প্রাক্তন আইএস মহিলাকে দেশে ফেরাতে অনীহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ নেই হুদার। নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ভিত্তিহীন
নিজস্ব প্রতিবেদন: পাঁচ বছর আগের কথা। আমেরিকার হুদা মুথানা তখন ১৯ বছর বয়সের এক সদ্য যুবতী। ফেসবুকে আইএসের পোস্ট ও বার্তায় উত্সাহিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন সিরিয়া যাবেন। যোগ দেবেন আইএসে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ২০১৪ সালে হুদা পাড়ি দিলেন সিরিয়ায়। যোগ দিলেন উগ্রপন্থী দলে। পুরোটাই মা-বাবাকে না জানিয়ে। এমনকি সিরিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি জ্বালিয়ে দিলেন নিজের মার্কিন পাসপোর্ট। টুইটারে একটি ছবিও পোস্ট করেন। ঢুকে গেলেন আইএসের উগ্রপন্থার জগতে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলতে থাকল সন্ত্রাসী প্রচার। নিদান দিলেন, মেরে ফেলা হোক মার্কিনীদের।
সিরিয়ায় আইএসে ঘুন ধরতেই নিজের ভুল বুঝতে পারেন হুদা। ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানেই বাঁধে বিপত্তি। হুদা ও তাঁর শিশুপুত্রকে দেশে প্রবেশাধিকার দিতে নারাজ মার্কিন মুলুক।
বুধবার টুইট করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, "আমি সেক্রেটারি মাইক পম্পেওকে নির্দেশ দিয়েছি এবং উনিও আমার সঙ্গে সহমত, কোনওভাবেই যেন দেশে ফিরতে না দেওয়া হয় হুদা মুথানাকে।"
I have instructed Secretary of State Mike Pompeo, and he fully agrees, not to allow Hoda Muthana back into the Country!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) February 20, 2019
মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ নেই হুদার। নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ভিত্তিহীন। যুক্তি দেখানো হয়েছে, অন্য দেশ থেকে আগত কূটনীতিকদের সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলে, নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় না। পাল্টা যুক্তি হিসেবে হুদার আইনজীবীর দাবি, ১৯৯৪ সালে যখন নিউ জার্সিতে জন্ম নেন হুদা, তখন তাঁর বাবা আর কূটনীতিবিদ ছিলেন না। হুদার জন্ম শংসাপত্রও পেশ করা হয়।
নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ২৪ বছরের হুদা। এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য সন্তান-সহ দেশে ফেরা। প্রয়োজনে যে কোনও শাস্তি মাথা পেতে গ্রহণ করতেও রাজি।আইনজীবীকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি জানান,'আমি আগের কথা-বার্তা, পরিবারের প্রতি অন্যায় এবং দেশের বিরুদ্ধে অনাচারের জন্য অনুতপ্ত'।
অন্যদিকে, এক সপ্তাহ আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইটে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং অন্যান্য ইউরোপিয় দেশগুলিকে সিরিয়ায় মার্কিন সেনার ৮০০ ইউরোপীয় যুদ্ধবন্দিকে দেশে ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ জানান। তিনি আরও লেখেন, "ওদের ফিরিয়ে নিয়ে বিচার শুরু না করা হলে মার্কিন সেনা বন্দিদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।"
The United States is asking Britain, France, Germany and other European allies to take back over 800 ISIS fighters that we captured in Syria and put them on trial. The Caliphate is ready to fall. The alternative is not a good one in that we will be forced to release them........
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) February 17, 2019
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দ্বিচারিতা নিয়ে সরব হয়েছেন সমালোচকরা। হুদার মতো একজন যুবতীকেই যেখানে তিনি প্রবেশাধিকার দিতে নারাজ, সেখানে কিভাবে তিনি ইউরোপিয়ান দেশগুলিকে এহেন অনুরোধ করতে পারেন, তাই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন- 'গ্রে' থেকে 'কালো' তালিকাভূক্তির পথে পাকিস্তান, সতর্ক করল FATF
সম্প্রতি শামিনা বেগম নামে এক আইএস পন্থী যুবতীর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব খারিজ করে ব্রিটেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানানো হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে সেই দাবি অস্বীকার করা হয়। নাগরিকত্বহীন শামিনা ৮ মাসের অন্তঃসত্বা।