রাতারাতি অবস্থান বদল পাকিস্তানের: সরবজিত্‍ নয়, মুক্তি পাচ্ছেন সুরজিত্‍ সিং

সরবজিত্ সিংয়ের মুক্তি নিয়ে রাতারাতি অবস্থান বদলে ফেলল পাকিস্তান। মঙ্গলবার গভীর রাতে পাক প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ফারহাতুল্লা বাবর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, জানান, সরবজিত সিং নয়, সুরজিত্ সিং নামে অপর এক জেলবন্দি ভারতীয়কে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

Updated By: Jun 27, 2012, 09:00 AM IST

সরবজিত্ সিংয়ের মুক্তি নিয়ে রাতারাতি অবস্থান বদলে ফেলল পাকিস্তান। মঙ্গলবার গভীর রাতে পাক প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ফারহাতুল্লা বাবর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, জানান, সরবজিত সিং নয়, সুরজিত্ সিং নামে অপর এক জেলবন্দি ভারতীয়কে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সরবজিতের মুক্তির খবরকে বিভ্রান্তি বলেও উল্লেখ করেছে ইসলামাবাদ। ফারহাতুল্লা পিটিআইকে জানান, যা জানিয়েছেন, তা হল.... 
"আমার মনে হয় কোথাও একটা  ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সরবজিতের বিষয়টা ক্ষমা করার নয়। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সরবজিত নয়। যাঁকে ছাড়া হবে, তিনি সুরজিত সিং। তিনি সুচা সিংয়ের ছেলে। ১৯৮৯ সালে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট গুলাম ইশা খান প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পরামর্শে সুরজিত সিংয়ের মৃত্যুদণ্ড রদ করেছিলেন।"

মুক্তি ঘিরে চরম বিভ্রান্তি কি ভুলবশত না কি রাতারাতি অবস্থান বদল করল পাকিস্তান, সেই বিতর্কে না গিয়ে সরবজিতের মুক্তির জন্য পাকিস্তানের কাছে ফের আবেদেন জানিয়েছে ভারত। বিদেশমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণ মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে জানান, মানবতার সঙ্গে সরবজিতের বিষয়টি বিচার করার জন্য পাক প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন জানাচ্ছে ভারত। একইসঙ্গে, সুরজিত সিংকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারত। তবে সরবজিত ও সুরজিত, এই দুজনের নাম নিয়ে যে বিভ্রান্ত তৈরি হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি বিদেশমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে কথা না বলে, এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না।
সরবজিত্ ও সুরজিত্ দুজনেই এই মুহূর্তে রয়েছেন লাহোরের কোট লাখপত জেলে। দুই ভারতীয়কেই চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পাকিস্তানের সেনাশাসক জিয়াউল হকের আমলে গ্রেফতার হন সুরজিত্ সিং। ১৯৮৯ পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট গুলাম ইশা খান সুরজিত্ সিংয়ের মৃত্যুদণ্ড রদ করেন সুরজিত সিংয়ের মৃত্যুদণ্ড রদের জন্য পরামর্শ দেন তত্কালীন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। কিন্তু সরবজিত সিংয়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার যে অভিযোগ এনেছে, তা চরবৃত্তির থেকেও গুরুতর। ৯৯০ সালে লাহোর ও মুলতানে দু`টি পৃথক বিস্ফোরণে ১৪ জনকে হত্যার দায়ে পঞ্জাবের এই বাসিন্দাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল পাক সুপ্রিম কোর্ট। তাঁকে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার এজেন্ট হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছিল। যদিও সরবজিতের পরিবারের দাবি, রাতের অন্ধকারে ভুলক্রমে সীমান্ত পেরিয়ে ১৯৯০ সালের অগাস্ট মাসে পাক ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি।
চলতি বছরের ২৮ মে প্রেসিডেন্ট জারদারির ক্ষমাপ্রার্থনার করেছিলেন সরবজিত্‍। জেলবন্দি অবস্থায় এটি ছিল তাঁর পঞ্চম আবেদন। পাক আইনমন্ত্রকের তরফে পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জারদারি সেই সুপারিশ মেনে বিশেষ সাংবিধানিক অধিকারবলে সরবজিত্‍‌কে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জেনারেল পারভেজ মুশারফের জমানায় ভারতের হয়ে ও গুপ্তচরবৃত্তি ও পাকিস্তানের মাটিতে নাশকতার দায়ে দোষী সাব্যস্ত সরবজিতের ফাঁসির দিনক্ষণ স্থির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তত্‍কালীন পাক মানবাধিকার সংক্রান্ত মন্ত্রী আনসার বার্নির তত্‍পরতায় মুলতুবি হয় মৃত্যুদণ্ড। পরবর্তীকালে ২০০৮ সালে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ধৃত কাশ্মীর সিং ৩৪ বছর পর পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সরবজিত্‍ সিংয়ের মুক্তির দাবি ওঠে পাক নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির তরফে।

চলতি বছরের ৮ এপ্রিল জারদারির আজমেঢ় সফরের সময় সরবজিত্‍ সিংয়ের বোন দলবীর কউর ও মেয়ে স্বপ্নদীপ তাঁকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। সরবজিতের মুক্তি চেয়ে এক লক্ষ ভারতীয় নাগরিকের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠিও পাঠান হয় পাক প্রেসিডেন্টের কাছে। তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে জারদারির আজমেঢ় দর্শনের পরই, গত ১১ এপ্রিল একটি খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পাক ডাক্তার খলিল চিস্তিকে মুক্তি দেয় ভারত। আর এর পরই ২২ বছর ধরে পাক জেলে বন্দি সরবজিত্‍ সিংয়ের মুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।
 
তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে মঙ্গলবার সন্ধেয় যে খবর সামনে আসে, তা হল পাকিস্তান সরকার সরবজিত সিংকে মুক্তি দিতে চলেছে। জানা যায়, পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জরদারি সরবজিতের মৃত্যুদণ্ড রদ করেছেন। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ চোদ্দ বছর। সরবজিত যেহেতু ইতিমধ্যেই বাইশ বছর পাকিস্তানের জেলে কাটিয়ে দিয়েছেন, তাই তাঁকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার জন্য অভ্যন্তরীন মন্ত্রী রেহমান মালিকের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পাক আইনমন্ত্রক। বিষয়টি জানার পরই পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা। কিন্তু রাত বাড়তেই বদলে যায় ছবিটা। পাক প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরবজিতের মুক্তির খবর চাউর হওয়া সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক। এমনকি আইনমন্ত্রী ফারুক নায়েক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রককে সুরজিত্ সিংয়ের মুক্তির বিষয়ে অবগত করেছেন বলেও জানিয়ে দেন তিনি। 

.