অলিম্পিক মশাল দৌড়ের ইতিহাস
অলিম্পিক শুরুতেই আমরা দেখি অলিম্পিক মশাল দৌড়। এথেন্স থেকে শুরু হয়ে অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিটি প্রান্তে ঘুরে মশাল পৌঁছয় আয়োজক দেশের মূল স্টেডিয়ামে। এই মশালের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।
অলিম্পিক শুরুতেই আমরা দেখি অলিম্পিক মশাল দৌড়। এথেন্স থেকে শুরু হয়ে অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিটি প্রান্তে ঘুরে মশাল পৌঁছয় আয়োজক দেশের মূল স্টেডিয়ামে। এই মশালের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। গ্রীক পুরানে কথিত আছে,আগুনের ঈশ্বর জিউসের থেকে আগুন চুরি করেন প্রমিথিউস। মানুষের কল্যানে সেই আগুন চুরি করে যেখানে রাখেন, সেখান থেকেই নাকি প্রাচীন অলিম্পিকের গোড়াপত্তন। সেই প্রাচীনকাল থেকেই গ্রীসের অলিম্পিয়ায় এগারোজন মহিলা সূর্যের আলো থেকে প্যারাবলিক আয়নার মাধ্যমে জ্বালান গর্বের মশাল।সেই মশাল নিয়ে দৌড় বিভিন্ন দেশ ঘুরে শেষ হয় আয়োজক দেশের মূল স্টেডিয়ামে।সেখানে বিরাট আধারে জ্বালানো হয় অলিম্পিকের মশাল। প্রাচীন অলিম্পিকে মশাল দৌড়ের প্রচলন থাকলেও,আধুনিক অলিম্পিকের শুরুতেই সেই সংস্কৃতি উধাও হয়ে যায়।
আবার উনিশশো আঠাশ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিকে চালু হয় অলিম্পিক মশাল।মজার ব্যাপার, মশালের ওজন ও দৈর্ঘ্য এক থাকলেও,বদলেছে মশালের উপকরণ। উনিশশো আটচল্লিশে লন্ডন অলিম্পিকে সাতচল্লিশ সেন্টিমিটার লম্বা ও নশো ষাট গ্রাম ওজনের মশাল তৈরি হয়েছিল হিডুমিনিয়াম-অ্যালুমিনিয়ামের সংকর ধাতু দিয়ে। ছাপ্পান্নতে মেলবোর্ন অলিম্পিকে সেই উপকরণ বদলে হয় ম্যাগনেশিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম। এরপরও বদলেছে উপকরণ।এমনকি মশালের শিখাও তৈরি হয়েছে বিভিন্ন উপকরণে। কখনও অলিভ অয়েল,কখনও বা প্রপিলিনের মত তরল গ্যাসে।।
উনিশশো আঠাশ সাল থেকে অলিম্পিক মশাল পুনরায় চালু হলেও, ছিলনা মশাল দৌড়ের কোনও ব্যাপারই। এই মশাল দৌড় শুরু হয় নাত্সী জমানায়। উনিশশো ছত্রিশ সালে বার্লিন অলিম্পিকে নাত্সি জোসেফ গোয়েবলসের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় অলিম্পিকে মশাল দৌড়। গ্রীস থেকে মশাল বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে পৌঁছয় বার্লিনে।গ্রীস থেকে বার্লিন-দীর্ঘ তিন হাজার একশো সাতাশি কিলোমিটার পথ তিন হাজার তিনশো একত্রিশজন দৌড়বীরের হাত ধরে পৌঁছয় অলিম্পিকের মূল স্টেডিয়ামে।পরবর্তীতে অলিম্পিক মশাল দৌড় শুধুমাত্র স্থলপথে নয়,জলপথে এমনকি আকাশপথেও পৌঁছেছে বিভিন্ন দেশে। প্রথমবার উনিশশো আটচল্লিশ সালে অলিম্পিক মশালকে ইংলিশ চ্যানেল পার করাতে ব্যবহৃত হয়েছিল নৌকা। উনিশশো বাহান্নতে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে আকাশপথে মশাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
অলিম্পিকের মশালের ইতিহাস এতটাই বড় যে শেষ হওয়ার নয়।অলিম্পিক সংখ্যা যত বেড়েছে,বেড়েছে পথ এবং একই সঙ্গে বেড়েছে মশালবাহকের সংখ্যাও।দুহাজার চারে মশাল দৌড় প্রথমবার বিশ্বের সবপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়।আটত্তর দিনে মশালের বিশ্ব ভ্রমণে আটাত্তর হাজার পথ মশাল অতিক্রম করে এগারো হাজার তিনশো মশাল বাহকের হাত ধরে। অলিম্পিকের রেওয়াজ অনুযায়ী আয়োজক দেশের মূল স্টেডিয়ামে মশাল দৌড়ের শেষে অলিম্পিক কলড্রন বা বিশাল কড়াইয়ের মত অলিম্পিক মশালের আধারে আগুন জ্বালান বিখ্যাত কোনও ক্রীড়াবিদ ।যেমন উনিশশো বাহান্নতে জ্বালিয়েছিলেন পাভো নুরমি।বিরানব্বইয়ে প্লাতিনি,ছিয়ানব্বইয়ে মহম্মদ আলি।এছাড়াও প্যারা অলিম্পিকে বিখ্যাত প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদরাও যুক্ত হয়েছেন এই কর্মকাণ্ডে। এবারও প্রায় আট হাজার অলিম্পিক মশাল তৈরি হয়েছে মশাল দৌড়ের জন্য। মশালগুলি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরছে। অবশেষে সাতাশে জুলাই লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনের দিন শেষ হবে এই দীর্ঘ পথ চলা।