INDvsNZ: কেন গত চার বছরে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি বদলাননি Shreyas Iyer-এর বাবা?
ছেলের উত্থানে রাহুল দ্রাবিড় ও প্রবীণ আমরে ধন্যবাদ জানালেন সন্তোষ আইয়ার।
সব্যসাচী বাগচী: কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এই কান্ডকে! ছেলেকে তাঁর লক্ষ্যের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁর বাবা। অবশেষে ছেলের সাফল্যে সেই বাবার বুক চওড়া হয়েছে।গত চার বছরে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি বদলাননি শ্রেয়স আইয়ারের (Shreyas Iyer) বাবা সন্তোষ আইয়ার (Santosh Iyer)। কেন এমন কান্ড ঘটিয়েছিলেন? সেটাই অভিষেক টেস্টে শ্রেয়সের শতরানের দিন জি ২৪ ঘণ্টাকে জানালেন সন্তোষ।
২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রাঁচি টেস্টের আগে চোট পেয়েছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। সেই সময় টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন শ্রেয়স। তবে দলে থাকলেও প্রথম একাদশে জায়গা পাননি এই মুম্বইকর। তবে টেস্ট অভিষেক না হলেও টেস্ট জার্সিতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি জেতার পর ভারতীয় দলের সঙ্গে গ্রুপ ছবিতে জায়গা হয় শ্রেয়সের। সেই ছবিটিকেই প্রোফাইল পিকচার করে সন্তোষ তাঁর ছেলেকে মনে করিয়ে দিতেন যে, টেস্ট খেলাই হল তাঁর আসল লক্ষ্য, সেটা যেন তিনি ভুলে না যান। সেই কারণেই ২০১৭ সাল থেকে সন্তোষ নিজের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি বদলাননি।
আরও পড়ুন: INDvsNZ: 'শিষ্য' Shreyas Iyer-এর উত্থানের পরেও কেন আশঙ্কায় 'গুরু' Pravin Amre?
একমাত্র ছেলে শতরান করার পর সন্তোষ বলছিলেন, "আমি জানতাম আমাদের পরিবার এমন একটা মুহূর্তের সাক্ষী হবেই। ছেলের এমন সাফল্য দেখার জন্যই তো বাপের বেঁচে থাকা। ওর ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের জন্য আমরা অনেক ত্যাগ করেছি। বাবা হিসেবে সেটা কর্তব্য বলেই মনে করি। তবে ওর কাছে একটাই আবদার ছিল। সেটা হল টেস্টে অভিষেক ঘটানো। চিরতরে চোখ বন্ধ করার আগে সেটাও দেখে যেতে পারলাম। এরমধ্যে বাড়তি পাওনা হল শ্রেয়সের শতরান। এমন মুহূর্ত দেখার জন্য সেই ২০১৭ সাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি বদলাইনি। তবে এ বার হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি বদলে ফেলব। এ বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে ছেলের শতরানের পর ব্যাট দেখানোর ছবি থাকবে। কারণ এটাই যে আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি।"
কানপুর টেস্ট থেকে গর্বিত সন্তোষের প্রাপ্তি শুধু ছেলের শতরান নয়। ছেলে শ্রেয়সের মতো তিনিও প্রবাদপ্রতিম সুনীল গাভাসকরের অন্ধভক্ত। সেই কিংবদন্তির কাছ থেকে 'টেস্ট ক্যাপ' পেয়েছেন শ্রেয়স। সেটাও সন্তোষের কাছে পরম পাওনা। সেটা মনে করিয়ে যোগ করলেন, "আমরা মুম্বইকর। আমাদের কাছে সুনীল স্যার ভগবানের মতো। ছোটবেলা থেকে ওঁর খেলা দেখে বড় হয়েছি। এমন একজন মানুষের কাছ থেকে 'টেস্ট ক্যাপ' পাওয়া তো বিশাল বড় পাওনা। শ্রেয়স এমনিতেই মানসিক ভাবে ভীষণ শক্তিশালী। তাই আমার তো মনে হয় গাভাসকরের কাছ থেকে 'টেস্ট ক্যাপ' পাওয়া ওর মনের জোর আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।"
