হুকিং করে কুকুরের ঘরে এসি চালাতেন তৃণমূল নেত্রী! ধরা পড়ায় হল ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা
তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী স্বামীর অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয়রা।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বাড়ির একাধিক ঘরে এসি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। অথচ বিদ্যুতের মিটারের রিডিং যৎসামান্য!
গাইঘাটা থানার বাবুপাড়া এলাকার তৃণমূল নেত্রী ইলা বাগচীর বাড়ির বিদ্যুত্ খরচের হিসাব দেখেই সন্দেহ হয়েছিল বিদ্যুত্কর্মীর। তার পরেই ঠাকুরনগর বিদ্যুত্ দফতরে বিষয়টি জানান তিনি। রহস্য খতিয়ে দেখতে গিয়েই চোখ কপালে ওঠে তাঁদের। দেখা যায় বিলাসবহুল বাড়ির সমস্ত সরঞ্জামই চলত হুকিংয়ের বিদ্যুতে্। এমন কী বিদ্যুতে্র খরচের চিন্তা না থাকায় পোষা কুকুরও থাকত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। শাসক দলের দাপুটে নেত্রী হওয়ায় ইলা বাগচীর নামে অভিযোগ জানাতে সাহস পেতেন না স্থানীয়রাও।
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ইলা বাগচী। তাঁর স্বামী পিনাকীরঞ্জন বাগচী রেলের অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার। স্থানীয়দের অভিযোগ দাপুটে তৃণমূল নেত্রীর স্বামী দীর্ঘ আট-নয় বছর ধরে হুকিং করে বিদ্যুত্ ব্যবহার করছেন। বাড়ির মূল মিটার ছিল নামেই। আসল বিদ্যুত্ আসত কালো এক মিটারের তার দিয়ে। রাস্তার তার থেকে হুকিং করেই বাড়িতে দেদার চলত ফ্রিজ, একাধিক এসি, ওয়াশিং মেশিন, ফ্যান, লাইট। শুধু তাই নয়, তৃণমূল নেত্রীর সাধের পোষা কুকুরের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্যও ছিল আলাদা এসির ব্যবস্থা। অবৈধ ভাবে নেওয়া বিদ্যুতের ফলে থাকত না বিলের চিন্তাও।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুত্ভবনে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার পরে বিদ্যুত্কর্মীরা বেশ কিছুদিন তাঁর বাড়ি পর্যবেক্ষণ করেন। আর তার পরেই তৃণমূল নেত্রীর বাড়ি হানা দেন তাঁরা। অবৈধ ভাবে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেন তাঁরা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঠাকুরনগর বিদ্যুত্ কেন্দ্রের স্টেশন ম্যানেজার প্রদীপ নাগ পঞ্চায়েত সহ-সভাপতির স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরেই পিনাকীরঞ্জন বাগচী বিধাননগর বিদ্যুত্ ভবনে ৮,১৩,৮৩১ টাকা জরিমানা জমা দেন। সেই জরিমানার রসিদ দেখিয়ে বনগাঁ আদালতে আবেদন করেন অভিযুক্ত। তার পরে আগামী বছর ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়।
আরও পড়ুন: সাতসকালে বিপর্যয়, রূপনারায়ণে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ বহু
এদিকে তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী স্বামীর অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁদের বক্তব্য, ইলা বাগচী তৃণমূল নেত্রী ও পঞ্চায়েতের সহ-সভাপতি হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতেন না কেউ। আর সেই সুযোগেই দিনের পর দিন হুকিংয়ের বিদ্যুতে্ই বিনামূল্যে এসির হাওয়া খেয়েছে তাঁর পোষ্য। এ বিষয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য রঞ্জন কর্মকার বলেন, "দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। কেউই আইনের উর্ধ্বে নন।"