হেলফায়ার হানায় হত জাওয়াহিরি, কেন ভয়ংকর R9X?
আর৯এক্স ওবামা প্রশাসনের আমলে তৈরি হয়। আক্রমণের সময় সাধারণ মানুষের হতাহতের হার কমানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল এই মিসাইল। জানা গিয়েছে যে একে একটি ভিন্ন ধরনের পেলোড দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। তাঁর কক্ষপথে থাকা সব কিছু টুকরো করে দেয় এই মিসাইল।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন জানিয়েছেন আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্রে নিহত হয়েছেন আল কায়দা নেতা জাওয়াহিরি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যা করার জন্য ব্যবহার করেছে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র। জাওয়াহিরির মৃত্যুর সময় অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এই গোপন হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, আল-জাওয়াহিরি তার কাবুলের বাড়িতে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন। যদিও ঘটনাস্থলের ছবি থেকে বিস্ফোরণের কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এই আক্রমণে অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
জানা গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাওয়াহিরিকে হত্যা করার জন্য ম্যাকাব্রে হেলফায়ার আর৯এক্স ব্যবহার করেছে। এটি একটি ওয়ারহেড-লেস মিসাইল। এই মিসাইলে ছয়টি রেজারের মতো ব্লেড রয়েছে বলে মনে করা হয়। জানা গিয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিতে বিস্ফোরন হয় না। জানা গিয়েছে লক্ষ্যবস্তুর বাইরে অন্যান্য সাধারণ মানুষের ক্ষতি এড়াতে ছুরির মতো এই ব্লেডগুলি নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে।
হেলফায়ার আর৯এক্স কে ফ্লাইং জিনসুও বলা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রে লক্ষ্যবস্তুর আশেপাশের এলাকায় কোনও ক্ষতি হয় না। এর কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্রে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে এমন কোনও বিস্ফোরক পেলোড নেই। সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা এড়িয়ে চরমপন্থী নেতাদের হত্যা করার ক্ষেত্রে এই ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের তালিকায় বেশ উপরে উঠে এসেছে।
R9X প্রথম ব্যবহার হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। আল-কায়দার সিনিয়র নেতা আবু আল-খায়ের আল-মাসরি সিরিয়ায় নিহত হন। একটি গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনি। যদিও, পেন্টাগন অথবা সিআইএ এই দুই মার্কিন সংস্থা এই কথা প্রকাশ্যে কখনওই স্বিকার করেনি। এই দুই সংস্থা চরমপন্থী নেতাদের হত্যাকাণ্ডের জন্য পরিচিত।
পরবর্তিকালে, ২০২০ সালে যখন মার্কিন বাহিনী সিরিয়ায় আল-কায়দার সঙ্গে যুক্ত এক প্রশিক্ষককে হত্যা করে তখন ব্যবহার হয় এই অস্ত্র। রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালেও একই অস্ত্র ব্যবহার করে আমেরিকা।
কী এই হেলফায়ার আর৯এক্স?
এজিএম-১১৪ হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র হল লেজার-গাইডেড বায়ু থেকে স্থল, সাবসনিক মিসাইল। এর উল্লেখযোগ্য অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষমতা রয়েছে। হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড, গাইডেন্স সিস্টেম এবং এর গঠনগত তারতম্যের উপর নির্ভর করে এর বিভিন্ন রূপ রয়েছে। হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্রের লাইনে একটি সর্বশেষ এবং অদ্ভুত সংযোজন হল হেলফায়ার আর৯এক্স। এই অস্ত্রে পপ-আউট সোর্ড ব্লেড ব্যবহার করা হয়েছে যা আশেপাশের এলাকার ন্যূনতম ক্ষতি করে লক্ষ্যবস্তুকে হত্যার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার জন্যও এই মিসাইল ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে করা হয়।
এছাড়াও জানা গিয়েছে যে আর৯এক্স ওবামা প্রশাসনের আমলে তৈরি হয়। আক্রমণের সময় সাধারণ মানুষের হতাহতের হার কমানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল এই মিসাইল। জানা গিয়েছে যে একে একটি ভিন্ন ধরনের পেলোড দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে ছয়টি লম্বা ব্লেডের একটি হ্যালো যা আস্ত্রের ভিতরে আটকানো হয়। পরবর্তীকালে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের কয়েক সেকেন্ড আগে ক্ষেপণাস্ত্রের খোলসের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে। এর মাধ্যমে তাঁর কক্ষপথে থাকা সব কিছু টুকরো করে দেয়। একটি পুরনো হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্রের থেকে আলাদা। আঘাতের পরে খুব কম চিহ্ন রেখে যায় এই অস্ত্র। কোনও জায়গা ঝলসে যায় না। একি সঙ্গে ফাটল অথবা ক্ষেপণাস্ত্রের প্রবেশের পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোনও জায়গায় পোড়া চিহ্ন দেখা যায় না।
আর৯এক্স কে নিনজা বোমাও বলা হয়। এর ওজন প্রায় ৪৫ কেজি। মিসাইলটি ড্রোন, হেলিকপ্টার, বিমান এবং মার্কিন বাহিনীর ব্যবহৃত হুমভিস থেকেও উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসীমা ৫০০ মিটার থেকে ১১ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই সীমা নির্ভর করে কোন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর।
এই অপারেশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি ড্রোন ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন: ৯/১১-র মাস্টারমাইন্ডের মৃত্যু ঘোষণা বাইডেনের! কে এই জাওয়াহিরি? কেন তাকে মারল আমেরিকা?
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ড্রোন হামলা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ড্রোনের অত্যধিক ব্যবহারের মার্কিন নীতি প্রায়ই সাধারণ মানুষের ক্ষতি করেছে এবং এই অভিযোগের ফলে বহু ক্ষেত্রে বিতর্কের জন্ম হয়েছে। কিন্তু হেলফায়ার ব্যবহারের হলে, পারিপার্শ্বিক ক্ষতি কমেছে বহুলাংশে।
ভারতও এই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের সেনাবাহিনিতে যুক্ত করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখিয়েছে। মার্কিন কোম্পানি জেনারেল অ্যাটমিক্স নির্মিত ৩০টি সশস্ত্র ড্রোন কেনার জন্য তিন বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এখনও এই বিষয় কোনও অগ্রগতি হয়নি। পরিকল্পনা ছিল সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে ১০টি করে এই ধরনের কমব্যাট ড্রোন দেওয়া হবে।
বোমা ফেলে, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অথবা সশস্ত্র ইউএভিকে লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করে ড্রোন হামলা চালানো সম্ভব। স্টেলথ বৈশিষ্ট্যগুলি ড্রোনগুলিকে লুকাতে সাহায্য করে। এরফলে ড্রোনগুলি আরও গভীর অনুপ্রবেশ করতে পারে সহজে।
কম হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে মার্কিন বাহিনী ড্রোন যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি, আজারবাইজান আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেন ব্যাপকভাবে ইউএভিএএস ব্যবহার করেছে।
শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয়, ড্রোন ভবিষ্যতে বাঁধ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক পরিকাঠামোর জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।