রাজ্য জুড়ে ভাঙচুর সারদার অফিস, হামলার শিকার এজেন্টরা

প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষোভের মাত্রা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সারদা গোষ্ঠীর অফিসে ভাঙচুর চালাচ্ছেন প্রতারিত গ্রাহকরা। হামলার শিকার হচ্ছেন সারদার গোষ্ঠীর এজেন্টরাও। সারদা গোষ্ঠীর মতো ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রবিবার পথে নেমেছিল কংগ্রেস ও সিপিআইএম।   

Updated By: Apr 22, 2013, 10:15 AM IST

প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষোভের মাত্রা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সারদা গোষ্ঠীর অফিসে ভাঙচুর চালাচ্ছেন প্রতারিত গ্রাহকরা। হামলার শিকার হচ্ছেন সারদার গোষ্ঠীর এজেন্টরাও। সারদা গোষ্ঠীর মতো ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রবিবার পথে নেমেছিল কংগ্রেস ও সিপিআইএম।
সারদা গোষ্ঠীতে লগ্নি করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন রাজ্যের হাজার হাজার আমানতকারী। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে কোটি কোটি টাকা তুলে বিপদে পড়েছেন সারদার অসংখ্য এজেন্ট। ইতিমধ্যেই আত্মঘাতী হয়েছেন কয়েকজন এজেন্ট এবং আমানতকারী। রবিবারও দিনভর সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন অভিস এবং এজেন্টদের ওপর হামলা হয় রাজ্যজুড়ে।
শিলিগুড়ির সাউদিঙি এলাকায় সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট উদয় চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর চালান আমানতকারীরা। মারধর করা হয় উদয় চৌধুরীকেও। আমানতকারীদের থেকে প্রায় দেড়কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। পরে পুলিস গিয়ে উদ্ধার করে উদয় চৌধুরীকে।
কোচবিহারের মাথাভাঙা শহরে সারদা গোষ্ঠীর বন্ধ অফিসে ভাঙাচুর চালান আমানতকারীরা। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অফিস সিল করে দেয় পুলিস।
বর্ধমানের রবীন্দ্রপল্লী ও কালনাগেট এলাকা থেকে দুই সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টকে রবিবার গ্রেফতার করে পুলিস। অভিযোগ, শনিবার রাতে মাধব দাস ও জয়ন্ত চৌধুরী নামে দুই এজেন্ট পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয় মানুষ দুজনকে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। রবিবার তাদের গ্রেফতার করে পুলিস।
বর্ধমানের মেমারি থেকে এক চিটফান্ড সংস্থার ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে পুলিস। ধৃতের নাম জয়ন্ত দাস। সারদাকাণ্ডের পর আমানতকারীরা তাঁর কাছে জমা টাকা চাইতে গেলে ঝামেলা বাধে। পরে পুলিস গিয়ে জয়ন্ত দাসকে গ্রেফতার করে।
সোনারপুর থানার নরেন্দ্রপুরে গ্রীন ব্যাঙ্ক ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা গ্রাহকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করে। গ্রাহকদের অভিযোগ, সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছিল না সংস্থাটি। সংস্থার এজেন্ট পরিতোষ পাণ্ডা পলাতক। রবিবার তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন আমানতকারীরা।
সোনারপুরেরই এপি নগরে সারদা গোষ্ঠীর অফিসে ভাঙচুর চালান এজেন্ট ও গ্রাহকরা। সোনারপুর থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা।
বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দমদমে তৃণমূল কংগ্রেসের হামলার মুখে পড়লেন সারদা গোষ্ঠীর আমানতকারী এবং এজেন্টরা। আড়াই নম্বর গেটে সারদার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পর, রবিবার সকালে এয়ারপোর্ট থানায় গিয়ে একটি ডেপুটেশন জমা দেন আমানতকারী এবং এজেন্টরা। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। এরপর তাঁরা যশোর রোড অবরোধ করেন। আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর আড়াই নম্বর গেটের দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা এজেন্ট-আমানতকারীদের মারধর করে বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় সারদা গোষ্ঠীর কার্যালয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। তাঁদের অভিযোগ, আমানতকারীদের টাকা আত্মসাত করে সংস্থার আধিকারিকরা অফিস বন্ধ রেখে পালিয়ে গিয়েছেন।
শেখ শাহাজাদা নামে এক এজেন্টের অধীনে প্রায় আশি জন সাব-এজেন্ট সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এক কোটি আশি লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিলেন। টাকা ফেরত দিতে না পারায় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মারধরের হাত থেকে বাঁচতে পুরুলিয়ায় নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন তিলক পাল নামে সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্ট। রবিবার দুপুরে কয়েকজন আমানতকারী তাঁকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে আচমকা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করে। গণরোষের হাত থেকে বাঁচতে থানায় ঢুকে পড়েন ওই এজেন্ট। পরে আমানতকারীদের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিস তাঁকে আটক করে।
সারদাকাণ্ডের প্রতিবাদে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরে রবিবার সুজন চক্রবর্তী ও কান্তি গাঙ্গুলির নেতৃত্বে মিছিল করে সিপিআইএম কর্মী সমর্থকরা।
সারদার মতো চিটফান্ডগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে এবার পথে নামল কংগ্রেস। রবিবার দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে পথ অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। মিছিলও করেন তারা। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের গ্রেফতারির দাবি জানানোর পাশাপাশি গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানানো উঠেছে।

 

.