আরাবুল গ্রেফতারের নেপথ্যে
কেন ঘটনার এতদিন পর গ্রেফতার করা হল আরাবুল ইসলামকে? আরাবুলের এই গ্রেফতারির মধ্যে দিয়ে কী ইঙ্গিত দিতে চাইছে সরকার? আরাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ লাগাতার অস্বীকার করে এসেছে তৃণমূল শিবির। হঠাত্ করে এই গ্রেফতারির পিছনে তাই বড়সর পরিকল্পনা রয়েছে বলেই আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা।
কেন ঘটনার এতদিন পর গ্রেফতার করা হল আরাবুল ইসলামকে? আরাবুলের এই গ্রেফতারির মধ্যে দিয়ে কী ইঙ্গিত দিতে চাইছে সরকার? আরাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ লাগাতার অস্বীকার করে এসেছে তৃণমূল শিবির। হঠাত্ করে এই গ্রেফতারির পিছনে তাই বড়সর পরিকল্পনা রয়েছে বলেই আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা।
ছয় জানুয়ারি ভাঙড়ে সিপিআইএম নেতা রেজ্জাক মোল্লার ওপর আক্রমণ, অথবা ৮ তারিখ বামনহাটায় সিপিআইএম সমর্থকদের গাড়িতে হামলা। দুটি ঘটনাতেই কাঠড়ায় আরাবুল ইসলামের নাম উঠলেও বরাবরই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে দল।
আরাবুলের পক্ষে সওয়াল কোষে ভাঙড়ের সভায় রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেছিলেন,"আরাবুলের মতো তাজা নেতা। যুব সম্প্রদায়ের সামনে মশাল ধরে এমন একজন নেতা। সে মার খাবে, আর আমাদের ভাঙড়ের লোকেরা বসে রসগোল্লা খাবে?" ভাঙড়ে প্রবীণ বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে `জনরোষ` বলেই মন্তব্য করেছিলেন মদন মিত্র। তৃণমূল নেতৃত্ব পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছেন, আক্রান্ত আরাবুলই। রাজ্যের আর এক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছিলেন, "ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়।"
রাজ্যের মন্ত্রীরা আরাবুলকে নির্দোষ সার্টিফিকেট দিলেও শেষপর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। রেজ্জাক মোল্লার ওপর হামলার ঘটনাকে সামান্য ধ্বস্তাধ্বস্তি বলে দাবি করেছিল তৃণমূল শিবির। অথচ এক্ষেত্রে কেএলসি থানায় অস্ত্র আইন এবং বিস্ফোরক প্রতিরোধ আইনের মতো গুরুতর ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিস।
রাজ্য প্রশাসনের এই হঠাত্ নেওয়া কড়া পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। তবে কী আরাবুলকে ধরে আসলে বিরোধীদেরই হাজতে ঢোকানোর রাস্তা পরিষ্কার করতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব? অশনিসংকেত দেখছেন অনেকেই।
ইতিমধ্যেই ভাঙড়ে সিপিআইএম নেতা সাত্তার মোল্লা এবং তুষার ঘোষ সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ দায়ের করেছেন তৃণমূল নেতা প্রদীপ মণ্ডল। ওই এলাকায় সিপিআইএমের শীর্ষ নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা ইতিমধ্যেই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এবারে ওই দুই প্রভাবশালী নেতা গ্রেফতার হলে এলাকায় কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়বে বাম শিবির।
অন্যদিকে আরাবুলের অবর্তমানে ভাঙড়ে তৃণমূল নেতৃত্বের রাশ ধরার লোক কিন্তু ইতিমধ্যেই তৈরি। নতুন সেই নেতা কাইজার আহমেদ। তৃণমূল সূত্রের খবর, একের পর এক অভিযোগ ওঠায় ভাঙড়ে আরাবুলকে সরিয়ে কাইজারকে তুলে আনার তোড়জোর আগেই শুরু করেছিল দল। তবে কাইজারকে সহজে জায়গা ছাড়তে রাজি ছিলেন না আরাবুল। বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পরও তাঁর গলায় ছিল হুমকির সুর। এ দিন সাংবাদিকদের আরাবুল ইসলাম জানান, "রেজ্জাক মোল্লা, সাত্তার মোল্লারা গুলি চালাল আর আরাবুল ইসলাম গ্রেফতার হল!" সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন,"ভাঙড় শান্ত থাকবে কিনা তা দলীয় কর্মীরা বুঝে নেবেন।"
আরাবুলের এই হুমকি কিছুটা হলেও সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। গ্রেফতারির পর বৃহস্পতিবার অশান্তি ছড়িয়েছে ভাঙড়ের কাশীপুর, বিজয়গঞ্জে। তবে এক্ষেত্রে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে এলাকায় নিজের প্রভাবের প্রমাণ দিয়েছেন কাইজার।
তাই বিরোধীদের মতে, আরাবুলের গ্রেফতারির মাধ্যমে একাধিক লাভের আশা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। একদিকে তাঁরা অভিযুক্ত প্রাক্তন বিধায়ককে গ্রেফতার করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছেন। পাশাপাশি ভাঙড়ে মসৃনভাবে নেতৃত্বে উঠে আসছেন কাইজার আহমেদ। এবারে সিপিআইএমের দুই প্রভাবশালী নেতাকে গ্রেফতার করতে পারলেই, ফাঁকা ময়দানে যার হাত ধরে পেরনো যাবে পঞ্চায়েতের নির্বাচনী বৈতরনী।