শক্তিগড়ে শুটআউট কীভাবে? রাজু খুনে পুলিসের কাছে চাঞ্চল্যকর বয়ান লতিফের গাড়িচালকের!
'শক্তিগড়ের ল্যাংচা হাবে গাড়ি দাঁড়ায়। রাজু ছাড়া সকলেই গাড়ি থেকে নামেন। ঝালমুড়ি কেনেন। ব্রতীন মুখোপাধ্যায় গুটখা কিনে আনতে বলেন। আমি রজনীগন্ধা কিনে গাড়ির দিকে আসছিলাম। তখন...'
অরূপ লাহা : কীভাবে খুন রাজু ঝা? আবদুল লতিফের গাড়িচালকের বয়ানে উঠে এল শনিবার সন্ধ্যায় শুটআউটের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। গরু পাচারকারী আবদুল লতিফের গাড়িচালক নূর হোসেন মল্লিক লিখিত অভিযোগ করেছেন পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানায়।
যেখানে তিনি জানাচ্ছেন, প্রতিদিন সকালের মত সেদিনও সকাল ৮টায় ইলামবাজারে মালিক আবদুল লতিফের বাড়িতে যান। ওইদিন আনুমানিক বেলা দেড়টা নাগাদ মালিক লতিফকে গাড়িতে চাপিয়ে দুর্গাপুরের দিকে রওনা দেন। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি মোড়ে গাড়িতে তোলা হয় ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে। এরপর দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে এসে পৌঁছয় গাড়ি। সেখানে দুজনেই রাজু ঝায়ের ফরচুন হোটেলে নেমে যান। রাজু ঝা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর সন্ধ্যে ৬টা ১০ নাগাদ তিনজনকে নিয়ে বের হুন। কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। রাজু ঝায়ের কথামতো শক্তিগড়ের ল্যাংচা হাবে গাড়ি দাঁড়ায়। তখন ঘড়িতে সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩৫। ওখানে রাজু ছাড়া সকলেই গাড়ি থেকে নামেন। সকলেই ঝালমুড়ি কেনেন। এরপর সবাই গাড়িতে ওঠেন। এই সময় ব্রতীন মুখোপাধ্যায় নূর হোসেনকে রজনীগন্ধা গুটখা কিনে আনতে বলেন।
নূর জানাচ্ছেন, 'আমি রজনীগন্ধা কিনে গাড়ির দিকে আসছিলাম। দেখি তিনজন লোক গাড়িতে গুলি করছে। আমি চিৎকার করে লোকজন ডাকা শুরু করি। সেইসময় নীল রঙের একটি গাড়ি চেপে কিলাররা কলকাতার দিকে পালিয়ে যায়। ওই সময় থেকেই মালিককে আর দেখতে পাইনি। এসময় পুলিস আসে। পুলিস এলে আমি গাড়ি চালিয়ে অনাময় হাসপাতালে যাই। সেখানেই ডাক্তাররা রাজু ঝাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহত ব্রতীনের হাতে গুলি লাগায় তাঁকে ভর্তি রাখা হয়।' প্রসঙ্গত, একটি ভাইরাল ভিডিয়োতে সামনে আসে, শক্তিগড়ে শ্যুটআউটের ঘটনার সময়ে রাজু ঝায়ের গাড়িতেই ছিলেন আবদুল লতিফ। যভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা যায়, যে সাদা গাড়িটিতে ছিলেন রাজু ঝা, সেই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই ফোনে কথা বলছেন এক ব্যক্তি। পরনে সাদা জামা ও নীল প্যান্ট। যাঁরা চিনতেন, তাঁরা-ই প্রথম দাবি করেন, ওই ব্যক্তি আব্দুল লতিফ!
একদিকে গাড়িচালক যখন পুলিসের কাছে তাঁর লিখিত বয়ানে একথা জানাচ্ছেন, তখন প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস মনে করছে, আততায়ীরা সুপারি কিলার। তারা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। পুলিসের অনুমান, দুষ্কৃতীরা শুটআউটের পর ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা পুলিসের একটি দল তদন্তের জন্য ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আততায়ীরা জামতাড়া গ্যাঙের সদস্য হতে পারে বলেও মনে করছে পুলিস।
শনিবার ভরসন্ধ্যায় শক্তিগড়ের কাছে জাতীয় সড়কের উপর একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়ায় রাজু ঝাদের সাদা রংয়ের গাড়িটি। ঠিক তখনই পাশ থেকে আসে নীল রংয়ের একটি ইউনি গাড়ি। এরপরই রাজুকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ওই গাড়িটি নিয়ে বাইপাস দিয়ে শক্তিগড় স্টেশনের দিকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। সেখানে গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। অপারেশন শেষ হয় মাত্র দেড় থেকে দু'মিনিটেই!