প্রকৃতি যখন ক্ষেপে ওঠে তখন ভগবানকেও রেয়াত করে না, প্রমাণ করল নেপালের ভূমিকম্প
মাত্র ৩ মাসের আগের ঘটনা। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল নেপাল। বলি হয়েছেন ৮,৮০০ মানুষ। প্রকৃতির সেই ধ্বংসলীলা রেহাই দেয়নি নেপালের জীবিত দেবী ধন কুমারী বজ্রচার্যকেও। ৩০ বছর একাকী জীবন কাটানোর পর ভূমিকম্পের ভয় রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে ধন কুমারীকে।
ওয়েব ডেস্ক: মাত্র ৩ মাসের আগের ঘটনা। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল নেপাল। বলি হয়েছেন ৮,৮০০ মানুষ। প্রকৃতির সেই ধ্বংসলীলা রেহাই দেয়নি নেপালের জীবিত দেবী ধন কুমারী বজ্রচার্যকেও। ৩০ বছর একাকী জীবন কাটানোর পর ভূমিকম্পের ভয় রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে ধন কুমারীকে।
প্রকৃতি যখন ক্ষেপে ওঠে তখন ভগবানকেও রেয়াত করে না। প্রাণ বাঁচাতে তাই পথে নামতে হয়েছে নিজেকে জীবিত দেবী হিসেবে দাবি করা ৬৩ বছরের ধন কুমারী। তিন দশকে প্রথম বার পথে নামলেন তিনি। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয়, ভূমিকম্পের আগে পর্যন্ত জীবনে কোনওদিন মানুষের মাঝে পায়ে হাঁটেননি তিনি। ১৯৫৪ সালে মাত্র ২ বছর বয়সে পাটানের কুমারী দেবী হন তিনি। সেই থেকে দক্ষিণ কাঠমাণ্ডুর পাটান শহরের ঘরে বন্দী থেকেছেন তিনি। মাঝে মাঝে সুসজ্জিত কাঠের পালকি চরেই জনসমক্ষে এসেছেন। গত ৩ দশক জনসমক্ষে আসনেনি, কথাও বলেননি কারও সঙ্গে।
একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি জানিয়েছেন, "কোনওদিন ভাবিনি এইভাবে ঘরে ছেড়ে বাইরে আসবো। এখন মানুষের মনে ভক্তি নেই বলেই হয়তো ভগবান রেগে গিয়েছেন।" হিন্দু দেবী তালেজুর জাগতিক রূপ হিসেবে পুজো করা হয় তাকে। তবে কাঠমাণ্ডুর জীবিত দেবীর মতো পাটান কুমারীকে মন্দিরে থাকতে হয় না। পরিবারের সঙ্গেই থাকতে পারেন তিনি। শুধমাত্র উত্সবের দিনে ভক্তদের জন্য বাইরে আনা হয় তাকে। ধন কুমারী জানালেন, উত্সবের সময় বাইরে যেতে আমার খুব ভাল লাগে। পাটানের সরু রাস্তায় আমার দর্শনের আশায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে ভক্তরা।
সাধারণত, ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পরই দেবী পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ধন কুমারী কোনওদিন রজস্বলা না হওয়ায় ৩০ বছর বয়সেও তাকে পুজো করা হতো। ১৯৮৪ সালে নেপালের নতুন রাজা দীপেন্দ্র তার পুজোয় বাধা দেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সী দীপেন্দ্রর বক্তব্য ছিল ধন কুমারীর বয়স বেশি। তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে পুজো করা হোক। সরিয়ে দেওয়া হয় ধন কুমারী বজ্রচর্যকে। সেই অপমান আজও ভোলেননি তিনি। জানালেন, আমাকে সরিয়ে দেওয়ার কোনও কারণ ছিল না। আমি রেগে গিয়েছিলাম...আমি মনে করতাম ভগবান আমার মধ্যে রয়েছেন। তারপর থেকে একা জীবন কাটাতে থাকেন বজ্রচর্য।
এখনও আগের জীবনের মতোই প্রতিদিন সকালে ওঠেন, লাল রঙের এমব্রয়ডারি করা স্কার্ট পরেন। আগের মতো করেই চুল বাঁধেন, কাজল পরেন। উত্সবের দিন লাল ও হলুদ গুঁড়ো চন্দন দিয়ে মাথায় তৃতীয় নয়ন আঁকেন। ব্রাসো দিয়ে সাপের মতো কারুকাজ করা কাঠের সিংহাসনে বসেন। লাল ইঁটের ঘরে ভক্তরা শনিবার করে এসে দর্শন করেন তার। তাকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ৩০ বছর পরও এটা নিজেক দায়িত্ব মনে করেন ধন কুমারী।
২০০১ সালে তার তত্বাবধানেই কুমারী নির্বাচিত হন ধন কুমারীর ভাইঝি চনিরা। চনিরা জানালেন, "ভূমিকম্পের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই প্রার্থনা করেন উনি। খুব দুঃখ পেয়েছেন। গত বছর আমাদের জ্যোতিষি জানিয়েছিলেন উনি ঘর ছেড়ে বেরোবেন। আমরা ভেবে পাচ্ছিলাম না তা কীভাবে সম্ভব হবে। এমন কিছু হবে ভাবতেও পারিনি।"