Swami Vivekananda: মা চাইলেন শিবের মতো ছেলে, নিজে না এসে পাঠালেন তাঁর চেলা এক ভূতকে...

তাঁর মা বলতেন, 'শিবের কাছে ছেলে চাইলুম। তা তিনি নিজে না এসে পাঠালেন তার চেলা এক ভূতকে।'

Jan 12, 2025, 13:57 PM IST

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সালটা ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি, উত্তর কলকাতার সিমলাপাড়ার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন নবজাগৃতির অন্যতম প্রাণপুরুষ ও ভারত পথিক স্বামী বিবেকানন্দ। পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন হাইকোর্টের বিখ্যাত অ্যাটর্নি, মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন ধর্মপ্রাণা মহিলা। 'বীরেশ্বর' ছিলেন বিবেকানন্দের মাতৃদত্ত নাম, ডাকনাম ছিল 'বিলে'। তাঁর মা বলতেন, 'শিবের কাছে ছেলে চাইলুম। তা তিনি নিজে না এসে পাঠালেন তার চেলা এক ভূতকে।'

1/10

শিক্ষা

Study

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত উত্তর কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুলে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন, যেখানে তিনি নরেন্দ্রনাথ নামেই পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পরিবার সাময়িকভাবে রায়পুরে  স্থানান্তরিত হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে দত্ত পরিবার আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। নরেন্দ্রনাথ প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর জেনারেল অ্যাসেম্বলি কলেজে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়ার সময় তিনি পাশ্চাত্য দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা এবং ইউরোপীয় ইতিহাস নিয়েও অধ্যয়ন করেছিলেন।

2/10

নরেন্দ্রনাথকে 'শ্রুতিধর' আখ্যা

Narendranath is called Shrutidhar

জেনেরাল অ্যাসেম্বলি'জ ইনস্টিটিউশনের প্রিন্সিপাল উইলিয়াম হেস্টি লিখেছেন, 'নরেন্দ্র সত্যিকারের মেধাবী। আমি বহু দেশ দেখেছি, কিন্তু তার মতো প্রতিভা ও সম্ভাবনাময় ছাত্র দেখিনি, এমনকি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দর্শন ছাত্রদের মধ্যেও না।' কয়েকটি স্মৃতিকথায় নরেন্দ্রনাথকে 'শ্রুতিধর' (অদ্ভুত স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি) হিসেবে উল্লেখ করতেও দেখা যায়।

3/10

রামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাত্‍

Meeting with Ramakrishna

১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে, তিনি কেশবচন্দ্র সেনের নব বিধানের সদস্য হয়েছিলেন, যা রামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এবং খ্রিস্টান ধর্ম থেকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর সেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ নরেন্দ্রনাথ ফ্রিম্যাসনারি লজের সদস্য হয়েছিলেন এবং তাঁর কুড়ি বছর বয়সে কেশবচন্দ্র সেন ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রাহ্মসমাজেরও সদস্য হন। ১৮৮১ থেকে ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেনের ব্যান্ড অব হোপ-এ সক্রিয় ছিলেন, যা যুবসমাজকে ধূমপান এবং মদ্যপানে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল।

4/10

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাত্‍

Meeting with Devendranath Tagore

নরেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মনেতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনি ঈশ্বরকে দেখেছেন?' এই প্রশ্নের উত্তর তিনি না দিয়ে দেবেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'মার চোখ দুটি যোগীর ন্যায়।' দর্শন সম্পর্কে জ্ঞানে সন্তুষ্ট না হয়ে নরেন্দ্রনাথ ভাবতে থাকেন, ঈশ্বর ও ধর্ম সত্যিই কি মানুষের ক্রমবর্ধমান অভিজ্ঞতার অংশ। তিনি এই নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। কলকাতার অনেক বিশিষ্ট অধিবাসীকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছেন কিনা কিন্তু কারোর উত্তরই তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

