ইডেন টেস্টের আগে সচিন নামা
ইডেন টেস্টের সব আকর্ষণ তিনিই। তাঁকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে এখন চোরা ঝড়। তিনি সচিন তেন্ডুলকর। ইডেনে তিনি এর আগেও অনেক টেস্ট খেলছেন। কিন্তু এবারেরটা যেন কোথাও একটা আলাদা। এটা ঠিক এর আগেও তাঁর অবসর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু নির্বাচকদের সঙ্গে নিজেকে নিয়ে কথা বলে সচিন এই প্রথমবার কোথাও যেন সমালোচনাটাকে পাত্তা দিলেন। ইডেন টেস্টের আগে সচিনকে নিয়ে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।
ইডেন টেস্টের সব আকর্ষণ তিনিই। তাঁকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে এখন চোরা ঝড়। তিনি সচিন তেন্ডুলকর। ইডেনে তিনি এর আগেও অনেক টেস্ট খেলছেন। কিন্তু এবারেরটা যেন কোথাও একটা আলাদা। এটা ঠিক এর আগেও তাঁর অবসর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু নির্বাচকদের সঙ্গে নিজেকে নিয়ে কথা বলে সচিন এই প্রথমবার কোথাও যেন সমালোচনাটাকে পাত্তা দিলেন। ইডেন টেস্টের আগে সচিনকে নিয়ে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।
সচিন যেদিন দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে একশোটা শতরান পূরণ করলেন, ক্রিকেটপ্রেমী থেকে মিডিয়া, সমালোচক থেকে শুভাকাঙ্খী সবাই সেদিন এক কথায় চিত্কার করে বলেছিলেন `একশোয় একশো`, `রানের জন্য সচিনের মন চির ক্ষুধার্ত`, ` সচিনই সর্বকালের সেরা, ডন নন` আরও কত কি। তবে একথা সত্য, তাঁর ব্যাটে বড়ো কোনও রান আসেনি অনেকদিন ধরেই আর সেটা যে তাঁকে কতটা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে একমাত্র সচিন এবং সচিনই জানেন। তাঁর লড়াইটা শুধুমাত্র নিজের কাছে। হিমালয়ের পাহাড়ে উঠে নিজেকে ধরে রাখার লড়াই, নীচে পড়ে না যাবার লড়াই। তাই আসন্ন ভারত-ইংল্যান্ডের তৃতীয় টেস্টে সচিন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেটাই পর্যালোচনা করে দেখি।
১) সচিন আর সচিন ২০১২: বছর শেষ হতে চলল। ইংল্যান্ড সিরিজ আর মাঝে পাকিস্তান কয়েকটা ম্যাচ দিয়েই ২০১২ শেষ হবে। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮০ রান ছাড়া টেস্টে তাঁর উল্লেখযোগ্য কোন রান নেই। এমনকি একটাও অর্ধশতরানও করতে পারেননি। একদিনের ম্যাচে ঢাকাতে মাত্র একটা সেঞ্চুরি। যে সেঞ্চুরি তাঁর ক্রিকেট জীবনে সর্ব্বোচ সম্মান দিয়েছে, একশতম শতরানের মালিক হিসাবে। কিন্তু তারপর অনেকটা সময় কেটে গেছে। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া, অগস্টে নিউজিল্যান্ড আর নভেম্বরে ইংল্যান্ড। দেশ বিদেশ সব বাইশ গজই রুক্ষ, নিস্ফলা হয়েছে তাঁর কাছে। এমত অবস্থায় ইডেন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মাঠ। আসন্ন টেস্টে একটা বড়ো রান করাটাই তাঁর এখন গুরুত্বপূর্ণ সময়।
