Asansol Stampede: অভিশপ্ত সন্ধ্যায় উলটপালট সব, প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণ করা হল না ছোট্ট প্রীতির!
পুলিস কমিশনার সুধীর কুমার জানিয়েছেন, কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি পুলিসের। মহিলাদের এত ভিড় হবে, তাঁরা জানতে পারেননি। শুধু কম্বল বিতরণের জন্যই নয়, শিবচর্চা শোনা ও দেখার জন্যও মহিলারা উপস্থিত হয়েছিলেন মাঠে।
বাসুদেব চট্টোপাধ্যায়: প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণ করা হল না ছোট্ট প্রীতির! মেয়েকে অনেক বড় জায়গায় দেখবেন। আশা ছিল বাবা মুন্না সিংয়ের। ঠিক যেমন আর পাঁচটা বাবার থাকে। মেয়েকে নিয়েও তেমনই অসংখ্য স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন মুন্না সিং। কিন্তু অদৃষ্টের ফের! ২০১৪ সালে মৃত্যু হয় প্রীতির বাবা মুন্না সিংয়ের। তারপর থেকে প্রীতির দাদা বিকাশ সংসারের হাল ধরে। কাজ করে সংসার চালাতে গিয়ে বিকাশের আর পড়াশোনা হয় না। তাই প্রীতির মা কিরণ চেয়েছিলেন, মেয়েকে ভালো করে পড়াশোনা শেখাবেন। স্বামীর স্বপ্নকে সত্যি করবেন। ভালো পড়াশোনা শিখে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবার স্বপ্নকে সত্যি করবে প্রীতি। নাম উজ্জ্বল করবে বংশের। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি পড়াশোনাতেও ভালোই ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন, সেই আশা অপূর্ণ-ই রয়ে গেল প্রীতির মা ও দাদার। অভিশপ্ত বুধবারের সন্ধ্যায় অকালে চলে যেতে হল ছোট্ট প্রীতিকে। অকালে ধরে গেল একটা প্রাণ। একটা স্বপ্ন।
কম্বল দান অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ছোট্ট প্রীতিও। ঘটনার পর থেকে হতভম্ব মা ও দাদা। পাড়ার সবার আদরের ছোট্ট প্রীতি আর ফিরবে না। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই, গোটা এলাকা শোকগ্রস্ত। কে দায় নেবে এই ঘটনার? ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আর সে প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই সামনে আসছে বিস্ফোরক অভিযোগ। পুলিসের অভিযোগ, কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য নাকি পুলিসের কোনও অনুমতি-ই নেওয়া হয়নি। কত ভিড় হবে, সে সম্বন্ধেও কোনও আভাস ছিল না। আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙার মাঠেই শিবচর্চা ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজক ছিলেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী চৈতালী তিওয়ারি। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে ৩-৪টি কম্বল বিলি করে মঞ্চ থেকে নেমে যান শুভেন্দু।
জানা যাচ্ছে, শুধু কম্বল বিতরণের জন্যই নয়, শিবচর্চা শোনা ও দেখার জন্যও মহিলারা উপস্থিত হয়েছিলেন মাঠে। স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেই একথা জানা গিয়েছে। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, শুধু কম্বল দানের জন্যই যে তাঁরা রামকৃষ্ণ ডাঙার মাঠে এসেছিলেন তা নয়। বেশিরভাগ মহিলা শিবচর্চার জন্য এসেছিলেন। ভজন কীর্তন শোনার জন্য এসেছিলেন। গঙ্গা আরতির মতো যে আরতি হচ্ছিল, সেই আরতি দেখতে এসেছিলেন। সেই জন্যই বিশাল ভিড় হয়ে গিয়েছিল। কমপক্ষে ৮ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। ওদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিস কমিশনার সুধীর কুমার জানিয়েছেন, কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি পুলিসের। মহিলাদের এত ভিড় হবে, তাঁরা জানতে পারেননি।
আরও পড়ুন, বয়স ভাঁড়িয়ে চাকরি! SSC দুর্নীতিতে বিস্ফোরক অভিযোগের মধ্যেই শিক্ষক নিয়োগের নয়া নির্দেশ
ফের রাজ্য সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়!
যদিও জিতেন্দ্র তিওয়ারি দাবি করেছেন, তাঁর স্ত্রী চৈতালি তিওয়ারি স্থানীয় থানায় একটি লিখিত চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিস সূত্রে খবর, সেই চিঠিতে কত ভিড় হবে তা লেখা ছিল না। শুধু লেখা ছিল মেগা কম্বল বিতরণ ও শিবচর্চার অনুষ্ঠানের কথা। পুলিস ও প্রশাসনের সঙ্গে আয়োজক কর্তাদের আলোচনার অভাবেই বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে ১৩ বছরের এক কিশোরী সহ ২ মহিলার। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। শুধু প্রাণহানি যে ঘটেছে এমনটাই নয়, পদপিষ্ট হয়ে আহত প্রায় শতাধিক। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৮ জন। পুলিস ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।