বাংলার বাঘ আর ভারতের সংখ্যাপুরুষকে মিলিয়ে দিল ২৯ জুন

| Jun 29, 2021, 19:07 PM IST
1/9

দু'জনের মধ্যে তিরিশ বছরের ব্যবধান। দুই যুগের কিছু বেশি। কিন্তু দু'জনের মধ্যে মিল অনেক। দুজনেই শিক্ষাবিদ। দুজনেই দুটি প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ। দুজনেই বিজাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় লালিত-চালিত নড়বড়ে বাঙালি সন্তানকে ভারতীয় ঐতিহ্য ও বঙ্গসংস্কৃতিতে মোড়া শিক্ষাদান পদ্ধতির মধ্যে টেনে এনে 'মানুষ' করার ব্রতে নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন। প্রথমজন 'বাংলার বাঘ' আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। অন্য জন ভারতীয় সংখ্যাতত্ত্বের প্রাণপুরুষ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। দুজনের মধ্যে আরও এক মিল। দুজনেই আজ, ২৯ জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

2/9

স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁর কর্মজীবনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। আশুতোষের জন্ম বৌবাজারের মলঙ্গা লেনের এক ভাড়াটিয়া বাড়িতে। তবে তাঁদের পরিবারের আদি বসবাস ছিল হুগলি জেলার জিরাট-বলাগড় গ্রামে। আগাগোড়া মেধাবী ছাত্র ছিলেন আশুতোষ মুখার্জী।  

3/9

১৮৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি ও ১৮৮৫ সালে গণিতে এম.এ পাস করেন। পরের বছরে পদার্থবিদ্যাতেও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৮৮৬ সালে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ জ্যামিতির ওপর তার কাজের স্বীকৃতি দেন।

4/9

১৮৮৮ সালে তিনি বি.এল. ডিগ্ৰি লাভ করেন এবং তখন থেকেই আইন ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি অ্যাকাডেমিক পড়াশোনাও চালিয়ে যান। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন জার্নালে তিনি উচ্চতর গণিতের উপর প্রায় বিশটির মতো প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৯০৪ সালে তিনি কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯০৮ সালে তিনি 'ক্যালকাটা ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের  দায়িত্ব পালন করেন।

5/9

১৯০৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উজ্জীবিত করে তোলে। আশুতোষের বিশ্ববিদ্য়ালয়ের কর্মভার গ্রহণ-পর্বে বাংলা স্বদেশীদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তপ্ত। অভিযোগ উঠেছিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত ঔপনিবেশিক শিক্ষা পুঁথিগত, কেতাবি ও অবৈজ্ঞানিক এবং এই শিক্ষাব্যবস্থা ব্রিটিশ রাজের জন্য শুধু কেরানিই তৈরি করে। আশুতোষ এ মত মেনে নেননি। তিনিও স্বাধীনচেতা ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষই ছিলেন। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপ্রচেষ্টাকে তিনি সমর্থন করেননি। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত পাশ্চাত্য শিক্ষাকেও জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার চেয়েছিলেন, বিপ্লব চাননি। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য সেই সময়ে তাঁর মতো এক ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন ছিল বইকী! যাই হোক, এমন এক কর্মী ও প্রতিভাবান মানুষটি ১৯২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯২৪ সালের ২৫ মে পাটনায় তিনি প্রয়াত হন।  

6/9

তাঁকে ভারতে আধুনিক পরিসংখ্যানের জনক মনে করা হয়। ১৯৫০ দশকেই তিনি ভারতে কম্পিউটার আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মানুষটির সেই সময়ে গবেষণা বিষয়ক ধ্যানধারণা ও দূরদর্শিতা ছিল লক্ষ্য করার মতো। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির মধ্যে যৌথতা স্থাপনের মাধ্যমে তাদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে ভারতে গবেষণা ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন তিনি। বর্তমানে গোটা বিশ্বে যৌথ গবেষণা বহুল সমাদৃত ও ফলপ্রসূ এক প্রক্রিয়া। সময়ের চেয়ে ভয়ানক  এগিয়ে থাকা এই মানুষটি হলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ।   

7/9

প্রশান্তচন্দ্র ১৮৯৩ সালের আজকের দিনে (২৯ জুন) কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৮ সালে স্নাতক হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন, যেখানে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ছিলেন মেঘনাদ সাহাও। মেধাবী ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে  আগ্রহ ছিল। বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন।

8/9

ভারতে ফিরে বিবাহ ও পরে কর্মজীবনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মূলত শিক্ষাবিদ তিনি। দীর্ঘ দিনের চেষ্টায় ১ ডিসেম্বর ১৯৩১ সালে মহলানবিশ প্রমথনাথ ব্যানার্জি, নিখিলরঞ্জন সেন প্রমুখের সঙ্গে আলোচনা করে বরাহনগরে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর জীবনের অক্ষয়কীর্তি।  

9/9

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মহলানবিশের বহুল আগ্রহ ছিল। তিনি এক সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। কিছুকাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও কাজ করেছিলেন।