মাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা ৬ ছেলের, দেশলাই হাতে থেকে পড়ে যাওয়ায় রক্ষা!

দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকেন তাঁরাও। অভিযোগ, মাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে ছয় ছেলে। ছোটো ছেলের পায় কাছে পড়ে রয়েছে দেশলাই। বিপদ আঁচ করতে দেরি হয়নি প্রতিবেশীদের।

Updated By: Jan 31, 2018, 01:12 PM IST
মাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা ৬ ছেলের, দেশলাই হাতে থেকে পড়ে যাওয়ায় রক্ষা!

নিজস্ব প্রতিবেদন: সম্পত্তির লোভে মাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ ছয় ছেলের বিরুদ্ধে। বর্বর পৈশাচিকতার নতুন নজির হতে হতে বাঁচল মালদার মানিকচক। 
তিন কামরা বাড়ি, পাশে ১৬৬ শতক জমি। মানিকচকের বাসিন্দা পার্বতী সরকারের সহায়-সম্বল বলতে শুধু এটুকুই। ছয় ছেলে ভিন রাজ্যের শ্রমিক। প্রত্যেকেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকলেও মায়ের সঙ্গে সম্পত্তি বাটোয়ারা নিয়ে বিবাদ সরকারবাড়িতে নিত্যদিনের ঘটনা। ছেলেরা এলেই পার্বতীদেবীর বাড়ি থেকে চিত্কার চেঁচামেচির নতুন কিছু নয় প্রতিবেশীদের কাছে। বুধবারও তাই হয়েছিল। তাই প্রথমে খুব একটা আমল দিতে চাননি তাঁরাও। কিন্তু পার্বতী সরকারের আর্তচিত্কার শুনেই টনক নড়ে তাঁদের। 

আরও পড়ুন: মায়ের কোলে গলা জড়িয়ে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু ছোট্ট দেবের!
দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকেন তাঁরাও। অভিযোগ, মাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে ছয় ছেলে। ছোটো ছেলের পায় কাছে পড়ে রয়েছে দেশলাই। বিপদ আঁচ করতে দেরি হয়নি প্রতিবেশীদের। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিসে খবর দেন তাঁরাই। ছেলেরা পালিয়ে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পার্বতী। হাসপাতালের বিছানায় বসে সেকথা সাংবাদিকদের শুনিয়েছেন প্রৌঢ়া।
ছ’মাস আগে স্বামীকে হারিয়েছেন পার্বতীদেবী। তারপর থেকে তাঁর স্মৃতি আর বসতভিটেকে আকড়ে ধরেই দিন গুজরান করছেন বছর পঞ্চান্নর প্রৌঢ়ার। ছয় ছেলের কেউই মায়ের দেখভাল করেন না বলে অভিযোগ। দু'বেলা দু'মুঠো নিজেই জোগাড় করেন পার্বতী। পরিবারের কয়েক বিঘা জমি নিয়েই ছ’ছেলের সঙ্গে মায়ের বিবাদ। পার্বতী আশঙ্কা করেছিলেন, ওই জমি ছেলেদের লিখে দিলে বাড়ি থেকে বার করে দিতে পারে তারা। প্রৌঢ়ার অভিযোগ, গত ছ’মাসে বার্ধক্য ভাতার গোটাটাই আত্মসাত্ করেছে ছয় ছেলে। শেষ সম্বল বলতে তাঁর এই ১৬৬ শতক জমি। তাই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জমি হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। হয়তো এটাই ছিল তাঁর ‘অপরাধ’। শুধুমাত্র জমির জন্যই যে তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁর ছেলেরা, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি পার্বতী। 

আরও পড়ুন: ভ্রমণ সংস্থার আড়ালে চারু মার্কেটের ফ্ল্যাটের নিয়ন আলোতে চলত দেহ ব্যবসা
প্রথমে মাকে দিয়ে একটি সাদা কাগজে সই সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ছয় ছেলে, কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর মাকেই খুনের ছক কষেন তাঁরা। বুধবার সকালে ফের তাঁরা মায়ের কাছে যান। 
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পার্বতী জানান, বুধবার সকালে ছয় ছেলে জোর করে চেপে ধরে একটি কাগজে টিপ সই দেওয়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু তিনি তা দিতে চাননি। এরপর তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢালা হয়। অভিযোগ, তাঁকে পুড়িয়ে মারার ছক কষেছিল ছেলেরা। কিন্তু ছোটো ছেলের হাত থেকে জ্বলন্ত দেশলাই পড়ে যায়। তখনই তাঁর আর্তচিত্কার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। 
পার্বতী সরকারের কথা শুনে স্তম্ভিত প্রতিবেশীরাও। ছয় ছেলের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করেছেন পার্বতী সরকার। তিনি এখন  মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। শরীরের ক্ষত হয়তো সেরে উঠবে জলদি, কিন্তু পেটের ছেলের এই আচরণে তাঁর মনে যে ক্ষত তৈরি হল, তা কি আদৌ কোনওদিন সারবে? কানাঘুষো এখন পার্বতীর প্রতিবেশীদের মধ্যেই।    

.