লকডাউনের মধ্যে কেমন আছেন ওঁরা, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের দেখভালে রাকিব, নজরুল, মোমিনরা
গ্রামবাসীদের এই জোড়া সমস্যা সমাধানে ময়দানে নেমে পড়েছেন করঞ্জলী গ্রামের ডাক্তার নজরুল বৈদ্য , ডাক্তার রাকিব এবং ডাক্তার শাহিদুল্লা সাহারা। গ্রামবাসীদের এই দুর্দিনে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি অভুক্ত গ্রামবাসীদের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার । করঞ্জলী গ্রামের ডাক্তাররা এই কাজে পাশে পেয়েছেন তাঁদের কয়েকজন বন্ধুকে ।
নিজস্ব প্রতিবেদন: একমাসের উপর লকডাউন । আমাদের রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে একদিকে যেমন খাদ্যের অভাব , অন্যদিকে অসুস্থ হলে নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা । এইরকম এক পরিস্থিতিতে সব্যসাচী হয়ে গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নজরুল বৈদ্য , রাকিব,মোমিন সাহা, আতিয়ার রহমানরা। তাঁরা প্রত্যেকেই চিকিৎসক । এক হাতে চিকিৎসা দিয়ে অন্য হাতে খাদ্য দিয়ে গ্রামের প্রায় শ'পাঁচেক মানুষকে প্রানে বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রামের এই চিকিৎসকরা ।
সুন্দরবন অঞ্চলের কুলপি থানার প্রত্যন্ত এলাকায় ছোট্ট একটি গ্রাম করঞ্জলী । খুব বেশি হলে এই গ্রামের লোকসংখ্যা সাত থেকে আট হাজার হবে । এখানকার প্রতিটি পরিবার চাষবাসের উপর নির্ভরশীল । এই লকডাউনে করঞ্জলী গ্রামের মানুষের জোড়া সমস্যা । যানবাহন না চলায় হাটে বা বাজারে যেতে পারছে না । জমির ফসল জমিতেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে । ফলে খাবারের সমস্যা ।আর তার থেকেও বড় সমস্যা হল গ্রামের কারোর কোন অসুখ করলে হাসপাতালে যাওয়ার উপায় নেই । গ্রামবাসীদের এই জোড়া সমস্যা সমাধানে ময়দানে নেমে পড়েছেন করঞ্জলী গ্রামের ডাক্তার নজরুল বৈদ্য , ডাক্তার রাকিব এবং ডাক্তার শাহিদুল্লা সাহারা। গ্রামবাসীদের এই দুর্দিনে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি অভুক্ত গ্রামবাসীদের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার । করঞ্জলী গ্রামের ডাক্তাররা এই কাজে পাশে পেয়েছেন তাঁদের কয়েকজন বন্ধুকে ।
সম্প্রদায় নয়; অন্যায়কে অন্যায় হিসেবেই দেখি, টিকিয়াপাড়ার ঘটনা নিয়ে সাফ কথা মমতার
এলাকার শিক্ষক খলিলুল্লাহ বৈদ্য , ব্যবসায়ী নাজিমূল সাহাকে সাথে নিয়ে করঞ্জলী গ্রামের প্রায় পাঁচশো অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি দিচ্ছেন বিনামূল্যে চিকিৎসাও । গ্রামবাসীদের সেবা করতে পেরে মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছেন ডাক্তার নজরুল বৈদ্যরা । গ্রামের ডাক্তাররা জানান, " এই গ্রামে আমাদের বড় হয়ে ওঠা । গ্রামবাসীরা সবাই আমাদের কমবেশি পরিচিত । গ্রামের মানুষরা সাধারণত চিকিৎসা করায় গ্রামের হাসপাতালে । বড় সমস্যা হলে শহরে যায় । এখানে প্রাইভেট চিকিৎসার রেওয়াজ প্রায় নেই । কিন্তু লকডাউনে গ্রামের মানুষের ছোটবড় কোন শারীরিক সমস্যা হলে এরা হাসপাতালে যেতে পারছে না । টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাবে সেই ক্ষমতা গ্রামের মানুষের এখন নেই । কারণ লকডাউনে সবার রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে । খেতেই পারে না ডাক্তার দেখাবে কি করে । গ্রামের ছেলে হয়ে এই সময় যদি এগিয়ে না আসি তাহলে আমাদের বিবেক ক্ষমা করবে না । তাই এখন বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য আমাদের চেম্বার সবার জন্য খোলা ।"
চিকিৎসার জন্য গ্রামের মানুষের কাছাকাছি আসার পর গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনের আরও সমস্যার কথা জানতে পারেন চিকিৎসক নজরুল বৈদ্য, রাকিব , মোমিন সাহা , আতিয়ার রহমানরা । লকডাউনে সবচেয়ে বড় সমস্যা খাবারের । রোজগার না থাকায় গ্রামের বহু মানুষের বাড়িতে উনুন জ্বলছে না । তারপর করঞ্জলী গ্রামের ডাক্তাররা কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের হাতে তুলে দেন চাল,ডাল,থেল,সোয়াবিন,আশূ সহ আর বেশকিছু খাদ্যসামগ্রী ।
খাদ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে গ্রামের ডাক্তাররা যেভাবে গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে কার্যত বাকরুদ্ধ গ্রামবাসীরা । খেতে পেয়ে তাদের চোখে আনন্দের জল । চিকিৎসা পেয়ে মুখে তৃপ্তির হাসি । করঞ্জলী গ্রামের মানুষের চোখেমুখে স্বস্তি দেখে বেশ তৃপ্ত গ্রামের ডাক্তার নজরুল , আতিয়ার রহরাম সহ গ্রামের সব ডাক্তাররা । আগামীদিনেও গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়ানো আশ্বাস দিয়েছেন করঞ্জলী গ্রামের এইসব ডাক্তাররা ।
তথ্য সংগ্রহে - নকিবউদ্দিন গাজি