কোভিড গেরোয় এ বছর বাতিল পুজো কার্নিভাল
এ বছর হবে না পুজো কার্নিভাল
নিজস্ব প্রতিবেদন: কোভিডের জেরে এ বছর বাতিল করা হল পুজো কার্নিভাল। বৃহস্পতিবার পুজো নিয়ে বৈঠকে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছর একাধিক বিধিনিষেধ মেনে তবেই পুজো করতে পারবে পুজো কমিটিগুলি। সে ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই একাধিক নিয়ম মানার অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা। নিউ নর্মালে কী ভাবে পুজো তা নিয়ে পুজো উদ্যোক্তা ও ক্লাব সদস্য এবং সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী একটি বৈঠক করলেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে।
সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, করোনাকে লকডাউনে পাঠিয়ে দিয়ে এ বার পুজো হোক। তবে পুজোর ব্যবস্থাপনায় একটু আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা থাকুক। তাঁর বক্তব্যে তিনি পুজো কমিটিগুলিকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলিকে বলেছেন, একটু খোলামেলা মণ্ডপ করতে। পারলে মণ্ডপের ছাদ খোলা রাখুন। ছাদ খোলা রাখা সম্ভব না হলে চারপাশে খোলামেলা জায়াগা থাকুক। মণ্ডপের ভিতরে চক দিয়ে গোল গোল দাগ কেটে দিন। যাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
দর্শনার্থীদের মুখে যেন অবশ্যই মাস্ক থাকে। শুধু তাই নয়, প্যান্ডেলের অন্তত আধ কিলোমিটারের মধ্যে কেউ এসে গেলেই তাঁদের মাস্ক আছে কিনা দেখা হোক। যে সব পুজো কমিটির পক্ষে দর্শনার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়া সম্ভব, তাদের তিনি অনুরোধ করেছেন যাতে তারা সেটা নিয়মমাফিক দেয়। মণ্ডপে এন্ট্রান্স ও এগজিট আলাদা করে রাখতে বলেছেন। পুজোর কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকেরাও যেন অবশ্যই মাস্ক পরে পুজো প্যান্ডেলে থাকেন। যদি সম্ভব হয় তাঁরা যেন ফেস শিল্ড ব্যবহার করেন।
যে সব সংস্থা পুজো কমিটিগুলিকে পুরস্কার দিতে আসেন, তাদেরও তিনি অনুরোধ করেছেন তারা যেন কম সদস্য ও কম গাড়ি নিয়ে পুজো-চত্বরে ঢোকেন। পাশাপাশি এই সব সংস্থার প্রতিনিধিদের আসার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলিকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে বলেছেন। তিনি অনুরোধ করেছেন সন্ধে বা রাত এড়িয়ে পুরস্কার কমিটিগুলিকে যেন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩-টের মধ্যে মণ্ডপগুলিতে আসতে বলা হয়। তবে সম্ভব হলে পুরো বিষয়টিই ভার্চুয়ালি করা হোক। সোশ্যাল মাধ্যম বা গণমাধ্যমের প্লাটফর্ম ব্যবহার করা হোক।
পুজোর দিনগুলিতে পুজো মণ্ডপ, প্যান্ডেল চত্বর এবং যে এলাকায় পুজো হচ্ছে সেখানে যেন যথোচিত ব্যারিকেড, মার্কিং ইত্যাদি থাকে। পুলিশ ও কমিটিগুলির মধ্যে যেন একটা সমন্বয় বজায় থাকে। একটু বড় পুজোগুলির ক্ষেত্রে পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম রাখতে বলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী খেপে খেপে অঞ্জলি দেওয়ানোর ব্যবস্থা করতে বলেছেন। দরকার হলে মাইকে মন্ত্র ঘোষণা করা হোক। এবং অঞ্জলি দিতে ইচ্ছুকদের তিনি সম্ভব হলে সঙ্গে করে ফুল-বেলপাতা নিয়ে আসুন। প্রসাদ বিতরণের ক্ষেত্রেও তিনি নিয়ম মেনে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে বিষয়টি করতে বলেছেন। সিঁদুর খেলা বাঙালি মহিলার কাছে একটা সেন্টিমেন্ট। ফলে সেটা বন্ধ না করে সেখানেও পরিকল্পনা করা হোক। দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছোট ছোট দলে মহিলাদের ভাগ করে দিয়ে সিঁদুরখেলার আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।
আবাসনের পুজোগুলির ক্ষেত্রেও তিনি অনুরোধ করেছেন, তারাও যেন এই সব নিয়মকানুন যত দূর সম্ভব মেনে চলে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কাকে দূরে রাখে।
পুজোর দিনগুলিতে অনেক উদ্যোক্তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুখ্যমন্ত্রী এ বারে সকলকেই এ ধরনের অনুষ্ঠান না করতে অনুরোধ করেছেন। যে কোনও ভাবে মানুষের মিক্স-আপটা কমাতে বলেছেন তিনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং নয়, মানা হোক ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং। সেটাই করোনার সঙ্গে লড়াই করার অস্ত্র।
বিসর্জনের ক্ষেত্রেও তিনি এক দিনে অনেক পুজো যাতে তাদের প্রতিমা বিসর্জন না করে সেটা দেখতে বলেছেন। বিসর্জনের প্ল্যানিং অনেক আগে থেকেই করে রাখতে বলেছেন। শোভাযাত্রা যেন না হয়। প্রতিমার সঙ্গে যেন খুব কম সংখ্যক লোকজন নিয়ে কমিটিগুলি বিসর্জনকাজটি সম্পন্ন করে, এই মর্মে অনুরোধ করেছেন তিনি। গঙ্গার ঘাটগুলিকেও সুষ্ঠু বিসর্জনের জন্য আগে থেকেই সংস্কার করে রাখতে বলেছেন।
তাঁর বক্তব্যের একেবারে শেষে এসে মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এ বারে রেড রোডে পুজো কার্নিভাল করা সম্ভব হচ্ছে না। রেড রোডে ইদের নামাজও হয়নি, বিসর্জনটাও বন্ধ থাকুক। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী বছর তিনি দেখবেন, কার্নিভাল যাতে ভালো ভাবে আয়োজন করা যায়।
সব শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এ বারে পুজোর আয়োজনে যে কোনও মূল্যে ভিড় এড়াতে হবে। এবং ভিড় এড়িয়ে, করোনাকে হারিয়ে, সংক্রমণের আশঙ্কা রুখে দিয়ে সকলে মিলে শারদীয় উৎসবে মেতে উঠুক।