২) সচিন, ইডেন, কলকাতা: ইডেন মাঠ নিয়ে একটা প্রচলিত কথা আছে `অভাগাদের খালি হাতে ফেরায় না`। সত্যিই তো সচিন আজ অভাগা। তাঁর চওড়া ব্যাটের রানেই উপযুক্ত জবাব। ফ্ল্যাশব্যাকে চোখ রাখলে দেখতে পাব ইডেনে সচিনের পারফরমেন্স খুব একটা খারাপ নেই। এতদিন পর্যন্ত ১১ টি ম্যাচ খেলেছেন। ২ টি শতরান ও ৫ টি অর্ধশতরান। সর্ব্বোচ ১৭৬ রান। কে বলতে পারে এই সর্ব্বোচ রান ফের তাঁর ব্যাটে ঝলসে উঠতে পারে! সৌরভ, দ্রাবিড়, লক্ষণের মতো সচিনও কলকাতাবাসির কাছে খুব প্রিয়। কোথাও একটা খেদ তৈরি হলেও কলকাতাবাসি মনে প্রাণে তৈরি সচিনকে সাদর আমন্ত্রণ জানাতে। তাঁকে স্বজায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।
৩) এবার ধোনিবাহিনীর কথায়: `বদলার সিরিজে` মহেন্দ্র সিং ধোনি বেশ কিছু জায়গায় নিজের কাছে হারতে চলেছেন। প্রথম টেস্ট জেতার পর মুম্বই টেস্টে তিনি পিচ নিয়ে আরও বেশি উদ্ধত হয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ওয়াংখেড়ের পিচে প্রথম বলই ঘুরুক লাট্টুর মতো। কিন্তু সেই পিচই বুমেরাং হয়ে ভারতীয় দলকে ধুলিসাত্ করে দিল। একমাত্র পুজারা ছাড়া কেউ ব্যাটিং-এ তেমন কিছু ছাপ ফেলতে পারেননি। ভারতীয় দলের একমাত্র সিনিয়র ও বটবৃক্ষ সচিন রমেশ তেন্ডুলকারের কাছে ধোনি প্রত্যাশা করতেই পারেন ডুবে যাওয়া তরীর হাল ধরুক। পরের ম্যাচ ধোনির কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, হয়ত তাঁর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই লিটল মাস্টারের কাছে।
৪) সচিন, সোয়ান ও পানেসর: প্রশ্নটা স্পিন খেলা নিয়ে নয়। প্রশ্নটা চাপ নিয়ে। তিনি যখন চার নম্বরে ইডেনের ফাটল ধরা ক্ষতবিক্ষত পিচে খেলতে নামবেন তখন তাঁর পিঠে থাকবে অজশ্র চাপের বোঝা। দেশবাসির প্রত্যশা, ধোনির মরিয়া হয়ে টেস্ট জেতা, সমালোচকদের বিষতিরের খোঁচা আরও কত কি। প্রশ্ন এটাই, এই বোঝা তিনি কতদুর বইতে পারবেন! লড়াই চালাতে পারবেন কি সোয়ান, পানেসরের বোলিং দাপটের বিরুদ্ধে! চল্লিশ ছুঁই ছুঁই ধৈর্য কতখানি সাথ দেবে!
৫) সচিন ও সমালোচক: পৃথিবীর বড় বড় রথি-মহারথিরা যখন খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে দিন কাটিয়েছে, সমালোচকরা সুযোগের সত্ ব্যবহার করতে কোনদিন ছাড়েননি। তাঁদের মগজে এতক্ষানি তেল সঞ্চিত থাকে নিজেদের মাখা হয়ে যাওয়ার পরও অপরকে মাখাতে তাঁদের কোনও অসুবিধা হয় না। সচিনের মতো বড় বড় ব্যাটসম্যানের কাছে এই তেল জীবনদায়ী অসুধের মতো কাজ করে। আশা করা যায় ইডেন টেস্টে সমালোচকদের এই তেল নতুন করে জীবন দিতে পারে।
৬) লড়াই সচিন এবং সচিন: ক্রিকেট আর সচিন যখন একটাই আত্মা তখন সারা বিশ্বে কোন বিষয় নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠছে তাঁর দেখার বিন্দুমাত্র কোনও আগ্রহ নেই। শতরানের মালিক হবার পর তিনি স্পষ্টই জানিয়েছিলেন ২০১৪ বিশ্বকাপ খেলতে পারেন। যতদিন তাঁর খেলার প্রতি ইচ্ছা, একাগ্রহতা কাজ করবে তিনি ততদিন খেলে যেতে চান। তিনি এটাও নিশ্চিন্ত ছিলেন তাঁকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। কিন্তু পর পর ব্যর্থতা মধ্যে দিয়ে হাঁটার পর হয়ত তিনি বুঝতে পেরেছেন বয়স হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাই লড়াই তাঁর বয়সের সাথে, লড়াই তাঁর ধৈর্যের সাথে। বলাই যায় ইডেনের দর্শকরা ভারত-ইংল্যান্ডের হারা জেতা ম্যাচ দেখতে যাচ্ছে না, তারসঙ্গে সচিন এবং সচিনের লড়াই দেখতে যাচ্ছেন।