TMC Full Candidate List: লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন বিপ্লব মিত্রই...
TMC Full Candidate List: বহু জল্পনার অবসান। আসন্ন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য, হরিরামপুরের বিধায়ক এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্রই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের বিপক্ষে লড়বেন তিনি।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। ষাটের দশক থেকেই ডানপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। তিনি বিপ্লব মিত্র। পেশায় আইনজীবী। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে রাজ্য সহ-সভাপতি পদে কাজ করেছেন। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে রায়গঞ্জ আসন থেকে লড়াই করেন কিন্তু হেরে যান। ২০০০ সালে তৎকালীন জেলা সভাপতি ননীগোপাল রায়ের মৃত্যুর পর তিনি দায়িত্ব নেন জেলা সভাপতি হিসেবে। সেই সময় দক্ষিণ দিনাজপুরে রাজনৈতিক ভাবে বামপন্থী দলগুলি শেষ কথা। বালুরঘাট সাব ডিভিশনে আরএসপি গঙ্গারামপুর সাবডিভিসি সিপিআইএম। ২০১৬ সাল পর্যন্ত একটানা জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দীর্ঘ ষোলো বছরে বিভিন্ন সময় ভোটে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু কোনও ভোটেই জয়ের স্বাদ পাননি।
অবশেষে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় হরিরামপুর বিধানসভা ক্ষেত্র থেকে জয় লাভ করেন বিপ্লব মিত্র। সেবার অবশ্য তাকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পরিষদের দায়িত্বেই রাখা হয়েছিল।
প্রবল গোষ্ঠীকোন্দল ও দলাদলির কারণে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগের মুহূর্তে বিপ্লব মিত্রকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে বালুরঘাটের শঙ্কর চক্রবর্তীকে জেলা সভাপতির পদ দেওয়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে, শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। গোটা রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ফল ভালো হলেও জেলার ছ'টি আসনের মধ্যে তিনটি যায় বামেদের দখলে, একটি কংগ্রেসের দখলে, কোনও রকমে মান রক্ষা করে তৃণমূল। ঠিক পরের বছরই আবার শংকর চক্রবর্তীকে সরিয়ে বিপ্লব মিত্রের উপরেই ভরসা রাখে তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব। ২০১৭ তে আবার বিপ্লব মিত্রকেই জেলা সভাপতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর পরেই ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন সেখানে তিনিই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্ব অর্পিতা ঘোষকে প্রার্থী করে বালুরঘাট আসনে পাঠায়। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দায়িত্ব ছিলেন। এই ভোটে অর্পিতা ঘোষ হেরে যান বিজেপির সুকান্ত মজুমদারের কাছে। আর এর পরেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় জেলায়। বিপ্লব মিত্রকে ভোটের ফল ঘোষণার দুদিনের মধ্যেই জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০ জন জেলা পরিষদের সদস্যকে নিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন বিপ্লব মিত্র। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদ দখল করে বিজেপি এবং সেই সময় বেশ কিছু বিজেপির মিটিং-মিছিল করেছেন বিপ্লব। কিন্তু তাঁর এক বছরের মধ্যেই আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরেন তিনি।
২০২১ সালের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে হরিরামপুর থেকে আরও বেশি মার্জিনে জয়লাভ করেন বিপ্লব মিত্র এবং তাঁকে মন্ত্রিসভায় সুযোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে বিপ্লব মিত্র ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী। এবং সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলা পরিষদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন বিপ্লব। হরিরামপুর কুশমন্ডি গঙ্গারামপুর বংশীহারী থেকে শুরু করে হিলি পর্যন্ত সর্বত্রই তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন তৈরি করার ক্ষেত্রে বিপ্লব মিত্রের ভূমিকা এক কথায় সকলেই মেনে নেন। জেলার সমস্ত তৃণমূলকর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ পার্টিকর্মীদের মধ্যেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
রাজনীতির অঙ্গনে পোড় খাওয়া তৃণমূলের এই নেতা লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছে যে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল, তা এক কথায় স্বীকার করে নিচ্ছে রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল জানান, দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হল। ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য ঘটনাক্রমে সমস্ত নেতৃত্বই আজ কলকাতায় রয়েছেন। বিপ্লব মিত্রের নাম ঘোষণা হতেই কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাঁরা সকলেই বলেন, তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন এবার বিপ্লববাবুকে জয়যুক্ত করানোর জন্য একসঙ্গে মাঠে নামবেন।
আরও পড়ুন: Budh Shukr Gochar: বিরল! বুধ-শুক্র গোচর এই রাশির জাতক-জাতিকাদের জীবনে নিয়ে আসছে বিপুল সৌভাগ্য...
বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী পাল্টা বলেন, ভোটে কে দাঁড়িয়েছে, সেটা বিষয় নয়। মানুষ ভোট দেয় কাজের নিরিখে। সুকান্ত মজুমদার বিগত পাঁচ বছরে যে কাজের সূচনা করেছেন এবং যে পরিষেবা জেলার মানুষকে দিয়েছেন, জেলার মানুষ সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চাইবেন না। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিপ্লববাবুর তেমন কোনও ভূমিকা নেই। উনি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেছেন, বিধায়ক হয়েছেন কয়েকবার। কিন্তু উন্নয়নের কাজে তাঁকে দেখা যায়নি। ফলে এই লড়াইয়ে বিজেপির জয় সুনিশ্চিত।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)