কিস্তিমাত আগেই হয়েছে, এখন অপেক্ষা স্বীকৃতির

Updated By: Aug 14, 2016, 06:23 PM IST
 কিস্তিমাত আগেই হয়েছে, এখন অপেক্ষা স্বীকৃতির

পূজা বসু দত্ত

ওয়েব ডেস্ক: প্রদুনোভা ভল্ট। এখন এই বিষয়ে নিশ্চয়ই জেনেছেন অনেকে। সৌজন্য অলিম্পিক গেমস, যাতে এই মরণ ঝাঁপেই নিজের যোগ্যতা অর্জন করেছেন দীপা কর্মকার। আমি নিশ্চিত খেলা নিয়ে যাঁদের চর্চা, তাঁদের বাদ দিলে, এই দীপার কথা আগে অনেকেই শোনেননি। অলিম্পিকে দেশের যিনি মুখ, সেই সলমন খানও তো চেনেন না দীপাকে! তাতে যদিও কিস্যু এসে যায় না। ভাববেন না, এর ফলে তাঁর ইমেজে ধাক্কা খাবে। সেটা হলে হত অনেক আগেই। যাকগে সেই প্রসঙ্গ।

অনেকদিনের মরিয়া চেষ্টায় দীপা এখন অলিম্পিকে। যা নিয়ে আমারা বাঙালিরা বেশ আপ্লুত। এই প্রথম জিমন্যাস্টে ভারতের হয়ে কোনও মহিলা প্রতিনিধিত্ব করছেন। মহিলা খেলোয়াড় বলে আলাদা সম্মান পাওনা তো বটেই। উনিশো সাল থেকে শুরু ভারতীয়দের অলিম্পিক অভিযান। আর প্রথম মহিলা ক্রীড়াবীদ অলিম্পিকে পুরস্কৃত হন দু হাজার সালে। বিশ্বের সর্ববৃহত্‍ ক্রীড়া আঙিনায় নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে ভারতীয় মহিলাদের লেগে গেল একশটা বছর। প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবীদ, এম মালেশ্বরী ভারতোল্লনে ভারতের হয়ে জেতেন বোঞ্জ পদক।

এবারও অলিম্পিকে একশ একান্ন প্রতিনিধির মধ্যে মহিলা ক্রীড়াবীদের অংশগ্রহণের সংখ্যা উল্লখযোগ্য নয়। স্বাধীনতার ষাটটা বছর পেরিয়েও ছেলেদের সমান হতে পারল কই ভারতীয় মহিলারা। যার প্রতিফলন খেলার মাঠেও। তাই তো মহিলা খেলোয়াড়কে অনায়াসেই প্রশ্ন করা যায়, খেলা তো ঢের হল, এবার সংসার, স্বামী, ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখের সংসার কবে হবে? হায় রে, মহিলা খেলোয়াড়রা। লড়াইটা তো কম করতে হয় না তাঁদের। শুরুটা তো হয় ঘর থেকেই। মেয়ে খেলবে, এটা কি খুব মন থেকে মেনে নিতে পারেন অভিভাবকরা। তাঁরা যদিও বা মানেন, পড়শি, আত্মীয়দের জবাবদিহিতে প্রাণ যে ওষ্ঠাগত হয়, সেটা মেয়ে হয়ে ভালই বুঝি আমি।

এরপর মাঠে লড়াই। একেবারে হাড্ডাহাড্ডি। একরোখা, একনিষ্ঠ লড়াইয়ে কী পান তাঁরা? কজন পান তাদের যোগ্য স্বীকৃতি। এখনও সানিয়া মির্জার খেলা থেকে বেশি, তাঁর সৌন্দর্য বা পাকিস্তানি বরই আলোচনার বিষয় অনেকের কাছেই। আজাহারউদ্দিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব না হলে, কেউ কী রাখত, জোয়ালা গুট্টার খবর? তবুও লড়ে চলেন এঁরা। নিজেদের জেদে, নিজেদের জন্য, দেশের জন্য।

বলিউড কিছুটা সাহয্য করে বটে, তাঁদের সিনেমার তুলে ধরার। তবে সেখানেও তো হাজারো বাছ বিচার। মেরি কম যদি একটা ছবি হয়, তবে পুরুষ খেলোয়াড়দের ছবি ভুরি ভুরি। তাই তাদের ব্যবসাও বেশি। সত্যি তো মেয়েদের, একেবারে মেয়েদের মত করেই দেখতে অভ্যস্থ আমরা। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সময় তো লাগবেই। সেইজন্য অনায়াসে তিনশো কোটির সুলতানে মেয়ে কুস্তীগীরের অস্ত্বিত্ব সঙ্কটে।

আর কয়েক ঘন্টা পর, আসরে নামছেন দীপা কর্মকার। তাঁকে ঘিরে উত্সাহ রয়েছে। এখন তিনি ভারতের উজ্জল মুখ। সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ, তিনি যে টেকনিক অবলম্বন করেন, বিশ্বের মধ্যে সেটা বিরল। মাত্র পাঁচ জন এই ঝুঁকি নিয়েছেন এ যাবত‍। এতদিনে তিনি দেশের মানুষের কাছে কিছুটা পরিচিতি পেয়েছেন। আশা করব দেশের মেয়েটির জন্য প্রার্থণা করবেন সবাই। দেশের মুখ উজ্জ্বল আগেই করেছেন দীপা, নিজেকে এইভাবে তৈরি করে। এবার তাঁর যোগ্য সম্মান পাওয়ার অপেক্ষা। 

.