আর্মেনিয়া-আজারাবাইজান যুদ্ধে আজারবাইজানের পাশে পামুকের দেশ
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দেশ দু'টি স্বাধীন হয়। তার পরে থেকে রাশিয়ার ইন্ধনে আর্মেনীয়রা ধীরে ধীরে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের আশেপাশের বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নেয় বলে অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদন: দক্ষিণ ককেশাসের নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইরান-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহবান জানিয়েছে।
নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে অবশ্য চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরোধ। এই অঞ্চলের মালিকানা কার-- এই প্রশ্নে দু'টি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থা ছিলই। পাশাপাশি সামরিক সংঘর্ষও হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভাবে এলাকাটি আজারবাইজানের বলেই স্বীকৃত। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দেশ দু'টি স্বাধীন হয়। তার পরে থেকে রাশিয়ার ইন্ধনে আর্মেনীয়রা ধীরে ধীরে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের আশেপাশের বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নেয় বলে অভিযোগ।
রবিবার আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে নতুন করে লড়াই শুরু হয়। আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, রবিবার ভোর ৪টে নাগাদ হামলা চালায় আজারবাইজান। জবাবে আর্মেনিয়ার বাহিনী প্রতিপক্ষের দু'টি হেলিকপ্টার, তিনটি ড্রোন ও তিনটি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে। অন্য দিকে, আজারবাইজানের দাবি, হামলার শিকার হওয়ার পরেই তারা পাল্টা হামলা চালায়। তারাও ২০ জন আর্মেনীয় সৈন্য হত্যা এবং ডজন খানেক ট্যাঙ্ক ও কিছু ভারী অস্ত্র ধ্বংসের দাবি করেছে।
এদিকে তুরস্ক জানিয়ে দিয়েছে, তারা আজারবাইজানের পক্ষে থাকবে। ২৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার সকালে হঠাৎ করে যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পরে আজারবাইজানের পক্ষে সমর্থন জানাতে তুরস্ক একটুও দেরি করেনি।
তবে, বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই যুদ্ধে যদি তুরস্ক জড়িয়ে পড়ে তা হলে সেটা মস্কোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই ককেশাসের পাহাড়ি অঞ্চলে সামরিক অভিযানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তুরস্ক নিশ্চয়ই রাশিয়ার কথা মাথায় রাখবে। অনেকে মনে করেন, ককেশাস অঞ্চলে তুরস্ক হস্তক্ষেপ করলে সেটা রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতে পারে।
আজারবাইজানের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক অবশ্য ঐতিহাসিক। দু'টি দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে 'এক জাতি, দুই দেশ' নীতিতে বিশ্বাসী বলেই খববর। তুরস্ক ও আজারবাইজানের সাধারণ মানুষও তাঁদের একই জাতি বলে মনে করে। যদিও তাঁরা কখনও এক রাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তুর্কী ও আজেরিরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের উৎস এক এবং তাঁরা একই ইতিহাস ও সংস্কৃতির উত্তরসূরি।
তা না হয় হল। কিন্তু এখন এই বিশ্ব-পরিস্থিতিতে তুরস্ক কেন আজারবাইজানের পাশে? তুরস্কের বক্তব্য হল-- এত বছরের কূটনৈতিক চেষ্টা ও রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার পরেও নাগোরনো-কারাবাখ বিবাদের কোনও সমাধান হয়নি। তাই তারা মনে করে, নাগোরনো-কারাবাখ থেকে আর্মেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে আজারবাইজান যদি ওই অঞ্চল দখল করে নিতে পারে, একমাত্র তা হলেই সেখানে শান্তি ফিরে আসবে।
শান্তি কি ফিরবে? বলা যাচ্ছে না। কেননা, আর্মেনিয়া এর মধ্যেই পরমাণু বোমার হুমকি দিয়ে রেখেছে। অনেকেই মনে করছেন, তা হলে কি তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল!
আরও পড়ুন: গাঁজা সেবন করতেন, প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী