জঙ্গলেও থাবা বসিয়েছে করোনা, প্রাণ বাঁচাতে নতুন পথে আমাজনের আদিবাসীরা
এর আগেও হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের ভাইরাস হানা দিয়েছে মূল জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা আদিবাসীদের ডেরায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন- ব্রাজিলের ইনডিজেনাস পিপলস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত আমাজনের সাত হাজার সাতশো জন আদিবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ৩৫০ জন। তবে আদিবাসীদের মধ্যে রোগ ছড়ানোর প্রবণতা এই প্রথম নয়। এর আগেও হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের ভাইরাস হানা দিয়েছে মূল জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা আদিবাসীদের ডেরায়। সেসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল আদিবাসীদের মধ্যে। তবে করোনা একেবারে আলাদা জাতের শত্রু। অনেক বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারেনি বিজ্ঞানও। আদিবাসীরা তাই ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে তাই তারা নতুন পথ ধরেছে।
জানা যাচ্ছে, ব্রাজিলের জনপদের কাছাকাছি থাকা আদিবাসী গ্রামগুলো এখন ফাঁকা। সেখানকার হাজার হাজার আদিবাসীরা গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যাচ্ছে। করোনা থেকে বাঁচলেও গভীর জঙ্গলের অন্য অনেক বিপদ তাদের প্রাণসংশয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। আমাজনে আদিবাসীদের একটি গ্রাম ক্রুজইরিনহো। সেই গ্রাম এখন ফাঁকা। করোনা মহামারির হাত থেকে রক্ষা পেতে ওই গ্রামের সবাই আমাজনের গভীরে পালিয়ে চলে গিয়েছেন। আরেকটি গ্রাম উমারিয়াকাও। ক্রুজইরিনহো থেকে সেখানে নৌকায় যেতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ। মিজুরানা উপজাতিদের বাস সেখানে। মোট ৩২ টি পরিবারের মধ্যে ২৭ টি আরো গভীর জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- কচুরিপানায় ঢেকেছে জল! অস্তিত্ব সংকটে ঐতিহাসিক দুই নদী টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস
করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে ওইসব অঞ্চলে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আদিবাসীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে খেয়াল রেখেছিল। কিন্তু এখন ব্রাজিলে ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে সেইসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এমন সময় আদিবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই গভীর অরণ্যে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই তাদের কাছে।
পেরু ও কলম্বিয়া সীমান্তের কাছে থাকা উত্তর ব্রাজিলের পাঁচ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে ছড়ানো আদিবাসী গ্রামগুলি প্রায় ফাঁকা। গ্রামে ঢোকার পথে রাস্তার ওপর টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে হাতে আঁকা চিহ্ন। সেই চিহ্ন বুঝিয়ে দিচ্ছে, আদিবাসী এলাকায এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য ফাঁকা।