“মা তোমার ছোটো ছেলেকে মেরে ফেললাম”
ইতু বাগচির দুই ছেলে, ছোটো ছেলে তারণ, বড় ছেলে বেঞ্জামিন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: সকাল হতে অনেকটাই দেরি। পাশের ঘরে ছোটো ছেলে বসে পড়ছে, আর বড় ছেলে ঘুমোতে চলে গিয়েছে- সেটা দেখেই শুতে গিয়েছিলেন মা। আচমকাই দরজায় সজোরে ধাক্কা। ধড়পড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন মা। দরজা খুলতেই বড় ছেলে ঘরে ঢুকে পড়েন। গম্ভীর কন্ঠে বলেন, “মা তোমার ছোটো ছেলেকে মেরে দিলাম।” আধঘুম চোখে কিছুই বুঝতে পারেননি না। আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই বড় ছেলে হুড়মুড় করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বিপদ আঁচ করে ছোটো ছেলের ঘরে ঢুকে শরীর দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বেয়ে যায় তাঁর। খাটের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে ছোট ছেলে। নাক, কান, মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। বিছানার ওপর পড়ে রয়েছে চাপ চাপ তাজা রক্ত। মহিলার চিত্কারেই প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন ওই যুবককে। বনগাঁর পুরাতন কালীতলা এলাকার বাসিন্দারা সাক্ষী থাকলেন এক ভয়ঙ্কর ঘটনার।
আরও পড়ুন: এক রাতে ৩টি গোখরো পিটিয়ে মেরে ছবি পোস্ট ফেসবুকে! রাতেই যুবকের সঙ্গে ঘটল ভয়ঙ্কর ঘটনা
ইতু বাগচির দুই ছেলে, ছোটো ছেলে তারণ, বড় ছেলে বেঞ্জামিন। তারণ বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বেঞ্জামিন পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন আগেই। ইতুদেবীর স্বামী ভিনরাজ্যে কর্মরত। সেখানেই বাবার সঙ্গে বেশ কিছুদিন কাজ করেছিলেন বেঞ্জামিন। সেখানে হিরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। পরে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। বেশ কিছুদিন নেশামুক্তি কেন্দ্রে চিকিত্সাও চলে তাঁর। কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই। ইদানীং আরও বেশি বেসামাল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন বেঞ্জামিন।
ছোটো ছেলে তারণের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায়। সামনেই পরীক্ষা ছিল তার। সেজন্য রাত জেগে পড়াশোনাও করত। সোমবার রাতেই দুই ভাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে। এরপর বেঞ্জামিন শুতে চলে যান বলে ইতুর দাবি। তারণ নিজের ঘরে পড়াশোনা করছিল। তারপর মাঝরাতেই মায়ের ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন বেঞ্জামিন।
আরও পড়ুন: অনীক থেকে অ্যানি হয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন পুরনো বন্ধু সাগ্নিকের সঙ্গে! তারপর...
ইতুদেবীর অভিযোগ, বেঞ্জামিনই তারণকে খুন করেছে। বিছানার পাশে পুরনো টেবিলের ভাঙা পা পড়তে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। ওই কাঠের টুকরো দিয়েই তারণের মাথায় মেরেছিলেন বেঞ্জামিন। কিন্তু কী কারণে খুন, সেটা স্পষ্ট নয় ইতুদেবীর কাছেও। নেশার টাকা না পেয়ে কয়েকবছর আগে মায়ের পেটেও ধারালো অস্ত্র বেঞ্জামিন ঢুকিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। সেবার হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিত্সার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ইতুদেবীর। ছোটো ছেলের খুনের পর আর বড় ছেলের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনার দিন রাতেও ভাইয়ের সঙ্গে কোনও ঝামেলা হয়নি বেঞ্জামিনের। কোনওদিনই বিশেষ কিছু ঝামেলা হত না। তবে কেন খুন? জলে ঝাপসা হয়ে যাওয়া ইতুদেবীর নির্বাক দৃষ্টি যেন সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে।