Chandrayaan 3: ভারতের চন্দ্রবিজয়ে বাংলার কৃতী সন্তানদের গৌরবগাথা
"৭১-সালে যুদ্ধ জয়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, তার থেকেও বেশি আনন্দ পেলাম আজ ছেলের কৃতিত্বে।"
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযানের সফল অবতরণ করিয়েছে ভারত। আর ভারতের এই অসামান্য কৃতিত্বে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার কৃতী সন্তানদের অবদান। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বড়ুয়া কলোনির বাসিন্দা তুষারকান্তি দাস ওরফে ছোটন। চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণের পর পরই উৎসবে মেতেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ছোট থেকেই মেধাবী তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ ভাই তুষারকান্তি দাস। বেলডাঙার কাশিমবাজার রাজ গোবিন্দসুন্দরী বিদ্যাপীঠে স্কুলজীবনের পর গণিতে অনার্স নিয়ে বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন তুষারকান্তি দাস। এরপর এমএসসি করেন আইআইটি খড়্গপুরে, এমটেক করেন আইএসএম ধানবাদ থেকে। তারপর ২০০৫ সালে ইসরোতে যোগ দেন। বুধবার চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে চন্দ্রযান -৩। খুশিতে ভাসছে তাঁর পরিবার। দেড় বছর আগে বেলডাঙার বাড়িতে এসেছিলেন বিজ্ঞানী তুষারকান্তি দাস। চন্দ্রযান অভিযানে ল্যান্ডিং সেকশনে কাজ করেন তুষারকান্তি দাস। ছোটনের এই সাফল্যে খুশির হাওয়া বেলডাঙা জুড়ে। পাড়ায় ছেলের চাঁদ ছোঁয়ায় খুশি এলাকার মানুষ।
ওদিকে পাঁশকুড়াবাসীর আবেগের চূড়ায় এখন পীযুষ পট্টনায়েক। চন্দ্রযান-৩ এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল পাঁশকুড়ার ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর কাটাল গ্রামের বাসিন্দা পীযুষ পট্টনায়েকের হাতে। প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা পীযূষ পট্টনায়েক। বাবা সেচ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, মা গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকেই যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠেন পীযুষ। পীযূষের হাতেখড়ি হয় গ্ৰামেরই একটি স্কুলে। ছোটবেলা থেকেই শান্ত ও মেধাবী পীযূষ ২০০৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন পাঁশকুড়া ব্রাটলিবাট হাইস্কুল থেকে। এরপর কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক পাস করেন। তারপর ২০১৩ সালে খড়গ্পুর আইআইটি থেকে এমটেক পাস করে যোগ দেন ইসরোতে। চন্দ্রযান ২ ও ৩-এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল পীযূষের হাতে। স্বভাবতই চন্দ্রযান-৩ গতকাল চাঁদের মাটিতে অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গেই খুশির আমেজ উত্তর কাটালে পীযূষকান্তি পট্টনায়েকের গ্রামের বাড়িতে। পীযূষের সফলতায় খুশি পরিবার, প্রতিবেশী সহ এলাকাবাসী।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণের পর ল্যান্ডার বিক্রমের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভার প্রজ্ঞান। প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে চলাফেরা করে বিভিন্ন ডেটা পাঠাবে ইসরোর কাছে। এই রোভার অর্থাৎ প্রজ্ঞানের মুভমেন্ট কোন দিকে হবে, তা কো-অর্ডিনেট করার দায়িত্বে আছেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র ব্লকের ডান্না গ্রামের যুবক কৃশানু নন্দী। ছোট থেকেই মেধাবী কৃশানু মাধ্যমিক পাস করেন পাত্রসায়রে বামিরা গুরুদাস বিদ্যায়তন থেকে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক কমলপুর নেতাজি উচ্চবিদ্যালয়ে। বিটেক করেছেন আরসিসি ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি কলকাতা থেকে। তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমটেক শেষ হওয়ার আগেই ইসরোতে চাকরি পান কৃশানু নন্দী। বাঁকুড়ার এই মেধাবী ছেলের হাতে গুরু দায়িত্ব দেয় ইসরো। কৃশানুর সাফল্যে গর্বিত সমগ্র পাত্রসায়র থেকে শুরু করে বাঁকুড়া জেলার মানুষ।
চাঁদে বিক্রমের সফল সফট ল্যান্ডিং দলের সদস্য জলপাইগুড়ি গভর্মেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছয় ছাত্রও। চন্দ্রযান-৩ মিশনের অন্যতম সদস্য কৌশিক নাগ ২০১৫ সালে এই জলপাইগুড়ি গভর্মেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করার পরই যুক্ত হন ইসরোতে। কৌশিক ছাড়াও এই চন্দ্রযান-৩ অভিযানে যুক্ত ছিলেন কলেজের আরও ৫ ছাত্র। এদিন চলে মিষ্টিমুখের পালা। দেশের অন্যতম প্রাচীন এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ড. অমিতাভ রায় বলেন, এটা কারও একার সাফল্য নয়। এটা সকলের সম্মিলিত সাফল্য। ওদিকে, ৭১-এর যুদ্ধ জয়ের আনন্দের থেকেও ভারতের এই চন্দ্রজয়ে আনন্দ অনেক বেশি। বলছেন চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বসিরহাটের বিজ্ঞানী মানসের বাবা দেশের প্রাক্তন সেনাকর্মী শচীন্দ্রনাথ সরকার। চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণে খুশির হাওয়া বসিরহাটের ইসরোর ইঞ্জিনিয়ারের পরিবারে। বাবা প্রাক্তন সেনাকর্মী, তিনি বলছেন, যুদ্ধ জয়ের থেকেও আজ বেশি আনন্দিত ও গর্বিত ছেলের জন্য।
বসিরহাটের নৈহাটি গ্রামের বাসিন্দা সরকার পরিবারের মানস সরকার। তিনি ইসরোর পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। চন্দ্রযান ১, ২ এবং ৩- তিনটির ক্ষেত্রেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র টেলিম্যাট্রিক ট্র্যাকিং এবং কমান্ড নেটওয়ার্কের পদস্থ কর্তা মানস সরকার চন্দ্রযান-৩ মিশনের একজন ইঞ্জনিয়ার। মানস সরকারের বাবা শচীন্দ্রনাথ সরকার প্রাক্তন সেনাকর্মী। তিনি ৭১-এর যুদ্ধের লড়াকু সৈনিক। তিনি বলেন, ৭১-সালে যুদ্ধ জয়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, তার থেকেও বেশি আনন্দ পেলাম আজ ছেলের কৃতিত্বে। মা রঞ্জিতা সরকার গৃহবধূ। তিনি জানান, ছেলে কীভাবে লড়াই করে আজ দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন সেকথা। বাবা সীমিত পেনশনে ছেলেকে পড়িয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন দাদা তাপস সরকার। চাঁদে বিক্রমের সফল অবতরণের পর ভাইয়ের সঙ্গে কথাও হয়েছে তাঁর। খুশিতে ভাসছে গোটা পরিবার।
আরও পড়ুন, Chandrayaan 3 Landing News: কেন চাঁদের দক্ষিণদুয়ারই বেছে নিল ভারত? অবাক হবেন সে-রহস্য জানলে...