকে দেখতে প্যারোলে মুক্ত মালেগাঁও বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত অসীমানন্দ রাজ্যে
রাজ্যে মালেগাঁও বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত স্বামী অসীমানন্দ। তাঁকে দশদিনের প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। অসুস্থ মা-কে দেখতে বুধবার পৌছেছেন হুগলির কামারপুকুরে। থাকবেন আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত।
ব্যুরো: রাজ্যে মালেগাঁও বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত স্বামী অসীমানন্দ। তাঁকে দশদিনের প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। অসুস্থ মা-কে দেখতে বুধবার পৌছেছেন হুগলির কামারপুকুরে। থাকবেন আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত।
হিন্দু মৌলবাদের সবচেয়ে বিতর্কিত মুখ, স্বামী অসীমানন্দের শিকড় এই রাজ্যেই।
হুগলির কামারপুকুরে তাঁর জন্ম। বাবা বিভূতিভূষণ সরকার নাম রেখেছিলেন নবকুমার। এছাড়াও জিতেন চ্যাটার্জি কিংবা ওঙ্কারনাথ হিসেবেও পরিচিত তিনি। অসীমানন্দ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষার পাঠ চোকানোর পর RSS-এ যোগ দেন নবকুমার সরকার।
১৯৭৭ সালে পাকাপাকিভাবে RSS-এর প্রচারক হন তিনি। প্রথম নিয়োগ RSS-এর শাখা বারাণসী কল্যাণ আশ্রমে। উনিশশো অষ্টআশি পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। তারপর আন্দামানে সংগঠন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। গুজরাত ও ছত্তিসগড়েও সংঘের প্রচারকের কাজ করেছেন অসীমানন্দ। তবে দুহাজার পাঁচ বা ছয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংঘের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন তিনি।
ওই সময়েই অভিনব ভারত সংগঠন তৈরি করেন প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত। তাতে যোগ দিয়েছিলেন স্বামী অসীমানন্দ।
আজমেঢ় শরিফে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রথম তাঁর নাম সামনে আসে। দুহাজার দশের উনিশো নভেম্বর হরিদ্বারের এক আশ্রম থেকে গ্রেফতার হন তিনি। দুহাজার সাতে আজমেঢ় শরিফে বিস্ফোরণের তদন্তে রাজস্থান ATS-এর হাতে গ্রেফতার হন দেবেন্দ্র গুপ্তা নামে এক সন্দেহভাজন। তাঁকে জেরা করেই জানা যায় স্বামী অসীমানন্দের নাম। এখনও পর্যন্ত মোট চারটি বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী অসীমানন্দ।
২০০৬ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণে প্রথম নাম জড়ায় অসীমানন্দের। ২০০৭-এর সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণেও অভিযুক্ত তিনি। ওই বছরেই হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণ হয়।
এছাড়া রাজস্থানের আজমেঢ় শরিফ দরগা বিস্ফোরণেও স্বামী অসীমানন্দ অভিযুক্ত স্বামী অসীমানন্দের সঙ্গেই এই চারটি বিস্ফোরণে নাম জড়িয়েছে আরও দুই মৌলবাদী সংঘ নেতার।
প্রথমজন অভিনব ভারত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত। মালেগাঁও বিস্ফোরণেই তাঁর নাম শিরোনামে আসে।
পুরোহিত পেশায় একজন সেনা অফিসার।
দ্বিতীয়জন সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তন সদস্য তিনি। মালেগাঁও বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তাঁর নামও জড়ায়। আম্বালা জেলে বসেই ক্যারাভ্যান ম্যাগাজিনে একটি বিস্ফোরক সাক্ষাত্কার দিয়েছিলেন স্বামী অসীমানন্দ।
সাক্ষাত্কারে সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ, আজমেঢ় দরগা বিস্ফোরণ ও মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণের ঘটনায় RSS প্রধান মোহন ভাগবত জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। পরে অবশ্য সাক্ষাত্কারটি অস্বীকার করেন অসীমানন্দ। তখন তাঁর অডিও টেপ সামনে আনে সংশ্লিষ্ট ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ। দুহাজার দশের আঠারোই ডিসেম্বর আদালতে স্বতঃস্ফূর্ত জবানবন্দি দিয়েছিলেন স্বামী অসীমানন্দ।
ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি মালেগাঁও, সমঝোতা এক্সপ্রেস, মক্কা মসজিদ ও আজমেঢ় দরগা বিস্ফোরণে দায় স্বীকার করেন। একাধিক হিন্দুত্ববাহী হেভিওয়েট নেতার নামও তিনি নিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। যদিও, পরে স্বামী অসীমানন্দ দাবি করেন, তাঁকে দিয়ে জোর করে জবানবন্দি দিইয়েছিল NIA। এহেন বর্ণময় এবং বিতর্কিত চরিত্র এখন এরাজ্যে। কামারপুকুরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে রয়েছেন তিনি। স্বামী অসীমানন্দকে ঘিরে রয়েছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। প্রথম স্তরে NIA-এর গোয়েন্দারা। তারপর পঞ্জাব ও হরিয়ানা পুলিস। এবং একেবারে বাইরের স্তরে রাজ্য পুলিস। প্রশ্ন উঠছে সন্দেহভাজন জঙ্গির জন্য এহেন VVIP নিরাপত্তা কেন? কীসের এত কড়াকড়ি?