শীতলকুচিকাণ্ডে নানা প্রশ্ন-রাজনীতি, ফুটেজ প্রকাশ করলেই তো ল্যাটা চুকে যায়!
বুথের ভিতরের সমস্ত ঘটনা রেকর্ডিং হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) সূত্রের খবর।
নিজস্ব প্রতিবেদন: উন্মত্ত জনতা ঘিরে ধরেছিল। শূন্যে গুলি করে হঠানো যায়নি। তাই আত্মরক্ষায় গুলি করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শীতলকুচি নিয়ে আপাতত এই তত্ত্বই উঠে এসেছে। কিন্তু যেটা নেই, তা হল ঘটনাস্থলের ছবি! এই ২০২১ সালে কোনও ঘটনার ছবি নেই, এটা তো কল্পনাতীত। কেন নেই? কোথায় সিসিটিভি ফুটে? শীতলকুচি রাজনৈতিক-মেরুকরণের টানাপোড়েনের মাঝে মোক্ষম প্রশ্নের জবাব নেই।
শনিবার কোচবিহারের শীতলকুচিতে (Sitalkuchi) কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। ঠিক কী ঘটেছিল? সিআরপিএফ বিবৃতি জারি করে জানিয়েছিল, এক যুবক অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাহিনী মারধর করেছে বলে গুজব রটে যায়। ঘটনাস্থলে জড়ো হয় ৫০-৬০ জন দুষ্কৃতী। ভোটদানে বাধা দেওয়া, পোলিং এজেন্ট ও আশা কর্মীকে মারধর করে তারা। সিআইএসএফ জওয়ানদের কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও হয়। শূন্যে দু'রাউন্ড গুলি ছোড়েন জওয়ানরা। তাতেও ছত্রভঙ্গ হয়নি জনতা। প্রাণ বাঁচাতে ৭ রাউন্ড গুলি ছোড়েন জওয়ানরা। কোচবিহারের পুলিস সুপার পুলিস সুপার দেবাশিস ধরেরও একই রা। এই বক্তব্যের সারবত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বাম-তৃণমূল নেতারা।
শনিবার শীতলকুচির (Sitalkuchi) ১২৬ নম্বর বুথে কেন গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হল? রক্ত ঝরার দু’দিন পর উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
প্রশ্ন ১ - ঘটনার মুহূর্তের ছবি কোথায়?
গ্রামবাসীদের সঙ্গে বচসা, হাতাহাতি, অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা। অথচ দীর্ঘক্ষণের এই ঘটনার কোনও ছবি নেই? সোশ্যাল মিডিয়া, পুলিস, রাজনৈতিক দলের কাছে কোনও ছবি নেই কেন? কেউ মোবাইলেও ছবি তুললেন না! গ্রামবাসীদের কারও কাছে নেই, আশ্চর্যের!
প্রশ্ন ২ - কোথায় সিসিটিভি ফুটেজ?
কমিশন বলছে, ঘটনার সময় বুথের ওয়েবকাস্টিং বন্ধ ছিল। অথচ অঘটন ঘটলে সেখানে ওয়েবকাস্টিং আরও সক্রিয় রাখার কথা। ওয়েবকাস্টিং চালু করার কোনও চেষ্টা হল না কেন? ওয়েবকাস্টিং বন্ধ থাকলেও সিসিটিভিতে ফুটেজ রেকর্ড হওয়ার কথা। কোথায় সেই ফুটেজ? থাকলে তা সামনে আনা হচ্ছে না কেন?
প্রশ্ন ৩ - জওয়ানদের কেউ আহত হয়েছিলেন?
জওয়ানদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বচসা, ধস্তাধস্তি, অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং শেষ পর্যন্ত গুলি। বাহিনীর জওয়ানদেরও অন্তত দু’একজনের আহত হওয়ার কথা। তা হলে কত জন আহত, তার কোনও ছবি বা তথ্য নেই কেন?
প্রশ্ন ৪ - কেন শরীরে গুলি?
রুল বুক অনুযায়ী, উত্তেজনা প্রশমনে প্রথমে লাঠিচার্জ, তারপর কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হবে। নিয়ন্ত্রণে না এলে শূন্যে গুলি, তার পর কোমরের নীচে গুলি চালাতে হবে? শীতলকুচিতে সেই নিয়ম কেন মানা হল না? কেন শরীর লক্ষ্য করে গুলি চালানো হল?
প্রশ্ন ৫- বাহিনী-পুলিস ভিন্ন তথ্য কেন?
কেন্দ্রীয় বাহিনীর রিপোর্ট বলছে, প্রথমে ৫০-৬০ জন গ্রামবাসী জড়ো হয়েছিলেন। পরে আরও ১০০ জন মতো জড়ো হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ১৫০ জনের মতো। কিন্তু পুলিস সুপার বলছেন, ৩৫০-৪০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। দুই রিপোর্টে এমন অসঙ্গতি কেন?
প্রশ্ন ৬- কোথায় কমিশনের তৎপরতা?
ভোটপর্বে কোথাও শূন্যেও গুলি চলেনি। শীতলকুচিতে ৪ জনের মৃত্যুতে অভিঘাত বেশি। জেলাশাসক, পুলিস সুপার, পর্যবেক্ষক ও পুলিস-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ার কথা। অথচ আশ্বর্য রকমের নীরবতা! ঘটনাস্থলে কেউ নেই।
নির্বাচন কমিশন (Election Commission) সূত্রের খবর, শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে ওয়েব কাস্টিং-এর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ঘটনার সময় অফলাইন। তবে বুথের ভিতরের সমস্ত ঘটনা রেকর্ডিং হয়েছে। খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে ওই রেকর্ডিং। অথচ এই কমিশনই শনিবার সিআইএসএফ-কে কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে জানিয়েছিল,'গৃহস্থালির জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিলেন মহিলারা। সে সবে আঘাত লাগার আশঙ্কা ছিল। সিআইএসএফের উপরে চড়াও হয় উন্মত্ত জনতা। জওয়ানদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আহত হন সিআইএসএফ জওয়ান ও হোমগার্ড। শূন্যে গুলি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে চায় সিআইএসএফ। তবে উন্মতা জনতাকে সরানো যায়নি। তখন প্রাণ ও সরকারি সম্পত্তি বাঁচাতে গুলি চালাতে বাধ্য হন সিআইএসএফ জওয়ানরা।'
আর এখানেও স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন উঠছে, ওয়েব কাস্টিংয়ের রেকর্ডিং খতিয়ে দেখতে কতক্ষণ সময় লাগে? কেন তা দ্রুত প্রকাশ হচ্ছে না। তাও অন্তত ভিতরে কী হয়েছিল বোঝা যাবে। তা থেকেও পরিস্থিতির একটা আঁচ মিলবে। আর রাজনীতিও তো কম হচ্ছে না। মোদী-মমতা তো একে অপরের বিরুদ্ধে এ দিনই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। সায়ন্তন বসু, রাহুল সিনহা ও দিলীপ ঘোষরাও 'একে সে বড় এক'। এনিয়ে কমিশনে আপত্তি করেছে তৃণমূল ও বামেরা। যাবতীয় রাজনীতি ও অসংগতি 'দুধ কা দুধ পানি কা পানি' হয়ে যাবে কমিশন ফুটেজ প্রকাশ করলেই।
অন্যদিকে, শীতলকুচির ঘটনায় হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী আমিনুদ্দিন খান। বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি করছেন তিনি।
আরও পড়ুন- West Bengal Election 2021: প্ররোচনামূলক ভাষণ! Mamata-র প্রচারে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি কমিশনের