আপাতত অনুমোদন নয়, বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করে রথযাত্রার সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যকেই
এদিন রথযাত্রা-শুনানির গোটা পর্বই ছিল টানটান উত্তেজনাপূর্ণ।
![আপাতত অনুমোদন নয়, বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করে রথযাত্রার সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যকেই আপাতত অনুমোদন নয়, বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করে রথযাত্রার সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যকেই](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2018/12/07/160607-rth.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদন: বিজেপির রথযাত্রার এখনই অনুমোদন দিল না হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, অলোচনার মাধ্যমেই বিজেপির রথযাত্রার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও মুখ্যসচিব, ডিজিকে বিজেপির সঙ্গে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেয় আদালত। ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈঠকে বিজেপির তিন প্রতিনিধির সঙ্গে রাজ্যের আধিকারিকদের ঐকমত্যের প্রেক্ষিতেই রথযাত্রার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। রাজ্যকে আরও নির্দেশ, বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা ১৪ ডিসেম্বর অর্থাত্ আগামী শুক্রবারের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্ব তথা আদালতকে জানাতে হবে। এখনই অনুমোদন না পেলেও, এদিন বিজেপির দাবির একটা দিক মান্যতা পেল আদালতে। কিছুটা হলেও স্বস্তি পায় বিজেপি। অর্থাত্ এদিন বিজেপির রথযাত্রা হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বভার রাজ্যের কোর্টেই ঠেলে দিল আদালত।
এদিন রথযাত্রা-শুনানির গোটা পর্বই ছিল টানটান উত্তেজনাপূর্ণ। সওয়াল জবাব পর্বের শুরুতেই বিজেপির আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র বলেন, “সভা করার জন্য রাজ্যকে ৪ বার চিঠি দিয়েছি। ২৯ অক্টোবর প্রশাসনকে প্রথম চিঠি দেওয়া হয়। ৫ নভেম্বরও প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়। সরকার একবার জবাব দেয়নি।”
“অনুমতি না সহযোগিতা, কোনটা চেয়েছিলেন?” বিজেপির আইনজীবীকে পাল্টা প্রশ্ন করেন বিচারপতি। বিজেপির আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র জবাব দেন, “মিটিং-মিছিল করা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা তাই প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছিলাম মাত্র।”
আমরা আগেই চেয়েছিলাম, আদালতের নির্দেশে এবার বাধ্য হয়ে বৈঠকে বসবে রাজ্য: দিলীপ
এরপরই রাজ্যের এজিকে একপ্রকার তিরস্কারের সুরে বিচারপতি বলেন, “বিজেপি তো অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিল। কেন কিছু করেননি? রাজ্যের নীরবতায় আদালত স্তম্ভিত।”
এদিন ধূপগুড়ির জুড়াপানি এলাকায় বিজেপি কর্মীদের দ্বারা পুলিস ‘আক্রান্ত’ হয়। শুনানি চলাকালীন এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন এজি। জলপাইগুড়ির অ্যাডিশনাল এসপি (গ্রামীণ), এএসআই, এসআই সহ মোট ২০ জন পুলিস কর্মীর মার খাওয়ার বিষয়টি হাতিয়ার করেন সওয়াল শুরু করেন এজি। তিনি আদালতে প্রশ্ন করেন, “রথযাত্রার সময়ে কিছু একটা ঘটলে বিজেপি দায়িত্ব নেবে? ”
এরপরই বিচারপতি প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে থাকেন এজি। বিচারপতি এজির উদ্দেশে বলেন, “শুধু গোলমালের আশঙ্কায় মিছিল আটকাতে পারেন না। রাজ্য কোনও দলের প্রতি অযৌক্তিক আচরণ করতে পারে না।”
সওয়াল জবাব চলাকালীন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার বলেন, “আপনারা তো আলোচনা করতে পারতেন। কোথায় সমস্যা তা বলতে পারতেন। বিজেপিকে বলতে পারতেন ছোটো পরিসরে মিছিল করতে।” এজিকে বিচারপতির তিরস্কার, “৫ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর, এই শীতঘুম কেন?” বিচারপতির প্রশ্ন, “চিঠির একটা জবাবও কি দিতে পারতেন না? সব দায়িত্ব আদালতের ঘাড়ে কেন চাপিয়ে দেন?”
রথযাত্রা ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি কৈলাস বিজয়বর্গীয়র
বিচারপতি বলেন, “পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নিন, রঙ দেখে বিচার করবেন না। রাজ্য কোনও দলের প্রতি অযৌক্তিক আচরণ করতে পারে না।” এদিন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কেবল আশঙ্কার ভিত্তিতেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল। কেবলমাত্র আশঙ্কার ভিত্তিতেই একটি রাজনৈতিক দলের সভা সমিতি করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে? ১ মাস ধরে রাজ্যের ‘শীতঘুম’-এর জন্যই আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বদলায় ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও মুখ্যসচিবকে আদালতের নির্দেশ, রথযাত্রা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সিঙ্গল বেঞ্চ সবদিকটা বিচার না করেই রায় দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, আইন শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার বিজেপির রথযাত্রায় অনুমতি দেয়নি সিঙ্গল বেঞ্চ। পাশাপাশি ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের কোথাও রথযাত্রা বার না করার নির্দেশ দেয় আদালত। এর মধ্যে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করে বিজেপি। বলাই বাহুল্য, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে স্বস্তিতে পদ্মশিবির।