সবেমাত্র টেস্ট দলের দরজা খুললেও অনেক আগেই সীমিত ওভারের দলে জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ছিল দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়কত্ব। শ্রেয়সের ক্রিকেট কেরিয়ার বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু চলতি বছর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচে কাঁধে চোট পাওয়ার পর এক ঝটকায় শ্রেয়সের জীবন বদলে গিয়েছিল। চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে একটা সময় ব্যাট তুলতে পর্যন্ত পারতেন না। চার মাস আগেও তিনি ভাবতে পারতেন না যে এমন রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হবে। টানা দুই মাস ব্যাটের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। স্বভাবতই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন। সেই সময় শ্রেয়সকে আগলে রেখেছিলেন প্রবীণ আমরে। সেই জন্য ভারতের প্রাক্তন ব্যাটারকেও ধন্যবাদ জানালেন সন্তোষ।
শ্রেয়সের বাবা বলছেন, "ছেলের এমন শারীরিক অবস্থা দেখার পর আমরাও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। সেই সময় আমাদের পাশে প্রবীণ আমরে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি সব সময় শ্রেয়সকে আগলে রেখেছিলেন। বিলেতে অস্ত্রোপচারের পর থেকে মাঠে ফেরানো পর্যন্ত তিনি ছিলেন আমার ছেলের ছায়াসঙ্গী। তাই এই সাফল্য শুধু শ্রেয়সের নয়। এই সাফল্যে প্রবীণ আমরের নামও লেখা থাকবে।"
আন্তর্জাতিক কেরিয়ার রবি শাস্ত্রী হেড কোচ থাকার সময় শুরু হয়েছিল। তবে শ্রেয়সের কাছে রাহুল দ্রাবিড় স্পেশ্যাল। কারণ অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে ভারতীয় এ দল। ছেলের উত্থান খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন টিম ইন্ডিয়ার বর্তমান কোচ। তাই শেষে 'দ্যা ওয়াল'কেও বিশেষ ধন্যবাদ জানালেন আইয়ার পরিবারের বড় কর্তা।
আরও পড়ুন: INDvsNZ: কেন Sunil Gavaskar-এর নাম ধরে ডাকলেন শতরানকারী Shreyas Iyer?
তিনি যোগ করলেন, "সাধারণত ম্যাচের সময় আমি ছেলের সঙ্গে কথা বলি না। এটা আমার অনেক বছরের অভ্যাস। তবে এ বার নিজেকে আটকাতে পারিনি। প্রথম দিন ৭৫ রানে অপরাজিত থাকার পর থেকে নিজেও খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই সন্ধেবেলা শ্রেয়সের সঙ্গে কথা বলছিলাম। আসলে ওর মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। সেই সময় শ্রেয়স শুধু রাহুল দ্রাবিড়ের কথা বলে যাচ্ছিল। প্রতি মুহূর্তে ওঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিল। কারণ রাহুল দ্রাবিড় এ বারও পাশে না দাঁড়ালে শ্রেয়স যে টেস্ট অভিষেক ঘটাতেই পারত না।"
খেলোয়াড় জীবনে নীরবে একজন যোদ্ধার মতো দলের সেবা করে গিয়েছেন। এখন কোচ হিসেবে নতুন ভারতীয় দল গড়তেও কাজ করে চলেছেন 'দ্যা ওয়াল'। সেই দ্রাবিড়ীয় সভ্যতার নতুন সৈনিক হলেন মুম্বইকর শ্রেয়স। গত কয়েক মাসের ঝড় পেরিয়ে অভিষেক টেস্টে শতরান তো এসেছে, এ বার বাকিটা দুর্গম পথ শ্রেয়স কেমন ভাবে অতিক্রম করেন সেটাই দেখার।