বরিস না জনসন! ব্রেক্সিটকে শিখণ্ডী করে বৃহস্পতিবার ভোট দিতে চলেছেন ব্রিটিশরা
এই নির্বাচনের উপর ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কের পাশাপাশি বিশ্বে ব্রিটেনের অবস্থান, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক মডেল নির্ভর করছে সবই। স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের একটা বড় অংশই চায় ব্রিটেন ইউরোপের সঙ্গেই থাকুক
নিজস্ব প্রতিবেদন: এক সময় যে সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না, সেই রাষ্ট্রের এক নতুন ইতিহাস লেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ চেম্বার অফ কমন্সের শীর্ষনেতা নির্বাচিত করতে চলেছে ব্রিটেন। এই ভোটে বরিস জনসন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ব্রেক্সিটের ভবিষ্যত্ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। আমরা ইউরোপের সঙ্গে আছি, কিন্তু ইউরোপের মধ্যে নেই! বলেছিলেন উইনস্টন চার্চিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সেই বিতর্কিত মন্তব্য মনে রেখেই আগামিকাল দেশের সাধারণ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ব্রিটেন। এই ভোটে এক এবং একমাত্র ইস্যু ব্রেক্সিট।
লড়াইয়ের প্রধান মুখ কনজারভেটিভ পার্টির অধুনা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং লেবার পার্টির জেরমি করবিন। জনসন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী। আর করবিন বলছেন, ক্ষমতায় এলে ইইউ'র সঙ্গে নতুন চুক্তি হবে। নতুন গণভোট হবে। অর্থাত্, ব্রিটিশদের মত পাল্টানোর একটা সুযোগ দেওয়া হবে। এই ভোটে বরিস জনসন সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ব্রেক্সিটের ভবিষ্যত্ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। এই ভোট বরিস জনসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
২০১৬-র গণভোটে ৫২% ব্রিটিশ নাগরিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাত ছাড়ার পক্ষে সায় দেয়। তিন বছর ধরে অনন্ত জটিলতায় থমকে আছে ব্রেক্সিট-প্রক্রিয়া। ব্রেক্সিট কিভাবে হবে তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করেছেন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু সংখ্যার অভাবে পার্লামেন্টে তা পাশ করাতে পারেননি। পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাশ করাতে তিন বার বিফল হয়ে গদি ছাড়তে হয় টেরেসা মে-কে, তাঁর জায়গায় এসেছেন বরিস জনসন। তিনিই এখন ব্রেক্সিটপন্থীদের মুখ, এই ভোটে তাঁর স্লোগান 'গেট দ্য ব্রেক্সিট ডান'।
উল্টোপথে হেঁটে জেরমি করবিনের ইস্তেহার, ব্রিটেনের ভাগ্যকে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি, সাম্রাজ্যবাদের 'আসল' ইতিহাস পড়ানো, জালিয়ানওয়ালাবাগের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার প্রতিশ্রুতি। সিরিয়া থেকে আগত অভিবাসী সমস্যা, ইউরোপের অন্য দেশের খবরদারি, ব্রিটেনের স্বাস্থ্য পরিষেবায় আর্থিক সংস্থানের প্রশ্নে একসময় ব্রেক্সিটকেই সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছিল ব্রিটেন। কিন্তু তার পর থেকে ব্রিটিশ রাজনীতি ক্রমশ দিশেহারা হয়েছে। এই ভোট আরও একবার ব্রিটেনের মসনদে স্থায়ীত্ব আনতে পারে।
আরও পড়ুন- ষোলো আনা বাঙালিয়ানা, ধুতি-পঞ্জাবিতে অভিজিত্, শাড়িতে স্ত্রী নিলেন নোবেল
এই নির্বাচনের উপর ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কের পাশাপাশি বিশ্বে ব্রিটেনের অবস্থান, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক মডেল নির্ভর করছে সবই। স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের একটা বড় অংশই চায় ব্রিটেন ইউরোপের সঙ্গেই থাকুক। তাই এই ভোটে বরিস জনসন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ব্রিটেন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।
এজন্যই একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে ব্যাখ্যা করছে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম। ব্রিটেনের জনমত সমীক্ষা বলছে, বড় ব্যবধানে জিতবেন বরিস জনসন। কিন্তু ফল ত্রিশঙ্কু হলে? সেক্ষেত্রে অন্যদের সাহায্যে সরকার গড়তে পারেন জনসন। তবে এই ভোটে ব্রেক্সিট-সমাধান স্পষ্ট না হলে, আরও একবার ব্রিটেনের প্রাপ্তি হবে সেই রাজনৈতিক ডামাডোলই!