5/10

ছাত্রাবস্থায় নরেন্দ্রনাথ

Narendranath as a student

ছাত্রাবস্থায় নরেন্দ্রনাথ দর্শনশাস্ত্রে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন, যার ফলে তিনি প্রথমে সংশয়বাদী হয়েছে উঠেছিলেন। ঈশ্বর জ্ঞানের জন্য তিনি ব্রাহ্মসমাজে যাতায়াতও শুরু করেছিলেন কিন্তু তাঁর ঈশ্বর জিজ্ঞাসার কোনও সদুত্তর তিনি তখনও পর্যন্ত পাননি। এরকম মানসিক অবস্থায় তিনি লাভ করলেন 'যত মত তত পথে' এর প্রবক্তা শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সান্নিধ্য লাভ।

6/10

দক্ষিণেশ্বরে আসার আমন্ত্রণ

Invitation to Dakshineshwar

প্রতিবেশী সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়ি ধর্মমূলক গান গাইবার জন্য ডাক পড়েছিল নরেন্দ্রনাথের। সেখানেই হয়েছিল তাঁর রামকৃষ্ণ দেবের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। প্রথম দর্শনেই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ। ঠাকুরের কাছ থেকে দক্ষিণেশ্বরে আসার আমন্ত্রণ পেলেন নরেন্দ্রনাথ এবং সেই আকর্ষণ ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছিল, সেই সময় তাঁর পিতার আকস্মিক মৃত্যু ও চরম অর্থসংকট নরেন্দ্রনাথের পরিবারে এনেছিল চরম বিপর্যয়।

7/10

ধ্যানে মগ্ন নরেনের একটি ঘটনা

An incident of Naren in meditation

ছোটবেলায় স্বামী বিবেকানন্দ (নরেন) শিবের খুবই ভক্ত ছিলেন, তাই তিনি প্রায়ই শিবের পূজা ও ধ্যান করতেন, হঠাৎ একদিন নরেন এক বটগাছের তলায় বন্ধুদের সাথে ধ্যান ধ্যান খেলছিলেন হঠাৎ ‌খেলতে খেলতে একটি সাব এসে পড়ে। সাপের ফোঁস শুনে তার বন্ধুরা চোখ খোলে দেখে এবং প্রকাশ্য সাপ দেখে বন্ধুরা ভয়ে চিৎকার করে ছুটে পালিয়ে যায়, বন্ধুদের এই চিৎকারেও নরেনের ধ্যান ভাঙ্গেনি এবং নরেনের বন্ধুরা কিছুটা দূর থেকে নরেনকে ডাকাডাকি করলেও ধ্যানমগ্ন নরেনের মধ্যে উঠে আসার কোনও প্রবণতা না দেখতে পেয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষন পর সাপটি‌ও নরেনকে কিছু না করে তাঁর পাশ কাটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ধ্যানভঙ্গ হলে তাঁর বন্ধুদের জিজ্ঞাসায় নরেন বলেন 'আমিতো তোদের ডাক শুনতে পাইনি।' ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তাঁর মনে হচ্ছিল যে সে যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছেন।

