বকেয়া টাকা ফেরতের নামে ডেকে এনে মগরাহাটে জোড়া খুন, নেপথ্যে ইমরতি ব্যবসায়ী!
ছয় কাঠা জমির ওপর দোতলা বিশাল বাড়ি জানে আলমের। পাশের পাঁচ কাঠা জমি মাদ্রাসাকে দান করেছে জানে আলম
নিজস্ব প্রতিবেদন: সিভিক ভলান্টিয়ার খুনে উত্তপ্ত মগরাহাট। শনিবার একটি কারখানার মধ্যে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার ও অন্য এক জনের গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তাদের শরীরে গুলির চিহ্নও রয়েছে।
ইমরাতি দ্রব্যের ব্যবসায় বচসার জেরেই খুন। এমনটাই দাবি পুলিসের। ঘটনায় চিহ্নিত মূল অভিযুক্ত। কম দামে মাল সরবারহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে। বকেয়া মেটানোর টোপ দিয়ে ডেকে এনে খুন করা হয়েছে দুই জনকে। এমনটাই জানালেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিস সুপার।
শনিবার সকালে মগরাহাটের আমড়াতলা এলাকায় একটি কারখানার মধ্যে থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তী ও মলয় মাখাল নামে দুই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিসের দাবি, ইমারতি দ্রব্যের সরবরাহ নিয়ে অশান্তি। যে কারখানা থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হয় সেটি জানে আলম মোল্লা নামে এক ব্যবসায়ীর। জানে আলম মোল্লা কম দামে ইমারতি মাল সাপ্লাই করার আশ্বাস দেয়। আগাম টাকাও নিয়ে নেয়। কিছুতেই মাল না দেওয়ায় কাল রাতে এক দফা অশান্তি হয়। জানে আলম বলে, আজ সকালে আমড়াতলায় হাড়ের কারখানায় আসতে। টাকা দেবে। কিন্তু টাকা সে দেয় না। এনিয়ে তুমুল ঝগড়া হয় বরুণ চক্রবতী ও মলয় মাখালের সঙ্গে। তারপরই নৃশংস ভাবে প্রথমে ধারাল অস্ত্র দিয়ে নলি কেটে এবং পরে গুলি চালিয়ে দুজনকে খুন করে জানে আলম।
মৃত বরুণ চক্রবর্তী, পেশায় মগরাহাট থানার সিভিক পুলিস। তার বাড়ির লোকের দাবি, এই এলাকায় জানে আলম অবৈধভাবে পশুর হাড়ের কারখানা চালাত। হাড় থেকে সার তৈরি হত। সেই পচা হাড়ের দুর্গন্ধে মাগুরপুকুর গ্রামের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। এনিয়ে বরুণ একাধিকবার জানে আলমকে সতর্ক করে। এতে কর্ণপাত করা হয়নি। এরপর আজ বন্ধু মলয়কে নিয়ে বরুণ হাড়ের কারখানায় আসে। সকাল নটায় জানে আলমের সঙ্গে হাড়ের দুর্গন্ধ নিয়ে তীব্র বচসা হয়। এর জেরে কারখানার একটা ঘরে দুজনকে ঢুকিয়ে বন্ধ করে, খুন করে জানে আলম।
মলয় মাখালের বাড়ির লোকের বক্তব্য, হাড়ের কারবার ফাঁদার আগে জানে আলম (একসময়ের চিটফান্ড মামলায় অভিযুক্ত) মুদিখানা দোকান চালাত। তখন মলয়ের সঙ্গে তার লক্ষাধিক টাকার লেনদেন হয়। সেই টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে বিবাদ। সেই টাকা দিতে কারখানায় ডাকা হয়। তারপর অশান্তি ও উত্তেজনার বশে খুন।
একসময় চিটফান্ডের কারবার করত জানে আলম। মাঝে চিটফান্ডের কারবারিদের ধরপাকড় শুরু হওয়ায় সে এলাকা থেকে গা ঢাকা দেয়। বছর চারেক আগে আবার এলাকায় ফিরে আসে। সঙ্গে প্রচুর টাকা। সূত্রের খবর, সব টাকাই আমানতকারীদের গচ্ছিত টাকা। সেই টাকা দিয়ে শুরু করে সার তৈরির এই কারখানা। একইসঙ্গে এলাকায় বিশাল সিন্ডিকেট রাজ গড়ে তোলে। মগরাহাট, সংগ্রামপুর, আমড়াতলা, মাগুরপুকুর এলাকায় নামে বেনামে তৈরি হতে থাকে রিয়াল এস্টেট। মাল সরবরাহের একচেটিয়া আধিপত্য জানে আলমের। সঙ্গে পার্সোনাল বডিগার্ড, আগ্নেয়াস্ত্র। চার বছরেই কার্যত এলাকায় অঘোষিত ডনে পরিণত হয় জানে আলম।
ছয় কাঠা জমির ওপর দোতলা বিশাল বাড়ি জানে আলমের। পাশের পাঁচ কাঠা জমি মাদ্রাসাকে দান করেছে জানে আলম। বাড়িতে সেন্ট্রি অর্থাত নিরাপত্তারক্ষীর আলাদা ডোর কেবিন। পাঁচ ভাই। আলমগীর মোল্লা মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। বাকী চার ভাই জানে আলম মোল্লা, জাহাঙ্গির মোল্লা, আতিকুল মোল্লা এবং আজিজুল মোল্লা। এরা সবাইমিলে এলাকায় সিন্ডিকেট রাজ কায়েম করেছিল বলে দাবি এলাকাবাসীর।
আরও পড়ুন-"বিদেশী শক্তি ভারতের বিদেশনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না", ভারতের প্রশংসায় Imran Khan