প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট কি কৌলিন্য হারাচ্ছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট শুরু হয়েছিল একটি স্বাস্থ্যকর বাতাবরণে। উদ্দেশ্য ছিল, প্রার্থী টেলিভিশন বিতর্কে নিজেদের এজেন্ডা ও যুক্তি পেশ করবেন। ৫৬ বছর পর, হিলারি ও ট্রাম্পের যুক্তিযুদ্ধ পরিণত হল ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুড়িতে। প্রশ্ন উঠছে, প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট কি তার কৌলিন্য হারাচ্ছে?
ওয়েব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট শুরু হয়েছিল একটি স্বাস্থ্যকর বাতাবরণে। উদ্দেশ্য ছিল, প্রার্থী টেলিভিশন বিতর্কে নিজেদের এজেন্ডা ও যুক্তি পেশ করবেন। ৫৬ বছর পর, হিলারি ও ট্রাম্পের যুক্তিযুদ্ধ পরিণত হল ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুড়িতে। প্রশ্ন উঠছে, প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট কি তার কৌলিন্য হারাচ্ছে?
বেনজির কাদা ছোড়াছুড়ি। ২৪০ বছরের পুরনোর গণতন্ত্রের মাথায় নতুন মুকুট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিতর্কে সৌজন্যের লেশমাত্র নেই। তবে এমনটা ছিল না।
বিতর্কের ইতিহাস
১) ১৮৫৮ সালে সেনেটর নির্বাচনে A ডগলাসের সঙ্গে প্রথম প্রকাশ্যে বিতর্কে লড়েন অ্যাব্রাহাম লিঙ্কন
২) ১৯৪০ সালে ওয়েনডেল উইলকির বিতর্কের চ্যালেঞ্জ নিতে অস্বীকার করেন ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট
৩) মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে বিতর্কের প্রথম প্রবেশ ১৯৬০ সালে। শিকাগোর স্টুডিওয় রিপাবলিকান রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নেন ডেমোক্র্যাট জন এফ কেনেডি
তারপর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে গেছে স্টুডিও বিতর্ক।
ট্রাম্প বনাম হিলারি
১) ২৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের হ্যাম্পস্টেডের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় ট্রাম্প ও হিলারির প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট
২) পরদিনের জনমত সমীক্ষা বলছে ৪৫% সমর্থন পেয়েছেন হিলারি, ৪১% সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প
৩) ৯ই অক্টোবর মিসৌরির সেন্ট লুইয়ের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট
পরদিনের জনমত সমীক্ষা বলছে, ৪৬% সমর্থন পেয়েছেন হিলারি, ৪১% সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প।
অর্থাত্, প্রচারে যত ঝড় তুলেছিলেন যুক্তির যুদ্ধে তার প্রতিফলন ঘটাতে পারলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু, ডিবেটে অ্যাডভান্টেজ পেতে কম চেষ্টা করেননি। নিউ ইয়র্কে ডিবেটের আগে তুলে আনেন বিল ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির পুরনো অভিযোগ। কিন্তু, তারপর তাঁর নিজের যৌন কেলেঙ্কারিগুলিই প্রকাশ্যে আসে। সেই থেকে শুরু হয় ব্যক্তিগত আক্রমণের পরম্পরা।
১৯ অক্টোবর লাস ভেগাসের নেভাডায় তৃতীয় তথা শেষ প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মিলিত হন হিলারি ও ট্রাম্প। এই বিতর্কে সৌজন্যের লেশমাত্র ছিল না। প্রথাগত করমর্দন এড়িয়ে সরাসরি মঞ্চে উঠে পড়েন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। বিতর্ক গড়াল কর সংস্কারে। এই ইস্যুতে রক্ষণশীল ট্রাম্প। হিলারি আক্রমণ করলেন ট্রাম্পের কোম্পানির আউটসোর্সিংকে।
হিলারি ক্লিন্টন
এই প্রসঙ্গেই উঠল পুতিন প্রসঙ্গ। ট্রাম্পকে পুতিনের হাতের পুতুল বললেন হিলারি। ট্রাম্প বললেন হিলারি, ওবামাকে বোকা বানিয়েছেন পুতিন। শুরু বাকযুদ্ধ। হিলারিকে নীচ মহিলা বলে গালাগালি দিলেন ট্রাম্প। তৃতীয় বিতর্কের শেষে জনমত সমীক্ষায় ট্রাম্পের থেকে প্রায় ১২% সমর্থনে এগিয়ে ছিলেন হিলারি। কিন্তু, বিতর্কেই নির্বাচনের মীমাংসা হয়নি। ইমেল বিতর্কে FBI তদন্ত শুরু হতেই হিলারির সমর্থনে ভাটার টান। ফের লড়াইয়ে ট্রাম্প। শেষতম জনমত সমীক্ষায় হিলারি ক্লিন্টন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে ৬% ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। তবে FBI হাতিয়ারকে ভোঁতা হতে দিতে রাজি নয় ট্রাম্প শিবির। রিপাবলিকানরা প্রচার করছে হিলারি ভোটে জিতলে দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে। কারণ হিলারি নাকি ইমেল কেলেঙ্কারিতে জেলে যাবেন। পাল্টা প্রচারে হিলারি শিবিরও। ডেমোক্র্যাটরা বলছে, ট্রাম্প মহিলাদের অসম্মান করেন, বর্ণবৈষম্যে উস্কানি দেন, যুদ্ধবাজ। রিপাবলিকানদের একটা বড় অংশও এখন ট্রাম্পকে পছন্দ করছে না বলে দাবি ডেমোক্র্যাটদের। কিন্তু, মার্কিন জনগণ কার প্রচারে কান দিল, তা জানা যাবে মঙ্গলবার।