8/10

স্বামীজী এবং চম্পক গাছ

Swamiji and Champak tree

ছোটবেলায় নরেন তাঁর এক বন্ধুর বাড়ির পাশের চম্পক গাছে বন্ধুদের নিয়ে খেলার সময় জানতে পারে চম্পাকা ফুলগুলি শিবের পছন্দ এবং ঘটনাক্রমে স্বামীজিরও প্রিয় ছিল। এই গাছে নরেন মাথা নিচু করে দুলতো প্রায়। পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ ভয় পেয়েছিলেন যে ছেলেটি পড়ে গিয়ে নিজের ক্ষতি করার পাশাপাশি তাঁর গাছেরও ক্ষতি করতে পারে। তাই তিনি নরেনকে এই গাছে না উঠতে নিষেধ করে। কৌতূহলী নরেন কেন  জিজ্ঞাসা করলে বৃদ্ধ মানুষটি বলে এই গাছে ব্রহ্মদৈত্য বাস করে এবং রাতে সে সাদা পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়। কৌতুহলী নরেন রাতে ওই চম্পক গাছে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রহ্মদৈত্যকে দেখার জন্য রাত্রিবেলায় চুপচাপ করে সেই গাছে গিয়ে উঠে বসে থাকে কিন্তু ভোর হলেও তাঁর দেখা পায়না। অন্যদিকে সকাল হতেই নরেনের বাড়িতে হইচই শুরু হয়ে যায়। বাড়ির লোক ও পাড়ার লোক মিলে সবাই নরেনকে খুঁজতে শুরু করে এবং সেই গাছের কাছে আসে সকলে। সকলে জানতে পারে ব্রহ্মদৈত্য দেখার জন্য সে এই গাছে অপেক্ষা করছিল, অথচ কাউকেই সে দেখতে পায়নি। ফলতঃ খেলার আর বাঁধা র‌ইলনা। তাঁর কথা শুনে বিস্ময়ে অবাক হয়ে যান সকলে।

9/10

নরেনের সততা ও বুদ্ধির প্রসঙ্গ

Naren's honesty and intelligence

নরেন্দ্রনাথ খুব সুন্দর গল্প করতে পারতেন। তাঁর কথা এবং ব্যক্তিত্বের এমন আকর্ষণ ছিল যে, তিনি গল্প আরম্ভ করলে সবাই সব কাজ ভুলে তাঁর কথাই শুনতেন। স্কুলের ক্লাসের শিক্ষক আসতে দেরি হচ্ছে দেখে নরেন তাঁর বন্ধুদের নিয়ে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং গল্প এতো জমে যায় যে কিছুক্ষণ পরে ক্লাসে শিক্ষক এসে পড়ানো শুরু করলেও তাদের হুঁশ থাকেনা। কিছুক্ষণ পরে ফিসফিস শব্দ শুনে শিক্ষক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে যান এবং তিনি এক এক করে সবাইকে পরীক্ষা করেন যে, তিনি যা কিছু পড়াচ্ছিলেন ছাত্ররা তা শুনেছে কিনা। কেউ শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা। এরপর নরেনকে জিজ্ঞাসা করলে নরেন সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিয়ে দেয় কারণ নরেনের মন ছিল দু-মুখো। তাই শিক্ষক বাকিদের ক্লাসে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে কিন্তু সকলের সঙ্গে নরেন্দ্রও উঠে দাঁড়ালেন। এই দেখে শিক্ষক অবাক হয়ে গেলেন নরেনের সততা ও বুদ্ধি দেখে। 

10/10

স্বামীজীর মনযোগ

Swamiji's attention

স্বামী বিবেকানন্দ পড়াশোনায় খুবই ভাল ছিলেন। তাঁর নতুন নতুন বই পড়ার খুব শখ ছিল। শিকাগোতে থাকাকালীন স্বামী বিবেকানন্দ সেখানকার এক লাইব্রেরিতে যেতেন ও প্রতিদিন একটি করে নতুন বই নিয়ে আসতেন ও তারপরের দিনই ফিরিয়ে দিতেন। এই দেখে লাইব্রেরিয়ান একটু সংকোচ বোধ করলেন, এবং একদিন স্বামীজীকে বললেন 'আপনি যখন বইগুলো পড়তে চান না তাহলে কেন নিয়ে যান?' তখন স্বামীজী বললেন আমার এই বইগুলো পড়া হয়ে গিয়েছে, তখন লাইব্রেরিয়ান আরো বিরক্ত হলেন এবং বললেন এটা সম্ভব নয়। তখন স্বামীজী বলেন আপনি এই বইগুলোর মধ্যে যেকোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমাকে এবং লাইব্রেরিয়ান বিরক্ত হয়ে তাকে কিছু প্রশ্ন করলেন এবং স্বামীজী সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেন এই দেখে লাইব্রেরিয়ান অবাক হয়ে গেলেন।