Ben Stokes, ICC T20 World Cup final 2022: মানসিক সমস্যার জন্য বাইশ গজ থেকে সরে যাওয়া বেন স্টোকসই ইংল্যান্ডের নতুন নায়ক
২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। ভেন্যু ইডেন থেকে বদলে গিয়ে লর্ডস। এবার প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়। বরং নিউজিল্যান্ড। ২০১৯ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনালের স্মৃতিটা শুধু নিউজিল্যান্ড বলে নয়। পুরো ক্রিকেট বিশ্বই ভুলতে পারবে না।
সবস্যাচী বাগচী
বাবার মৃত্যুর পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকতেন ইংল্যান্ডের (England) টেস্ট অধিনায়ক। সেই কঠিন সময় নিয়মিত ওষুধ খেতে হত তাঁকে। খুব কাছের বাইশ গজের যুদ্ধ থেকে সরেও গিয়েছিলেন কয়েক মাস। বাবা জেরার্ড স্টোকসের (Gerard James Stokes) মৃত্যুর ধাক্কা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেননি বেন। বেশ কিছু দিন মস্তিষ্কের ক্যান্সারে ভোগার পর ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। তার পর থেকেই দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতার সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন বেন স্টোকস (Ben Stokes)। মন দিতে পারছিলেন না ক্রিকেটে। তাই গত বছর কিছু দিন নিজেকে ক্রিকেট থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। সেই বেন-এর ব্যাটের সৌজন্যে দুবার বিশ্বজয়ী হল ইংল্যান্ড। ২০১৯ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জেতার পর রবিবার দেশকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (ICC T20 World Cup) এনে দিলেন এক সময় হারিয়ে যাওয়া বেন।
তারকা অলরাউন্ডার স্টোকস অতীতে ইংল্যান্ডকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও দেশকে সাফল্য এনে দেবেন। তবে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ইডেন গার্ডেন্সের সেই 'কালো রাত' কোনও দিন ভুলতে পারবেন না। শেষ ছয় বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১৯ রান। কার্লোস ব্রেথওয়েট পরপর চারটি ছক্কা মেরে শুধু বেন-কে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। এপ্রিল রাতের সেই ইডেন দেখেছিল ক্যারিবিয়ানদের বিজয়োল্লাস। আর দেখেছিল এক অন্ধকার চোখ-মুখের ক্রিকেটারকে। হাঁটু গেড়ে পিচের ওপর বসে। তাঁর ক্রিকেট সত্তা নিয়ে উঠে গিয়েছিল প্রশ্ন। সেই কঠিন সময় বেন-এর পাশে ছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক অইন মর্গ্যান (Eoin Morgan) এবং তাঁর পরিবার।
সেই প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগেও বেন বলেছিলেন, 'ভাগ্যিস অইনের মতো এক বন্ধুকে পেয়েছিলাম! সেই ফাইনালের পর আমি নিজেকে ঘরবন্দী করে নিয়েছিলাম। জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছিল। ও একজন প্রকৃত বন্ধুর মতো পাশে না দাঁড়ালে আমি ভেসে যেতাম।' ঠিকই বলেছেন বেন। কোথায় ছিল তাঁর সেই ব্রিটিশ সুলভ ঔদ্ধত্য! ছিল এক আত্মসমর্পণের ছবি। সতীর্থরা পাশে এসে কাঁধে টোকা মারার পর যাঁর সম্বিৎ ফিরেছিল তাঁর। শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে দেখতে দেখতে মাঠ ছেড়েছিলেন বিধ্বস্ত বেন।
২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। ভেন্যু ইডেন থেকে বদলে গিয়ে লর্ডস। এবার প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়। বরং নিউজিল্যান্ড। ২০১৯ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনালের স্মৃতিটা শুধু নিউজিল্যান্ড বলে নয়। পুরো ক্রিকেট বিশ্বই ভুলতে পারবে না। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ম্যাচ টাই হওয়ার পর ফলাফল নির্ধারণের জন্য সুপার ওভারে গড়ায় লড়াই। সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হয়। তবে বেশি বাউন্ডারি মারার জন্য ম্যাচ জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। আইসিসি-র আজব নিয়মে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু তাই বলে বেন-এর লড়াইকে খাটো করে দেখা উচিত নয়। ৯৮ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। মেরেছিলেন ৫টি চার ও ২টি ছক্কা। বেন সেই মহাকাব্যিক ইনিংস না খেললে কেন উইলিয়ামসনের দেশের হাতে বিশ্বকাপ জেতা নিশ্চিত ছিল।
এরপর ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর। বেন কত বড় ম্যাচ উইনার সেটা দেখিয়ে দিলেন। ম্যাচ জেতানো শটটা মিড উইকেটের উপর দিয়ে মেরেই লাফিয়ে উঠলেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক। ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতালেন ৪৯ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। জস বাটলার, অ্যালেক্স হেলসদের হারিয়ে ইংল্যান্ড যখন একটু বেকায়দায়, তখন দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিলেন বেন। ঠান্ডা মাথায়, ধীরে সুস্থে মেলবোর্নের উইকেটে নিজেকে থিতু করলেন। সেই সঙ্গে হিসাব কষে এগোতে থাকলেন জয়ের রানের দিকে। মেরেছেন একটি ছক্কা মেরেছেন। সঙ্গে পাঁচটি চার। কোনও তাড়াহুড়ো ছিল না তাঁর ইনিংসে। তবে কাজের কাজটা শেষ করে মাঠ ছাড়লেন।
দলকে রবিবার বিশ্বকাপ জিতিয়ে বেন বলেন, 'ফাইনালের মতো মঞ্চে রান তাড়া করতে হলে পুরনো সব কথা ভুলে যেতে হয়। ৮ উইকেটে ১৩৭ রানে পাকিস্তানকে আটকে রাখার পিছনে বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। শুরুতে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা ছিল, কিন্তু সেটা মনে রেখে এগিয়ে যাওয়া যেত না। সেরা দল সব সময় ঘুষি খেয়ে ফিরে আসে। পরের পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়। এটা দারুণ একটা সন্ধে ছিল।'
শুধু তো মানসিক সমস্যা নয়। মাঠের বাইরেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। সাল ২০১৭। রেস্তরাঁর বাইরে মারপিট করে পুলিসের হাতে ধরা পড়েছিলেন বেন। সংবাদমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। কেউ লিখেছিলেন, 'মত্ত অবস্থায় মারপিট করেছেন ক্রিকেটার', কেউ লিখেছিলেন, 'তাঁকে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করা উচিত।' যদিও বেন কিন্তু দৃপ্ত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন যে প্রতিবাদী স্বভাব তাঁর বাবা-র কাছ থেকে পেয়েছেন।
তাঁর জীবনে অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী। সেটা নিয়েই তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র। নাম ‘বেন স্টোকস: ফিনিক্স ফ্রম দ্য অ্যাশেজ।’ অর্থাৎ ছাই থেকে উঠে আসা আগুনপাখি। একটা সময় মনে হয়েছিল তাঁর জীবন থেকে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে। সেই বেন পাকিস্তানকে খালি হাতে মেলবোর্ন থেকে ফিরিয়ে দিলেন। করলেন রাজার মতো কামব্যাক।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)